কক্সবাংলা ডটকম(১৪ ফেব্রুয়ারি) :: গত বছর উইক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে যে পতন শুরু হয়েছে, তা আর থামছেনা কোন ভাবেই। শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি এমন হচ্ছে যে রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধ যেন বাংলাদেশে শুরু হয়েছে। অথচ ইউরোপসহ অন্যান্য দেশের শেয়ারবাজারে চিত্র একটা সময় খারাপ হলেও ক্রমাগত ঠিক হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে সে ক্ষেত্রে ভিন্ন আচরণ করছে।
শেয়ারবাজারে পতন ঠেকাতে ফ্লোর প্রাইস বেধে দিলেও, সেই ফ্লোর প্রাইস এখন বিনিয়োগকারীদের গলার কাঁটা। যে সকল বিনিয়োগকারী মার্জিনের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেছে, সে সকল বিনিয়োগকারীদের মূল পুঁজিও হারাচ্ছে মার্জিনের কারণে। একদিকে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি রক্ষার জন্য ফ্লোর প্রাইস বেধে দিয়েছে। আবার অন্যদিকে ফ্লোর প্রাইসের কারণে শেয়ার বিক্রি না করতে পারায়, মার্জিনের চাপে নিজেদের পুঁজি হাড়াচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
এ যেন শেয়ারবাজারে বেহাল দশা। আর এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য তেমন কোন উদ্যোগও নিচ্ছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কিন্তু কয়েকদিন পর পর ফ্লোর প্রাই তুলে দেওয়ার গুজব বাজারে ছড়িয়ে দিয়ে শেয়ারবাজারে বড় পতনের চেষ্টা করে একটি চক্র। গত দুই দিন ধরে বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হবে। যার কারণে সপ্তাহের প্রথম দিন থেকেই বাজারে বড় পতন হচ্ছে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা।
মঙ্গলবারের শেয়ারবাজার পর্যালোচনা:
আজ ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৬ হাজার ২৫৬ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৬৮ পয়েন্টে এবং ডিএসই–৩০ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২ হাজার ২২৬পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৩০৯ টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৩ টির, দর কমেছে ১৪৩ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৪৩ টির। ডিএসইতে ৪৩৩ কোটি ১০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ২ কোটি ৩১ লাখ টাকা বেশি। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪৩৫ কোটি ৪১ লাখ টাকার।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৪৯৮পয়েন্টে। সিএসইতে ১২৭টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬টির দর বেড়েছে, কমেছে ৬৭টির এবং ৪৪টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১২ কোটি ৬১ লাখ ১৩ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০ শেয়ার
সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া ৩২০ টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৭ টির দর বেড়েছে, ১৪৭ টির দর কমেছে, ১৪৬ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিন শেয়ার দর সবচেয়ে বেশি বেড়েছে নাভানা সিএনজি লিমিটেডের।
আগের কার্যদিবস সোমবার নাভানা সিএনজি লিমিটেডের ক্লোজিং দর ছিল ২২ টাকা ৪০ পয়সা। আজ লেনদেন শেষে কোম্পানিটির ক্লোজিং দর দাঁড়ায় ২৪ টাকা ২০ পয়সা। আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর ১ টাকা ৮০ পয়সা বা ৮.০৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মাধ্যমে কোম্পানিটি ডিএসইর দর বৃদ্ধির তালিকার শীর্ষে উঠে আসে।
ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড ইন্সুরেন্সের ৭.৬০ শতাংশ, বিডিকম অনলাইনের ৪.৯০ শতাংশ, বেঙ্গল উইন্ডস্বরের ৩.৫৭ শতাংশ, দেশ গার্মেন্টসের ৩.৩৭ শতাংশ, মুন্নু এগ্রোর ২.৫৯ শতাংশ, ফাইন ফুডসের ২.০৭ শতাংশ, সিলভা ফার্মার ১.৮৩ শতাংশ, আলহাজ টেক্সটাইলের ১.৬৭ শতাংশ এবং এ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ১.৫০ শতাংশ দর বেড়েছে।
সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। কোম্পানিটির ৩১ কোটি ২৭ লাখ ৫৯ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
লেনদেনের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৯ কোটি ৪৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকার।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ২৭ কোটি ৫৭ লাখ ৩৪ হাজার টাকার শেয়ার হাতবদলের মাধ্যমে লেনদেনের শীর্ষ তালিকার তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে।
লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে জেমিনি সি ফুড, এ্যাপেক্স ফুটওয়্যার, শাইনপুকুর সিরামিকস, সি পার্ল হোটেল, ওরিয়ন ফার্মা, বিডি কম এবং ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড।
ব্লকে পাঁচ কোম্পানির বড় লেনদেন
নিজস্ব প্রতিবেদক: সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ব্লক মার্কেটে ৭২টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব কোম্পানির মোট ৪০ কোটি ৩৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হতে দেখা গেছে পাঁচ কোম্পানির শেয়ার।
আজ ব্লক মার্কেটে বড় লেনদেন করা পাঁচ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে ঢাকা ইন্সুরেন্স, সি পার্ল হোটেল, স্কয়ার ফার্মা, এডিএন টেলিকম এবং ন্যাশনাল ব্যাংক। আজ এই পাঁচ কোম্পানির মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৬ কোটি ৫ লাখ টাকারও বেশি। যা ব্লক মার্কেটে মোট লেনদেনের ৪০ শতাংশ।
জানা গেছে, এই পাঁচ কোম্পানির মধ্যে আজ ঢাকা ইন্সুরেন্সের ৪ কোটি ৬০ লাখ ৫ হাজার, সি পার্ল হোটেলের ৩ কোটি ২৮ লাখ ৪০ হাজার, স্কয়ার ফার্মার ২ কোটি ৭৮ লাখ ৫৭ হাজার, এডিএন টেলিকমের ২ কোটি ৭৮ লাখ ২ হাজার এবং ন্যাশনাল ব্যাংকের ২ কোটি ৬০ লাখ ৮৭ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
এছাড়া, ব্লক মার্কেটের গুরুত্বপূর্ণ লেনদেনে অংশ নেওয়া অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের ২ কোটি ৫৫ লাখ ৫৩ হাজার, বেঙ্গল উইন্ডস্বরের ১ কোটি ৮০ লাখ ১৪ হাজার, রূপালী লাইফ ইন্সুরেন্সের ১ কোটি ৭৬ লাখ, গ্রামীনফোনের ১ কোটি ৬১ লাখ ৭৮ হাজা এবং বেক্সিমকো ফার্মার ১ কোটি ৪৬ লাখ ৭০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক: সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া ৩২০ টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৭টির দর বেড়েছে, ১৪৭টির দর কমেছে, ১৪৬টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিন শেয়ার দর সবচেয়ে বেশি কমেছে বিডি থাই ফুডের।
আগের কার্যদিবস সোমবার বিডি থাই ফুডের ক্লোজিং দর ছিল ৩৮ টাকা ৫০ পয়সা। আজ লেনদেন শেষে কোম্পানিটির ক্লোজিং দর দাঁড়ায় ৩৬ টাকা ৯০ পয়সা। আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর ১ টাকা ৬০ পয়সা বা ৪.১৫ শতাংশ কমেছে। এর মাধ্যমে কোম্পানিটি ডিএসইর দর পতনের তালিকার শীর্ষে উঠে আসে।
ডিএসইতে দর পতনের শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ৪.০৭ শতাংশ, সিটি জেনারেল ইন্সুরেন্সের ৪.০৫ শতাংশ, আমরা নেটওয়ার্কসের ৩.৭৪ শতাংশ, শাইনপুকুর সিরামিকসের ৩.৫৭ শতাংশ, হাওয়েল টেক্সটাইলসের ৩.৪৯ শতাংশ, মনোস্পুল পেপারের ৩.৩১ শতাংশ, বসুন্ধরা পেপার মিলসের ৩.২১ শতাংশ, ইউনিক হোটেলের ৩.২০ শতাংশ এবং জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেডের ৩.১৯ শতাংশ দর কমেছে।
