কক্সবাংলা রিপোর্ট(১ ডিসেম্বর) :: কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযানে ইয়াবাসহ ধরা পড়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মাদক পাচারকারী।এ কারণে ইয়াবা পাচারের উৎসস্থল মিয়ানমার থেকে সমুদ্র পথে টেকনাফে মাদক পাচারের রুট আগের মতোই আছে। গত বছর মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক অভিযানের মুখে টেকনাফ ভিত্তিক মাদক পাচারকারী সিন্ডিকেটগুলো খানিকটা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। বন্দুক যুদ্ধে নিহতও হয় শতাধিক কুখ্যাত পাচারকারী। এরপর থেকে ইয়াবা পাচারে রোহিঙ্গাদের দিয়ে নতুন নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করে মাদক কারবারীরা।বর্তমানে পাচারকারীরা মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপ থেকে স্পীবোট,কাঠের নৌকা ও ট্রলারে পৌঁছে দিচ্ছে নাফ নদী ও সাগরে অবস্থানরত পাচারকারীদের কাছে।
এর সত্যতা মিলে গত ১১ নভেম্বর কক্সবাজার জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়। কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘আমার কাছে তথ্য রয়েছে- কক্সাবাজারের জেলে বসেই ইয়াবা গডফাদাররা মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। জেল থেকেই তারা প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছে। তাদের সেই নির্দেশনা মতে সীমান্তে মাদকের নেটওয়ার্ক পরিচালিত হচ্ছে।’ বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য তিনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কক্সবাজার কারাগারে এখন ধারণ ক্ষমতার ৪ গুণ বন্দি অবস্থান করছে। তাদের ৮০ শতাংশই মাদক মামলার আসামি। ম্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ ১০২ জন ইয়াবা গডফাদারও সেখানে রয়েছে। পুলিশের বিশেষ উদ্যোগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তারা টেকনাফে আত্মসমর্পণ করে। এর পর তালিকাভুক্ত অন্য কারবারিরা আত্মগোপনে চলে গেলেও ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ হয়নি। এখনও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে ধরা পড়ছে বিশাল বিশাল চালান।
টেকনাফের নিরাপত্তা বাহিনী সূত্রগুলো জানায়,গত বছর ইয়াবা বিরোধী যৌথ অভিযানের পর টেকনাফ ভিত্তিক ইয়াবা পাচারকারী সিন্ডিকেট নড়বড়ে হয়ে গেছে। সেখান থেকে পুরনো রুটে ইয়াবা পাচার কার্যক্রমে ব্যাপক ভাটা পড়েছে। তাদের ততৎপরতা প্রায় ৮০ শতাংশ হ্রাস পেলেও আত্বসমর্পনকারী ইয়াবা গডফাদার ও মিয়ানমারের মাদক পাচারকারীরা বর্তমানে তাদের রুট পরিবর্তন করে উখিয়া-টেকনাফের শরনার্থী ক্যাম্পের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের দিয়ে ইয়াবা পাচার অব্যাহত রেখেছে। এর মাধ্যমে ইয়াবা পাচারের অর্জিত টাকায় রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসে পরোক্ষভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
এদিকে সর্বশেষ ১ ডিসেম্বর রবিবার টেকনাফে ১০ কোটি টাকার ২ লাখ পিস ইয়াবার একটি বড় চালান ধরা পড়েছে টেকনাফে। এ ঘটনায় মিয়ানমারের মংডুর এক মাদক পাচারকারীকেও আটক করেছে কক্সবাজারস্থ র্যাব-১৫। রবিবার এক মেইল বার্তায় র্যাব-১৫ জানায়,গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, কতিপয় মাদক ব্যবসায়ী টেকনাফের হ্নীলা ইউপিস্থ ৯ নং ওয়ার্ডের মোঃ হাসান মিয়ার জাদিমোড়া এর বাড়ীর দক্ষিণ পার্শ্বে সড়কের পাঁকা রাস্তার পূর্ব পার্শ্বে খালী জায়গার উপর মাদকদ্রব্য ইয়াবা ট্যাবলেট ক্রয়-বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অবস্থান করছে।
উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে ১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে র্যাব-১৫’র একটি দল আভিযান চালিয়ে মায়ানমারের মাংগালা, মংডুর মাংগালা এলাকার নাগরিক মৃত ইউসএফর পুত্র মোঃ আবুল কালাম (২০)কে গ্রেফতার করে।
পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আসামীর হেফাজতে থাকা ২টি বস্তা তল্লাশী করে ২ লক্ষ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। যার বাজার মূল্য ১০ কোটি টাকা। র্যাব-১৫ আরও জানায়,গ্রেফতারকৃত আসামী এবং উদ্ধারকৃত মালামাল সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে টেকনাফ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত জুলাই মাসে ৫ লাখ ২৩ হাজার ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। পরের মাসে উদ্ধার হয়েছে ১১ লাখ ৪ হাজার ইয়াবা। গত অক্টোবর মাসে ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে ২১ লাখ ৭৯ হাজার।এর মধ্যে উখিয়ায় মাছ ধরার ট্রলার দিয়ে পাচারের সময় ৮ লাখ পিস ইয়াবাসহ জামাল হোসেন (২২) নামে এক রোহিঙ্গা যুবককে আটক করে র্যাব-১৫। নভেম্বর মাসেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে র্যাব-১৫ গত ১৪ নভেম্বর টেকনাফের হ্নীলা জাদিমুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫০ লাখ টাকার প্রায় ১০ হাজার পিস ইয়াবা এক রোহিঙ্গা মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে।এর দুদিন পর ১৭ নভেম্বর টেকনাফের লেদা এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাড়ে ৭ কোটি টাকার প্রায় দেড় লক্ষ পিস ইয়াবা সহ এক নারী মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে। এছাড়া ১৬ নভেম্বর কোস্ট গার্ড বাহিনীর টেকনাফ স্টেশানের একটি দল সেন্টমার্টিন্সের ছেড়াদ্বীপ এলাকায় অভিযান চালিয়ে অর্ধ কোটি টাকার ১০ হাজার পিস ইয়াবাসহ এক মিয়ানমারের মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে। ২৬ নভেম্বর উখিয়ার রাজাপালং এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩২ লক্ষ টাকার থেকে ৬ হাজার ৩৯৪ পিস ইয়াবাসহ এক মাদক পাচারকারীকে আটক করে র্যাব-১৫।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে,উখিয়া ও টেকনাফের শীর্ষ ইয়াবা কারবারিদের অনেকে জেলে থাকলেও নতুন নতুন অনেক গডফাদার তৈরি হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তালিকায় তাদের অনেকের নাম নেই। নতুন এই কারবারিরা প্রকাশ্যে বিচরণ করলেও রাতের আঁধারে তাদের চেহারা পাল্টে যায়।টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে তারা নেটওয়ার্ক পরিচালিত করে।
এদিকে টেকনাফের বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সমুদ্রপথে ইয়াবার চালান ঢোকার পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। তবে সরকারের নির্দেশে জলপথে কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছে।অপরদিকে জেলা পুলিশের তথ্যমতে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় কক্সবাজার জেলায় ১ হাজার ১৫১ জন ইয়াবা কারবারি রয়েছে। তাদের বেশিরভাগ সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের।
Posted ২:৩৩ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta