কক্সবাংলা ডটকম(৩১ জুলাই) :: বিনিয়োগ খরায় ভুগছে দেশের অধিকাংশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করছে, সে অনুপাতে ঋণ দিতে পারছে না। সদ্য সমাপ্ত (২০১৬-১৭) অর্থবছরের মে শেষে গড়ে প্রায় ৭৪ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে দেশের ব্যাংকগুলো। যদিও ব্যাংকগুলোর মধ্যে সাধারণ ধারার ব্যাংক ৮৫ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংক বা উইংগুলো আমানতের ৯০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রায় ৪০টি ব্যাংকের বিনিয়োগের হার আমানতের ৮৫ শতাংশের নিচে। যার মধ্যে ১০টি ব্যাংকের বিনিয়োগ আমানতের ৬০ শতাংশের নিচে।
আমানতের ৬০ শতাংশের নিচে ঋণ প্রদান করা ব্যাংকগুলো হলো-রাষ্ট্রায়াত্ত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড (ইসলামী উইংসহ), রূপালী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক (ইসলামী উইংসহ)। বেসরকারি খাতের স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড (ইসলামী উইং), সীমান্ত ব্যাংক লিমিটেড, সাউথইস্ট ব্যাংক (ইসলামী উইং)। বিদেশি কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন পিএলসি, সিটি ব্যাংক এনএ, এইচএসবিসি এবং উরি ব্যাংক।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আমানতের বিপরীতে সবচেয়ে কম ঋণ দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। গত অর্থবছরের মে শেষে ইসলামী উইং বাদে ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ ৯৬ হাজার ৬১৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা। যার মধ্যে ব্যাংকটি ঋণ প্রদান করেছে ৩৮ হাজার ৭০৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। আমানতের মাত্র ৩৮ দশমিক ৬০ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে এ ব্যাংক।
এছাড়া সোনালী ব্যাংকের ইসলামী উইংয়ের মোট আমানত প্রায় ৩৮ কোটি টাকা। যা থেকে ঋণ দিয়েছে মাত্র ১০ কোটি ৪ লাখ টাকা। এখানে আমানতের ২৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে ব্যাংকটি। এর পরে সবচেয়ে কম বিনিয়োগ করেছে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেডের ইসলামী উইং। ব্যাংকটি আমানতের প্রায় ৪৩ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে। কম বিনিয়োগের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সিটি ব্যাংক এনএ। ব্যাংকটি আমানতের বিপরীতে ঋণ প্রদান করেছে ৪৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ। চতুর্থ অবস্থানে সীমান্ত ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকটি আমানতের প্রায় ৪৭ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে।
অন্যদিকে, বিনিয়োগ স্থবিরতার মধ্যেও বিনিয়োগ সীমা অতিক্রম করেছে ১১টি ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হল- রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক (ইসলামী উইং), ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, ঢাকা ব্যাংক (ইসলামী উইং), প্রাইম ব্যাংক (ইসলামী উইং), প্রিমিয়ার ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, এবি ব্যাংক ও আইএফআইসি ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত মে মাসে সরকারের বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক আমানতের ১০৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকটি আমানতের সর্বোচ্চ ৮২ থেকে ৮৫ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারবে। সরকারি বিশেষায়িত ব্যাংকটি সাড়ে ২০ শতাংশ বেশি বিনিয়োগ করেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক আমানতের প্রায় ৯২ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে, যা সীমার চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি। অগ্রণী ব্যাংকের ইসলামী উইং বিনিয়োগ করেছে ৯৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকটি নির্ধারিত সীমার চেয়ে ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ আমানত বেশি বিনিয়োগ করেছে।
ব্যাংকিং খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্ধারিত সীমার বাইরে গিয়ে বিনিয়োগ করা ব্যাংকগুলোর জন্য কখনোই কাম্য নয়। এ বিষয়ে বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষ এক কর্মকর্তা অর্থসূচককে বলেন, জেনারেল ব্যাংকগুলো আমানতের ৮৫ ভাগ বিনিয়োগ করতে পারে। আর ইসলামী ব্যাংক বা উইংগুলো আমানতের ৯০ ভাগ বিনিয়োগ করতে পারে। এর কম অথবা বেশি হলে সেটা ব্যাংকের জন্য ভালো নয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করতে হবে।
Posted ১:১৪ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ৩১ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta