কক্সবাংলা ডটকম(৩০ নভেম্বর) :: দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনা নৌবাহিনীর ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির সমন্বিত জবাব দিতে ভারত ও সিঙ্গাপুর তাদের সামরিক সম্পর্ক আরো জোরদার করেছে। এর ফলে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি নৌঘাঁটিতে প্রয়োজন হলে ভারত তার জাহাজগুলো ভেড়াতে পারবে।
এর অর্থ হলো, বিরোধপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগর কিংবা আন্দামান সাগরের পূর্ব দিক দিয়ে চলাচলকারী ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজগুলো জ্বালানি সংগ্রহ, অস্ত্র সংগ্রহ ইত্যাদি কাজের জন্য সিঙ্গাপুরের সর্বশেষ নৌঘাঁটিতে যাত্রা বিরতি করতে পারবে।
নতুন সমঝোতার ফলে ভারতীয় নৌবাহিনী প্রয়োজন হলে সরাসরি সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে।
আগে এ ধরনের কাজের জন্য ভারতীয় নৌবাহিনীকে প্রথমে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং তারপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে সিঙ্গাপুর সরকারের কাছে অনুরোধ পাঠাতে হতো। ফলে সিঙ্গাপুরের কাছ থেকে রাজনৈতিক ছাড়পত্র নিতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যেত।
বুধবার (২৯ নভেম্বর) ভারতে সিঙ্গাপুরের প্রতিরক্ষমন্ত্রী ড. নগ ইং হেন বলেন, আমি স্পষ্টভাবে বলছি, আমরা চাই ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজগুলো আরো বেশি বেশি চাঙ্গি নৌঘাঁটি সফর করুক।
তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরের জাহাজগুলো আন্দমান সাগর এবং ভারতের অন্যান্য পানিসীমায় অবস্থানকালেও ভারত লজিস্টিক সমর্থন দেবে। দুই দেশের বিমান বাহিনী পশ্চিমবঙ্গের কালাইকুন্ডায় যৌথ মহড়া চালাচ্ছে।
গত পাঁচ বছর ধরে ভারত মহাসাগরে চীনা নৌবাহিনী নিয়মিতভাবে মোতায়েন রয়েছে। বিশেষ করে পরমাণু-চালিত অ্যাটাক সাবমেরিনগুলো ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারত মহাসাগরে চীনা রণতরী এবং সাবমেরিনের গতিপথ জানার জন্য ভারতীয় নৌবাহিনী ব্যাপকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল।
ভারত মহাসাগরে প্রবেশের জন্য চীনা সাবমেরিনগুলোকে সিঙ্গাপুরের কাছাকাছি মালাক্কা প্রণালী কিংবা ইন্দোনেশিয়ার লমবক, সান্দা বা ওমবাই প্রণালী অতিক্রম করতে হয়। চীনা জাহাজগুলোর অবস্থান জানার জন্য গত অক্টোবরে ভারতীয় নৌবাহিনী মহাসাগরের গুরুত্বপূর্ণ চোক-পয়েন্টগুলোতে সার্বক্ষণিক রণতরী মোতায়নের সিদ্ধান্ত নেয়।
এখন সিঙ্গাপুরের চাঙ্গির ঘাঁটিতে প্রবেশের সুযোগ পাওয়ায় ভারতীয় নৌবাহিনী সারা বছর বেশ সহজে ওই অঞ্চলে তাদের রণতরী মোতায়েন রাখতে পারবে।
চীনের কাছ থেকে বড় ধরনের সামরিক চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপট ভারত ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ছে। চীনের তুলনায় ভারত ও সিঙ্গাপুরের রণতরী ও সাবমেরিনের সংখ্যা বেশ কম।
অবশ্য সিঙ্গাপুর নৌবাহিনী উন্নতমানের ইউরোপিয়ান সাবমেরিন ও রণতরী ব্যবহার করে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিপিং লাইন মালাক্কা প্রণালী দিয়ে নৌ চলাচল যাতে নির্বিঘ্নে থাকে, সেজন্য তারা এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
গত ১২ বছরে চীন তার বহরে অন্তত একটি বিমানবাহী রণতরী, ১২টি ফ্রন্টলাইন ডেস্ট্রয়ার, ২৫টি ফ্রিগেট এবং ২৪টি ছোট রণতরী যোগ করেছে। গত ১০ বছরে চীন অন্তত ১০টি পরমাণু অ্যাটাক্ট সাবমেরিন বা ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সাবমেরিন যোগ করেছে।
গত ২০ বছরে দেশটি অত্যাধুনিক প্রচলিত শক্তিচালিত সাবমেরিন যুক্ত করেছে। এগুলোর একটি অংশকে ভারত মহাসাগরে মোতায়েন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, গত ১২ বছর ধরে ভারতীয় নৌবাহিনী মাত্র একটি নতুন রণতরী, তিনটি ডেস্ট্রোয়ার, ১০টি ফ্রিগেট এবং তিনটি ছোট রণতরী সংগ্রহ করেছে।
ভারতের দুটি পরমাণু-চালিত সাবমেরিন যুক্ত করেছে। এছাড়া প্রচলিত শক্তিচালিত আরা দুটি সাবমেরিন চালু করার পর্যায়ে রয়েছে। অবশ্য একই সময় ভারতের ১৩টি চালু থাকা সাবমেরিনের সব কয়েকটিকে সংস্কার করে আরো উন্নত করা হয়েছে।
ভারত ও সিঙ্গাপুর বিমানবাহিনী এক দশকের বেশি সময় ধরে পশ্চিমবঙ্গের কালাইকুন্ড বিমান ঘাঁটিতে যৌথ মহড়া চালিয়ে আসছে। সিঙ্গাপুরের জন্য এই মহড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নগর-রাষ্ট্রটির আকাশসীমার আয়তন খুবই কম।
আবার সিঙ্গাপুরের এফ-১৬এস বিমান নিজের আকাশে দেখতে পাওয়া ভারতীয় বিমানবাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পাকিস্তান বিমানবাহিনীও ঠিক একই ধরনের বিমান ব্যবহার করে। ভারতের সাথে যেকোনো সঙ্ঘাতে পাকিস্তান এই বিমানই ব্যবহার করতে পারে।
Posted ২:৩৫ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta