কক্সবাংলা ডটকম(২৫ মার্চ) :: মূলধন পাচারের ওপর নজরদারি বৃদ্ধি ও পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনতে সমন্বিতভাবে কাজ করার জন্য সরকার এ সংক্রান্ত সব তথ্য একসাথে জড়ো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ‘সরকার অর্থপাচার নিয়ে খুবই কঠোর। তারা অর্থপাচারের বিরুদ্ধে অভিযান সহজ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অন্যান্য সংস্থা থেকে তথ্য নিয়ে একটি নথিতে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
ওই সূত্র জানায়, ওই নথি প্রস্তুতের পর সরকার পাচার হওয়া অর্থ শনাক্তকরণে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
সম্প্রতি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত অর্থপাচার বিরোধী টাস্কফোর্সের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়- টাস্কফোর্সের কার্যক্রম পর্যালোচনা করার জন্য প্রতি তিন মাস পরপর সভা অনুষ্ঠিত হবে।
অর্থপাচার বিষয়ে কাউকে ছাড় না দেয়া এবং সঠিক তথ্য সংগ্রহসহ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্তও নেয়া হয় সভায়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং এক্সচেঞ্জ কমিশনের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
বিভিন্ন কারণে দেশে অর্থপাচার হওয়ার অবৈধ প্রবণতা রোধ করার প্রক্রিয়া নিয়ে সভায় আলোচনা হয়। সেই সাথে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে কীভাবে এক ছাতার নিচে কাজ করা যায় তা নিয়ে কথা হয়।
‘এ জন্য সভায় সিদ্ধান্ত হয়- বিভিন্ন সংস্থা থেকে তথ্য নিয়ে একটি একক নথি প্রস্তুত করা হবে এবং সে অনুযায়ী কাজ চলবে’, যোগ করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র।
সভায় উপস্থিত থাকা একজন এনবিআর কর্মকর্তা বলেন, অর্থপাচারে জড়িত ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদা যা-ই হোক না কেন তাকে কোনো ছাড় না দেয়ার ব্যাপারে সভায় দৃঢ় অবস্থান নেয়া হয়।
তিনি আরো জানান, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কার্যক্রম আরো সমন্বিতভাবে পরিচালনা করা হবে।
সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমের (আইসিআইজে) বহুল আলোচিত পানামা পেপারস প্রকাশের পরই অর্থপাচারের বিষয়টিতে অধিক নজর আসে।
দ্য গ্লোবাল ফাইন্যান্স ইন্টিগ্রিটির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ৯১১ কোটি মার্কিন ডলারের মতো অর্থপাচার হয়েছে। ২০০৫ থেকে ২০১৪ সালে এর মোট পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ১৬০ কোটি মার্কিন ডলার।
জিএফআই জানায়, জালিয়াতির মাধ্যমে অধিক মূল্য ও কম মূল্য নির্ধারণ, হুন্ডি ও মূল্য স্থানান্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচার হয়।
জিএফআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, ওয়াশিংটন ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান ১৯৯০ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ৩ হাজার ৪১২ কোটি মার্কিন ডলার সরিয়ে নেয়। যার অর্থ হচ্ছে, ওই সময়ে বাংলাদেশ প্রতিবছর ১৮০ কোটি মার্কিন ডলার মূলধন হারায়। যার ফলে কর কর্তৃপক্ষ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্কের মতে, অবৈধ মূলধন পাচারের কারণে বাংলাদেশ ১৯৭৬ থেকে ২০১০ পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা হারিয়েছে।
Posted ১:৩২ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৫ মার্চ ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta