শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় কেন চরমভাবে ব্যর্থ হয় চীন

শুক্রবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯
237 ভিউ
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় কেন চরমভাবে ব্যর্থ হয় চীন

কক্সবাংলা ডটকম(৬ সেপ্টেম্বর) :: কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকার শরনার্থী শিবিরে ১২ লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুর প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে অচলাবস্থা কিছুতেই কাটছে না। আসল কথা চীনের হস্তক্ষেপের কারণে বিষয়টি বেশ জটিল হয়ে পড়েছে।

বেইজিং এখন তার সবরকম সদিচ্ছা সত্ত্বেও মনকে প্রবোধ দেয়ার চেষ্টা করছে। এটা অংশত তার আগের ভুল ধারণার ভিত্তিতে জড়িত হওয়ার জন্য। তারা এখন অচলাবস্থা কাটানোর উপায় বের করতে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিবের পৃষ্ঠপোষকতায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছে।

তবে চীন যদি কোন বাস্তবসম্মত পন্থা অবলম্বন করতে পারে এবং প্রত্যক্ষভাবে জড়িত দেশ দুটি যদি সত্যিকারের আপোষ করতে রাজি হয় তবেই বৈঠকটি সফল হবে। শুধু মুখের কথায় চিড়া ভিজবে না। ভবিষ্যৎ প্রত্যাবাসন পরিকল্পনায় উদ্বাস্তুদের ন্যায্য উদ্বেগ ও স্বার্থগুলো স্থান পেলেই কেবল চীন প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নিতে পারবে।

এই কাহিনীর শেষ পর্বটি মঞ্চস্থ হয় গত মাসে যখন চীনের অব্যাহত জোরাজুরির মুখে শুরু করা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি চরমভাবে ব্যর্থ হয়। মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে টেকনাফ শালবন ক্যাম্পের পাশে সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে থাকা বাসগুলোতে একজন উদ্বাস্তুও উঠতে রাজি হয়নি।

এই ব্যর্থতার জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমার পরস্পরকে দায়ি করে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ঢাকার পক্ষ নিয়ে দায়ি করে মিয়ানমারকে।

যদিও উদ্বাস্তুদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশকে অনেক কিছু করতে হবে কিন্তু উদ্বাস্তুরা যেন ফিরে আসতে পারে সেজন্য মিয়ানমারকেরও অনেক বেশি প্রস্তুতি নিতে হবে। মূল সমস্যা হলো বাংলাদেশ ও মিয়ানমার – দু দেশের কর্তৃপক্ষকেই অবিশ্বাস করছে রোহিঙ্গারা। তবে বর্তমান সমস্যার মূলে রয়েছে চীনের শক্তিপ্রয়োগের কৌশল, সময় হওয়ার আগেই তারা জোর করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে চাচ্ছে।

২০১৭ সালে নতুন সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে বেইজিং পর্দার আড়ালে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে চললেও দেশটিকে তেমন কৃতিত্ব দেয়া হয়নি। অন্যদিকে এবার রাখাইন সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে চীনের অসহিষ্ণু প্রচেষ্টা উল্টা-ফলদায়ক হয়েছে।

আরেকটি ফলস-স্টার্টের কারলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি শুধু মুখ থুবরে পড়েনি, তা উদ্বাস্তুদের মধ্যেও ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। পাশাপাশি এতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে দূরত্বও বেড়েছে, যা ভবিষ্যতে প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য আরো সমস্যা যোগ করেছে।

সমাধান খুঁজে পেতে মধ্যস্থতা করা আর বন্ধুসুলভ প্রভাব খাটানোর মধ্যে বড় পার্থক্যটি বেইজিংয়ের বোঝা উচিত। কারণ সমাধানটি উদ্বাস্তুসহ সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। দু:খজনক হলো এই পরিস্থিতি এখন আর নেই বলে মনে হচ্ছে।

সম্ভবত মিয়ানমারের আগ্রহে গত কয়েক মাসে রাখাইন সমস্যা সমাধানে বেইজিং অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও জড়িত হয়ে পড়েছে। অবশ্য তার নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থও রয়েছে। তারা মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চল বিশেষ করে চীনের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ভিত্তি ও কিয়াকফিউ বন্দরের আশেপাশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে চায়। মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলেও তাদের স্বার্থ জোরদার হচ্ছে, সেখানেও শান্তি আনতে চায় বেইজিং।

এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য চলতি বছরের গোড়ার দিকে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে নিজেদের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। সেখানে রাখাইন সমস্যার সমধানকে তাদের মিয়ানমার নীতি ও কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে স্থাপন করা হয়। গত জুলাইয়ের শুরুর দিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেইজিং সফরে গিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে মিয়ানমারকে চাপ দেয়ার জন্য চীনা নেতৃবৃন্দের প্রতি অনুরোধ করেন। এতে বিষয়টি আরো জটিল হয়।

গত কয়েক মাসে সিনিয়র চীনা কূটনীতিকদের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বেশ কিছু বৈঠক হয় এবং চীনের বিশেষ দূত সান গাওশিয়াং বাংলাদেশ ও মিয়ানমার কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে অচলাবস্থা নিরসনের চেষ্টা চালান। তারা অন্তত দুবার বাংলাদেশের কক্সবাজারে গিয়ে রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদেরকে মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি করানোর চেষ্টা করেন।

এর পরিণতিতে চীনের মধ্যস্থতায় জুলাইয়ের শেষ দিকে বাংলাদেশে ও মিয়ানমার কর্মকর্তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মনে হয়েছিলো এতে দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা হ্রাস পেয়ে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার পথ প্রশস্ত হবে।

এরপর চীনা প্রতিনিধিসহ কূটনীতিক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেক বৈঠক হয়। সর্বশেষ বৈঠকে মিয়ানমারের কাছে ৩,৪০০ রোহিঙ্গার তালিকা হস্তান্তর করে ঢাকা। এক বছর আগে মিয়ানমারকে যে ২২,০০০ উদ্বাস্তুর তালিকা দেয়া হয় তাদের মধ্য থেকে এদেরকে বাছাই করে মিয়ানমার। এরপর আরো ২৫,০০০ উদ্বাস্তুর তালিকা দিয়েছে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ।

বৈঠকগুলোতে অংশ নেয়া কূটনীতিকদের মতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য কোন আনুষ্ঠানিক চুক্তি না হলেও প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নিতে মূল কাজটি করা হয়েছে। কিন্তু তার নিজের আগ্রহে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে ঢাকাকে চাপ দেয় যেন আগস্টে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হয় – অথচ এই তড়িঘড়ি করা নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ থেকে যায়।

বেইজিং আগস্টের মাঝামাঝি প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য ঢাকাকে চাপ দিলেও তখন যে মুসলমানদের ধর্মীয় ঈদ উৎসব চলবে সে দিকটি তাদের নজরে ছিলো না। ফলে প্রক্রিয়া শুরু আরো এক সপ্তাহ পিছিয়ে ২২ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়।

কিন্তু মিয়ানমার প্রতিপক্ষকে না জানিয়েই চীনের দূত তার শাটল কূটনীতি অব্যাহত রাখেন। তিনি ৬ আগস্ট নেপিদোতে স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি’র সঙ্গে সাক্ষাত করে জানান যে বাংলাদেশ ২২ আগস্ট থেকে উদ্বাস্তু ফেরত পাঠানো শুরু করবে।

পরদিন তিনি সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং লাইংয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। তার সঙ্গে রাখাইনের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করেন দূত এবং মিয়ানমারকে প্রত্যবাসন শুরু করতে উৎসাহিত করেন। তখনই বাংলাদেশের আসন্ন পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রথম জানতে পারে মিয়ানমার।

বাস্তবে প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য বাংলাদেশ বা মিয়ানমার কেউই প্রস্তুত ছিলো না। খুবই তড়িঘড়ি করে ব্যবস্থা করায় প্রস্তুতিও ছিলো খারাপ। যেসব পরিবার মিয়ানমার ফিরে যেতে আগ্রহী তাদেরকে বাছাই করার জন্য মাত্র দুই সপ্তাহ আগে ইউএনএইচসিআর-কে তালিকা দেয়া হয়। এটা ছিলো তাদের জন্য ‘মিশন ইমপসিবল’। তাই প্রচেষ্টাটি ব্যর্থ হওয়ায় আশ্চর্যের কিছু ছিলো না।

মিয়ানমারের সমর্থক আসিয়ান কর্মকর্তাদেরকেও প্রত্যাবাসন শুরুর নির্ধারিত সময়ের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে বিষয়টি জানানো হয়। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে সহায়তার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিলো আসিয়ানের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কোঅর্ডিনেটিং কমিটি ফর হিউমেনিটারিয়ান এসিসটেন্সকে (এএইচএ)। ফলে তাদেরও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয় এতে অংশ নেবে কিনা সে বিষয়ে। সময় স্বল্পতার কারণে তারা বাংলাদেশ অংশে কোন পর্যবেক্ষণ টিম গঠন করতে পারেনি।

আসিয়ান মিয়ানমার সরকারের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তারা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের মধ্যেই স্থানান্তরের জন্য জাপানের সহায়তা কামনা করে।

উদ্বাস্তুদের ফেরত নিতে জাতিসংঘ যেন মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করে সে দাবি জানায় বাংলাদেশ। মনে হচ্ছে বাংলাদেশ এই ইস্যুটির আন্তর্জাতিকিকরণ করতে চাচ্ছে, যার কঠোর বিরোধিতা করে আসছে মিয়ানমার।

তবে দুই দেশই বেইজিংয়ের মধ্যস্থতা মেনে নিতে ইচ্ছুক। সাহায্য, বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের জন্য দুটি দেশই ব্যাপকভাবে চীনের উপর নির্ভরশীল। উভয়েই কৌশলগতভাবে বেইজিংয়ের সঙ্গে যুক্ত। বেইজিংয়ের সঙ্গে শক্তিশালী সামরিক সংযোগ রয়েছে তাদের। মিয়ানমার বিগত ৩০ বছর ধরে চীনের উপর নির্ভরশীল হলেও বাংলাদেশও সম্প্রতি চীনের কাছ থেকে দুটি সাবমেরিন কিনেছে। যা ভারতকে চরম ক্ষুব্ধ করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দুই দেশই বেইজিংকে ‘সৎ’ মধ্যস্থতাকারী বলে মনে করে।

আশার কথা হলো গত মাসের বিপর্যয় থেকে সব পক্ষ শিক্ষা নিয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ অনেক সুপরিকল্পিত এবং প্রস্তুতি ব্যাপকভিত্তিক হতে হবে। পাশাপাশি যেকোন প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার জন্য উদ্বাস্তুদের ইচ্ছাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। আর এ জন্য জাতিসংঘকে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত হতে হবে। বিশেষ করে মিয়ানমার যখন জাতিসংঘের সঙ্গে তার এমওইউ নবায়ন করেছে।

বেইজিং শেষ পর্যন্ত বিষয়টি অনুধাবন করে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইড লাইনে পররাষ্টমন্ত্রীদের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক ডেকেছে।

২০১৯ সালের জুন ও অক্টোবরেও নিউইয়র্ক ও বেইজিংয়ে এ ধরনের দুটি বৈঠক হয়েছে। কিন্তু ঢাকা ও নেপিদোর মতপার্থক্য কমিয়ে আনা যায়নি।

সবাই যদি সাম্প্রতিক ব্যর্থতার প্রতি নজর দেয় তাহলে আসন্ন বৈঠক আরো বেশি সুনির্দিষ্ট ফল বয়ে আনতে পারে। তবে সে জন্য চীনকে আরো সহিষ্ণু ও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে।

237 ভিউ

Posted ৯:০০ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com