কক্সবাংলা ডটকম(১৪ জানুয়ারী) :: ডিসেম্বরে চীনের রফতানিতে অভাবনীয় পতন হয়েছে। এক বছর আগের তুলনায় এ সময় রফতানি ৪ দশমিক ৪ শতাংশ কমে গেছে, যা দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সংকোচন। শুধু রফতানি নয়, সদ্য বিদায়ী বছরের সর্বশেষ মাসটিতে চীনে পণ্য আমদানিও কমেছে। এ অবস্থায় আশঙ্কা করা হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিটি চলতি বছর আরো দুর্বল হয়ে পড়বে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পণ্য চাহিদায় বিপর্যয় ঘটবে। বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে নতুন করে সৃষ্ট এ উদ্বেগের প্রভাবে গতকাল এশিয়ার শেয়ারবাজারগুলোয় দরপতন হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্টক ফিউচারসগুলোয়ও নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ করা যায়। খবর রয়টার্স ও এএফপি।
চীনের দেয়া তথ্যে দেখা গেছে, ডিসেম্বরে যেখানে রফতানি ৩ শতাংশ বৃদ্ধির প্রত্যাশা ছিল, সেখানে তা ৪ দশমিক ৪ শতাংশ কমে গেছে। এছাড়া আমদানিতে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস থাকলেও তা ৭ দশমিক ৬ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে।
আমদানি-রফতানি হ্রাসের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যে চীনের রেকর্ড উদ্বৃত্তের খবর নীতি নির্ধারকদের আরো উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্তকে রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল হিসেবে ধরে নেয়া হয়। এ উদ্বৃত্ত কমিয়ে আনতে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে বেইজিংকে বারবার আহ্বান জানালেও তা কমছে না। বরং নতুন হিসাবে দেখা গেছে, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যে চীনের উদ্বৃত্ত ১৭ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ৩২ হাজার ৩৩২ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এ ইস্যুটিকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরো উত্তেজিত হয়ে পড়বেন।
চীনের এ বাণিজ্য-সংক্রান্ত খবর প্রকাশের পর যুক্তরাষ্ট্রের স্টক ফিউচারসগুলোর মধ্যে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ইএসসিওয়ান দশমিক ৮ শতাংশ হারায়, একে ঝুঁকিবিমুখতার প্রবণতা তীব্র হয়ে ওঠারই প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে চীনের আমদানি-রফতানি হ্রাসের খবরে এশিয়ার শেয়ারবাজারে দরপতন লক্ষ করা যায়।
এর মধ্যে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের সমন্বিত সূচক এমএসসিআই শুক্রবারের দেড় মাসের সর্বোচ্চ অবস্থা থেকে ১ শতাংশ হারায়। সবচেয়ে বেশি দরপতন দেখা গেছে চীন ও হংকংয়ের শেয়ারবাজারে। এর মধ্যে চীনের ব্লু-চিপ কোম্পানিগুলোর সূচক সিএসআই৩০০ দশমিক ৭ শতাংশ এবং হংকংয়ের হ্যাংসেং ১ দশমিক ৫ শতাংশ হারিয়েছে। দিনের শুরুর লেনদেনে অস্ট্রেলিয়ার শেয়ার সূচকগুলো ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও দিন শেষে তা পরিবর্তিত হতে দেখা যায়।
অনেক বিশ্লেষকই ধারণা করছেন, সোমবারের বাণিজ্য-সংক্রান্ত উপাত্তের কারণে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য বিবাদ হ্রাসে চীনা কর্তৃপক্ষ আরো উদ্যোগী হবে। ন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়া ব্যাংকের ফরেক্স স্ট্র্যাটেজিস্ট রে অ্যাট্রিল বলেন, ‘আপনারা হয়তো এটা নিয়ে বিতর্কও করতে পারেন— বাণিজ্যের এ সংখ্যাগুলো বাণিজ্য বিবাদ দ্রুত নিষ্পন্নে উদ্দীপক হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া তাদের (চীনের নীতিনির্ধারক) অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে প্রণোদনা জোগাতে আগ্রহী করে তুলবে।’
আরো অনেক অর্থনীতিবিদও বলছেন, ডিসেম্বরে শিল্প-কারখানায় কার্যক্রম সংকোচনের পর আমদানি-রফতানি হ্রাসে বেইজিং এখন তাদের নীতিমালা শিথিলকরণ এবং প্রণোদনা পদক্ষেপ কার্যক্রমকে বেগবান করবে।
এদিকে বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনে আলোচনা অব্যাহত রাখলেও এখন পর্যন্ত কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। তবে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছবে— এ ধরনের সম্ভাবনা বাড়লেও সিটির বিশ্লেষকরা বলছেন, শুল্ক ও বাণিজ্য নিয়ে বিবাদের প্রভাব এরই মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে ছড়িয়ে পড়েছে। তারা বলছেন, আঞ্চলিক বাণিজ্য প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য শ্লথগতি দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে গত বছরের পুরো সময় বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছর বৈশ্বিক পর্যায়ে চীনের রফতানি বেড়েছে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। এটি সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী পারফরম্যান্স। আর আমদানি বেড়েছে ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে ডিসেম্বরের হতাশাজনক উপাত্তের সঙ্গে কয়েক মাস ধরে শিল্প ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ার ফলে ধারণা করা হচ্ছে, রফতানিতে আরেক দফা পতন খুব বেশি দূরে নয়।
এএনজেডের প্রধান অর্থনীতিবিদ রেমন্ড ইয়েং বলেন, ‘আমাদের মতে বাণিজ্যে একটি মন্দা আসন্ন। বৈশ্বিক পর্যায়ে ইলেকট্রনিকস যন্ত্রাংশ এখনো চীনের রফতানির প্রধান পরিচালক। এ খাতটিতেই সম্ভাব্য নিম্নগতি চীনকে ঝুঁকিতে ফেলবে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি হলেও এ ঝুঁকি এড়াতে পারবে না দেশটি।’
আইএনজির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিদেশী কোম্পানিগুলো চীনে নির্মিত ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশের ব্যবহার এড়িয়ে যাচ্ছে, চীনের ইলেকট্রনিক যন্ত্র রফতানি হ্রাসের সঙ্গে এর যোগসূত্র থাকতে পারে। চলতি বছর ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ আমদানি ও রফতানি— দুই-ই কমে যেতে পারে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিশ্লেষকদের অনেকেই ধারণা করছেন, এ পরিস্থিতিতে চীনের সুদের হার কমার সম্ভাবনাই বেশি। অবশ্য সিংহভাগ মনে করছেন, আগের মতো বড় আকারের প্রণোদনা পদক্ষেপ নেবে না চীন। কারণ এতে পাহাড়সম ঋণ আরো বৃদ্ধি এবং ইউয়ান দুর্বল হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
Posted ২:৫৫ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৫ জানুয়ারি ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta