রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

আদর্শ বিচ্যুত হয়ে সংকটের মুখে ইসলামী ধারার ব্যাংকিং

রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
135 ভিউ
আদর্শ বিচ্যুত হয়ে সংকটের মুখে ইসলামী ধারার ব্যাংকিং

কক্সবাংলা ডটকম :: মালয়েশিয়ার মতো বাংলাদেশেও ইসলামী ধারার ব্যাংকিং দ্রুত জনপ্রিয় হয়েছে।  কারণ গত চার দশকে ইসলামী ধারার ব্যাংকিংয়ে বড় সাফল্য পেয়েছে মালয়েশিয়া। দেশটির আধুনিক অর্থনীতির ভিত তৈরিতে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার ভূমিকা ছিল যুগান্তকারী।

কিন্তু অর্থনীতিতে কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা রাখার আগেই আস্থার সংকটের মুখে পড়েছে ইসলামী ধারার ব্যাংকিং। আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে এ ধারার ব্যাংকিং এখন দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় পতিত হয়েছে।

বাংলাদেশে শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের সূচনা হয়েছিল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের হাত ধরে। ১৯৮৩ সালে কার্যক্রম শুরু করা প্রতিষ্ঠানটির সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশে গড়ে উঠেছে আরো নয়টি পূর্ণাঙ্গ ধারার ইসলামী ব্যাংক।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ছাড়াও এ ধারার অন্য ব্যাংকগুলো হলো সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক।

এর মধ্যে পাঁচটিই প্রচলিত ধারা থেকে ইসলামী ধারায় রূপান্তর হয়েছে। প্রচলিত ধারার ১১টি ব্যাংক চালু করেছে ইসলামী ব্যাংকিং শাখা। আরো ১৪টি প্রচলিত ধারার ব্যাংক উইন্ডো চালুর মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত তিন দশকে প্রচলিত ধারার ব্যাংকিংয়ের চেয়ে ইসলামী ধারার ব্যাংকিংয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু প্রথমবারের মতো গত এক বছরে এ ধারার ব্যাংকগুলো পিছিয়ে পড়েছে। এ সময়ে প্রচলিত ধারার ব্যাংকিংয়ের চেয়ে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে অনেক কম।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২ সালের জুন থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এক বছরে ইসলামী ধারার ব্যাংকিংয়ে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ১৩ শতাংশ। অথচ এ সময়ে দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৪০ শতাংশের বেশি। চলতি বছরের জুন শেষে ইসলামী ধারার ১০টি ব্যাংকে জমাকৃত আমানতের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা, যা দেশের ব্যাংক খাতের মোট আমানতের প্রায় ২৫ শতাংশ।

মূলত আস্থার ঘাটতি তৈরি হওয়ার কারণেই ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর আমানতের প্রবৃদ্ধি থমকে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, আমানতের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হলে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের অন্য সব সংকট কেটে যেত।

এক বছর আগে ২০২২ সালের জুন শেষে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর হাতে উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল ২১ হাজার ৯ কোটি টাকা। চলতি বছরের একই সময়ে এ ব্যাংকগুলোর উদ্বৃত্ত তারল্য মাত্র ২ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। ইসলামী ধারার বেশির ভাগ ব্যাংকই এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ অন্য ব্যাংকগুলো থেকে ধার করে চলছে।

চলতি বছরে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক বাণিজ্যও কমেছে। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রফতানি হয়েছে ৩৩ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ কম।

চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৪১ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে এ ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৬৩ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়েছিল। সে হিসেবে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে আমদানি কমেছে ৩৪ শতাংশ।

তবে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর রেমিট্যান্স আহরণ বেড়েছে। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৪২ শতাংশ। একই সময়ে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। দেশের ব্যাংকগুলোর মোট বিনিয়োগের ২৯ শতাংশই ইসলামী ধারার ব্যাংকিং থেকে গেছে।

ব্যাংকগুলো ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেশকিছু নীতি ছাড় পায়। যেমন, গ্রাহকদের জমাকৃত অর্থ সুরক্ষার জন্য প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোকে আমানতের ১৩ শতাংশ অর্থ স্ট্যাটিউটরি লিকুইডিটি রেশিও বা বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) হিসাবে রাখতে হয়।

যদিও ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে এসএলআর রাখতে হয় মাত্র ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। আবার প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের আমানতের সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দিতে পারে। কিন্তু ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে আমানতের ৯২ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ বা বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে।

অর্থাৎ গ্রাহকদের আমানতের অর্থ সুরক্ষার ক্ষেত্রে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর রক্ষাকবচ অনেক দুর্বল। নীতি পরিপালনের ক্ষেত্রে বাড়তি এ ছাড় বিনিয়োগকারীদের ইসলামী ধারার ব্যাংকিংয়ে উৎসাহ জুগিয়েছে। আবার নীতি ছাড়ের সুযোগে ব্যাংকগুলো অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়ানোর অভিযোগও উঠেছে।

দেশের ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো এখন পরীক্ষার মুখে পড়েছে বলে মনে করেন ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী। তিনি বলেন, ‘গত চার দশকে বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী ইসলামী ধারার ব্যাংকিং দ্রুতগতিতে সম্প্রসারিত হয়েছে। দেশে এ ধারার ব্যাংকগুলোকে তেমন কোনো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়নি।

এখন যে পরিস্থিতি যাচ্ছে, সেটিকে পরীক্ষা বলা যেতে পারে। দেশে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বেশকিছু নীতি ছাড় পায়। এ ছাড়ের সুযোগকে অনেকে অপব্যবহার করেছে। সব ব্যাংককেই রীতিনীতি ও ব্যাংকিং নিয়মাচার মেনে চলতে হবে। অন্যথায় যেকোনো ব্যাংকই বিপর্যয়ে পড়তে পারে।’

গোটা বিশ্বেই ইসলামী ব্যাংকিং দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল-পরবর্তী সময়ে শরিয়াহভিত্তিক এ আর্থিক সেবার বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ শতাংশ হারে। বিভিন্ন সমীক্ষায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী ইসলামিক ফাইন্যান্সের আকার ২ দশমিক ৮৮ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে এ ধারার ব্যাংকিংয়ের সম্পদ ৪ দশমিক ৯৪ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে।

মুসলিমপ্রধান দেশগুলো ছাড়াও যুক্তরাজ্য, চীন, হংকংয়ের মতো অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর বাজারে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে ইসলামিক বন্ড ‘সুকুক’। থাইল্যান্ড, শ্রীলংকার মতো দেশগুলোয়ও ইসলামী ব্যাংকিংয়ের জন্য পৃথক আইন চালু হয়েছে। যদিও বাংলাদেশে ইসলামী ধারার ব্যাংকিং বেড়ে উঠেছে কোনো সুনির্দিষ্ট আইন ছাড়াই।

চালু হওয়ার চার দশক পরও ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা একটি গাইডলাইন বা নির্দেশিকার ওপর ভর করে এ ধারার ব্যাংকিং পরিচালিত হচ্ছে।

‌বাংলাদেশে ইসলামী ধারার ব্যাংকিং ঘিরে যে বিতর্ক ও সংকট চলছে, সেটিকে দুঃখজনক বলে মনে করছেন ইসলামী ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞ ড. এম কবির হাসান।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নিউ অরলিন্সের ফাইন্যান্স বিভাগের এ অধ্যাপক বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে দ্রুত বিকাশমান আর্থিক ব্যবস্থার নাম হলো ইসলামী ব্যাংকিং। আগামীতে এ ধারার ব্যাংকিং আরো বেশি জনপ্রিয় ও শক্তিশালী হবে। বাংলাদেশে ইসলামী ধারার ব্যাংকিং যে সংকটের মুখে পড়েছে, সেটি দীর্ঘ ষড়যন্ত্রের ফল।

একটি সংঘবদ্ধ শক্তি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের পথ রুদ্ধ করে দিতে চাইছে। তবে আমি মনে করি, বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণ ঘটলে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো আরো শক্তিশালী হবে। দেশের আরো অনেক সাধারণ ধারার ব্যাংক ইসলামী ধারায় রূপান্তর ঘটাতে বাধ্য হবে।’

দেশের ইসলামী ব্যাংকিং পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমান পরিস্থিতির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর আলম বলেন, ‘নেতিবাচক প্রচারের কারণে দেশে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর ওপর কিছুটা কালো মেঘ জমা হয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে সেটি কেটে যাচ্ছে। প্রচলিত ধারার ব্যাংকের চেয়ে ইসলামী ধারার ব্যাংকিং অনেক বেশি নিরাপদ ও জনকল্যাণমুখী। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর ৯০ শতাংশ ধর্মপ্রাণ মুসলিম। আমি মনে করি, ইসলামী ধারার ব্যাংকিং এ দেশে আরো বেশি বিস্তৃত ও জনপ্রিয় হবে।’

এতদিন দেশের শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো আমানত সংকটে পড়লে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের দ্বারস্থ হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি ব্যাংকটির করা বিনিয়োগের একটি অংশ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। একই ধারার আরো কয়েকটি ব্যাংকের বিনিয়োগ প্রশ্নের মুখে পড়ায় গোটা খাতটি ঘিরেই আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এখন ধারদাতা থেকে গ্রহীতা ব্যাংকে রূপান্তর হয়েছে ইসলামী ব্যাংক। ২০২২ সালের জুন শেষে ইসলামী ব্যাংকের মোট আমানত ছিল ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকটির আমানত স্থিতি ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংকটির আমানত বেড়েছে মাত্র ৭৪৬ কোটি টাকা।

ইসলামী ব্যাংক কবে নাগাদ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে—এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংক এরই মধ্যে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। কিছু ছোটখাটো ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছিল। এরই মধ্যে আমরা সেগুলো সংশোধন করে নিয়েছি। বাংলাদেশে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর সাফল্য ও সংকট আমাদের ব্যাংকের সঙ্গে জুড়ে গেছে। আমরা পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়ালে এ খাতের অন্য ব্যাংকগুলোর সমস্যা কেটে যাবে।’

135 ভিউ

Posted ৪:২৮ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com