স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, সিরিয়ার বিদ্রোহী এসব গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্র কেনার জন্য আলাদা বরাদ্দও দিয়েছে ইসরায়েল।ইসরায়েলি সহায়তা পেতে থাকা গোষ্ঠীর সদস্যরা প্রত্যাশা করেছিল, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদের বাহিনী যদি দক্ষিণ সিরিয়ায় হামলা চালায় তাহলে ইসরায়েল মধ্যস্ততার জন্য এগিয়ে আসবে। কিন্তু রাশিয়ার সহায়তায় বাসার বাহিনী যখন সত্যি দক্ষিণ সিরিয়ায় হামলা চালায়, তখন তাদের হতাশ করে দিয়ে ইসরায়েল নীরবতা বজায় রেখেছে।
ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ এককালে ইসরায়েলের সহায়তা পাওয়া বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো। ফোরসান আল জোলান নামের একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর যোদ্ধা মন্তব্য করেছেন, ‘ইসরায়েলের বিষয়ে এই শিক্ষা আমরা কোনও দিন ভুলব না। ইসরায়েলের মানুষের প্রতি কোনও দায়বদ্ধতা নেই। মানবতার প্রতি দায়বদ্ধতা নেই। ইসরায়েল শুধু নিজের স্বার্থ দেখে।’
ফরেন পলিসি লিখেছে, ইসরায়েল এতদিন এই সমঝোতা গোপন রাখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া ও দক্ষিণ সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের রক্ষায় পদক্ষেপ না নেওয়ার প্রেক্ষিতে বিদ্রোহীরা এখন মুখ খুলতে শুরু করেছে। আগে কয়েকটি প্রকাশনায় ইসরায়েলের এমন সম্পৃক্তরা বিষয়ে অল্প বিস্তর তথ্য উঠে আসলেও, এবারই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা গেল। ক্ষুব্ধ বিদ্রোহী যোদ্ধারা ফরেন পলিসিকে ইসরায়েলি সম্পৃক্তরা বিষয়ে তথ্য দিতে রাজি হয়েছে। তবে তাদের শর্ত, নাম-পরিচয় গোপন রাখতে হবে।
ইসরায়েল সিরিয়া হাজারখানেক সদস্যকে সহায়তা দিয়েছে। সিরিয়া যুদ্ধে সৌদি আরব, কাতার, তুরস্কে এবং যুক্তরাষ্ট্র এর চেয়ে ঢের বেশি যোদ্ধাকে সহায়তা দিয়েছে। কিন্তু ফরেন পলিসির মতে, সংখ্যায় কম হলেও বিদ্রোহীদের সমর্থন করার ক্ষেত্রে ইসরায়েলের সম্পৃক্ততা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ইসরায়েলের এমন সম্পৃক্ততা যেখানে ছিল সেখানে যুদ্ধ পরবর্তী সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা নিশ্চিতের প্রশ্নে ইসরায়েলের ভূমিকার গুরুত্ব নতুন করে হিসেব করার দরকার হয়ে পড়েছে।
ইসরায়েল ২০১৩ সাল থেকে ‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মির’ সঙ্গে যুক্ত গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্র দেওয়া শুরু করে। প্রথমে তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রস্তুত করা এম-১৬ অ্যাসাল্ট রাইফেল দেওয়া হতো। পরে সহায়তার উৎস গোপন রাখতে ইসরায়েল অন্য পরিকল্পনা করে। তারা লেবাননের হেজবুল্লাহর জন্য পাঠানো ইরানের একটি অস্ত্রের চালান আটক করেছিল ২০০৯ সালে। সেই চালানে আটক ইরানি অস্ত্র সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সরবরাহ শুরু করেছিল ইসরায়েল।প্রথম দিকে শতাধিক যোদ্ধাকে সহায়তা করলেও পরের দিকে ইসরায়েলের সিরিয়া নীতিতে আসে বিশাল পরিবর্তন। সিরিয়ায় সক্রিয় ইরান সমর্থিত যোদ্ধাদের ইসরায়েলি সীমান্ত থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে দেশটি ক্রেমলিন ও হোয়াইট হাউজের দ্বারস্থ হয়েছিল। কিন্তু সেই দুই জায়গা থেকে আশানুরূপ কোনও সাড়া না পেয়ে ইসরায়েল আরও বেশি আক্রমণাত্মক নীতি গ্রহণ করে। দেশটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর শখানেক সদস্যের বদলে এরপর গোষ্ঠীগুলোর হাজারখানেক সদস্যেকে সহায়তা দেওয়া শুরু করে। এর ধারাবাহিকতাতেই সিরিয়ার মধ্যে ইরানি অস্ত্রের চালান ও ইরানি ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো শুরু করে দেশটি।
সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে সিরিয়াতে সক্রিয় অন্যন্য শক্তিগুলোর মতো সাংগঠনিকভাবে হস্তক্ষেপ করেনি ইসরায়েল। তারা বরং বাহিনী প্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে। এসব বাহিনীগুলোর মধ্যে অন্তত দুইটির নাম প্রকাশ্যে চলে এসেছে। একটি হলো কুনেইত্রার যুবাতা আল খাশাব শহরের ফোরসান আল জোলান এবং অপরটি হচ্ছে বেইত জিন শহরের লিওয়া ওমর বিন আল খাত্তাব।
সংশ্লিষ্ট বাহিনী প্রধানরা মূলত ফোনে ইসরায়েলি সেনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। কখনও কখনও গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের সরাসরি দেখাও হয়েছে। কমান্ডাররা যখন গোষ্ঠী ত্যাগ করেছে বা স্থান পরিবর্তন করেছে তখন ইসরায়েলি সহায়তাও তাদের অনুসরণ করেছে। তবে আন্তঃকোন্দলের ক্ষেত্রে স্থগিত রাখা হয়েছিল ইসরায়েলি সহায়তা।
বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ইসরায়েলের সবচেয়ে প্রিয় ছিল ফোরসান আল জোলান। ইসরায়েল তাদের কাছে অস্ত্র পাঠাত অন্যান্য গোষ্ঠীগুলোর কাছে সরবরাহ করার জন্য। ইসরায়েলের অর্থ সহায়তাও বেশি পেয়েছে গোষ্ঠীটি। তার যখন ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল তখন বিমান হামলা করে সহায়তা দিয়েছে ইসরায়েল। কিন্তু ইসরায়েল সমর্থিত অন্যান্য বাহিনীগুলো যখন আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে তখন তারা ইসরায়েলের কাছ থেকে এমন বিমান হামলার সহায়তা পায়নি।
এক পর্যায়ে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে মানবিক সহায়তা দেওয়াও শুরু করে। সিরিয়ার অনেক অসুস্থ নাগরিককে চিকিৎসা দেওয়া ইসরায়েলি হাসপাতালে। প্রতিবেশীর প্রতি সদ্ভাবের যে কার্যক্রম ইসরায়েল শুরু করেছিল তা আরবিতে প্রচারও করেছিল ইসরায়েল।