রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরে অচেনা লোকের আনাগোনা : জনমনে শংকা

মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭
498 ভিউ
উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরে অচেনা লোকের আনাগোনা : জনমনে শংকা

শহিদুল ইসলাম,উখিয়া(২৬ সেপ্টেম্বর) :: কক্সবাজারে লাখ লাখ রোহিঙ্গার ভিড়ে এমন কিছু লোকজনেরও দেখা মেলে যাদের আচরণ সন্দেহজনক। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা এসব ব্যক্তি দৃশ্যত ত্রাণ বিতরণ করে।সরকারী নির্দেশ উপেক্ষা করে মসজিদ মাদ্রাসার আড়াঁলে নগদ টাকা, ত্রিপল, কাপড়, যায়নামাজ, তাসবীহর ছরা, কিতাব, বোরকা সহ নানা রহস্যজনক সামগ্রী বিতরণ করছে।

যাদের মধ্যে সাংবাদিক (ইনকিলাব) , দাওয়াতুল ইসলাম, জমিয়াতুল মোদারেসিন নামক সংগঠন ও ব্যক্তির অস্তিত্ব মিলেছে। বিশেষ করে অরণ্যঘেরা পাহাড়ি এলাকায় স্থাপিত রোহিঙ্গা বস্তিতে তাদের বিচরণ লক্ষণীয়। রাতের আঁধারেও বিদেশি লোকজনের উপস্থিতি দেখা যায়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল বলেছেন, এ ব্যাপারে প্রশাসন সজাগ রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাতে টহল দিতে গিয়ে এ রকম একদল বিদেশিকে গত বুধবার রাতে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে নিজে দেখেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার এসব লোক সিলেটের কিছু ব্যক্তির সঙ্গে আসেন রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে। এরপর থেকে পুলিশের টহলও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও টানা সপ্তাহ ধরে কক্সবাজারে অবস্থানকালে বিভিন্ন সমাবেশে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে কেউ যাতে জঙ্গিবাদে মেতে উঠতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, কম্পানি, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগেও ত্রাণসামগ্রী নিয়ে এগিয়ে আসছে রোহিঙ্গাদের জন্য। অনেক প্রবাসীও আর্থিক সহযোগিতা পাঠাচ্ছেন অন্যের হাত দিয়ে। ত্রাণবিতরণকারীদের স্রোতে কারা কী উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে আসছে তা বোঝা যেমন কঠিন, তেমনি সবার সঠিক পরিচয় পাওয়াও সহজ নয়।রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলো পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, দলে দলে সন্দেহজনক লোকজনের আনাগোনা।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ব্যক্তি উদ্যোগে বিতরণের জন্য ১২টি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। ত্রাণ বিতরণকারীদের এসব নির্ধারিত কেন্দ্রে টোকেন প্রদানের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করার কথা থাকলেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না। ত্রাণ বিতরণের দোহাই দিয়ে আসা কিছু লোক টেকনাফ মহাসড়কের পশ্চিমে বালুখালী এবং কুতুপালংয়ের অনেক দূরবর্তী অরণ্যঘেরা পাহাড়ি এলাকায় স্থাপিত রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে যেতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন বেশ।

বৃহস্পতিবার সকালে উখিয়ার কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়া ও মধুরছড়া নামের পাহাড়ি এলাকায় আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জীবন-যাপনের খবর সংগ্রহে গিয়ে দলবদ্ধ বেশ কিছু লোকের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। একেকটি দলে ১২-১৫ জনের মতো লোক। এমন একটি দলের মুখোমুখি হলে তাদের একজন নিজের নাম-পরিচয় না দিয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন, তাঁরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ‘দ্বিনী’ কাজে ‘জামাত’ নিয়ে এসেছেন।

এ দাবি করলেও দলটিকে ত্রাণ দিতে দেখা যায়নি। তাঁরা শুধু রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ভাব বিনিময় করছিলেন।অন্য একটি দলেরও জনাবিশেক লোককে দেখা গেছে অরণ্যঘেরা রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে। তাদেরও ত্রাণ দিতে দেখা যায়নি। অরেকটি দলের লোকজনও দ্বিনী ‘জামাত’ নিয়ে এখানে আসার কথা বলেছে। তারা রাজধানী ঢাকার উত্তরা থেকে আসার কথা বলেছে।

সাত-সকালে এসব লোকজনকে সড়ক থেকে অনেক দূরে পাহাড়ি এলাকায় রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ভাব বিনিময় করতে দেখে অনেকেই নানা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।উখিয়ার বালুখালী কাস্টমস স্টেশন জামে মসজিদের ভিতরে তাবলীগের নাম দিয়ে অচেনা দলবদ্ধ লোকজন দিনরাত অবস্থান করছে। তাদের স্থানীয় মসজিদের খাদেম পরিচয় দিয়ে আবদুল কাদের নামক এক ব্যক্তি রাত গভীর পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের নিয়ে বৈঠক করে থাকে।

পরে সুযোগ বুঝে তাদের কে কি যেন শিখিয়ে দিয়ে নগদ টাকা সহ নানা ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। অথচ উক্ত আবদুল কাদের কাস্টমস মসজিদের কেউ নন, তিনি গত কয়েক যুগ ধরে রোহিঙ্গাদের এনজিওর সাথে জড়িত, এমন অভিযোগ করে বলেন উক্ত মসজিদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাংবাদিক শ.ম.গফুর।

এ প্রসঙ্গে উখিয়া উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা ও সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের উখিয়া উপজেলা সভাপতি নুর মোহাম্মদ সিকদার সন্ধ্যায় বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা ভীষণ উদ্বিগ্ন।

’ তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিতরণের নামে আসা লোকজনের মধ্যে সন্দেহভাজন লোকজনের সংখ্যা কম নয়। এসব লোকজনকে নিয়ে আমাদের এলাকার অনেকেই আতঙ্ক বোধ করছে।

তিনি বলেন, উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের অভ্যন্তরে ইতিপূর্বে জঙ্গিবাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা সবারই জানা রয়েছে। এ কারণে সময় থাকতেই তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিও আকর্ষণ করছেন। খোদ রোহিঙ্গারাও এ বিষয়ে নানা সন্দেহ পোষণ করছেন।

১৫ বছর ধরে আশ্রিত জীবন অতিবাহিত করছেন উখিয়ার অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা রোহিঙ্গা নেতা আবু সিদ্দিক (৫০)। তিনি শিবিরটির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি।

আবু সিদ্দিক বলেন, ‘এবার চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা মাত্র দুই সপ্তাহেই ঢুকে পড়েছে। বাংলাদেশে এ রকম রোহিঙ্গা আসার ঘটনা এই প্রথম। এ জন্য এবারের বিষয়টি অন্যবারের মতো ভাবলে চলবে না। ’

তিনি বলেন, ব্যাপক হারে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সুযোগ নিতে কে না চাইবে। তাই জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা যাতে কেউ করতে না পারে এ ব্যাপারে আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। গত কয়েক দিনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসছে। ত্রাণ ছাড়াও অনেকে আসছে। তাদের ব্যাপারে রোহিঙ্গারাও শঙ্কিত।

জানতে চাইলে উখিয়া-টেকনাফ আসনের সাবেক এমপি এবং টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দেওয়ার নামে অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চাইবে, এমন লোকের অভাব নেই।

তিনি জানান, ইতিমধ্যে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারির সহযোগিতায় সাঈদীপুত্র শামীম সাঈদী রোহিঙ্গা শিবিরে এসে ত্রাণ বিতরণের নামে সন্দেহজনক ফরম বিলি করেছেন রোহিঙ্গাদের মধ্যে। তিনি বলেন, এলাকা নিয়ে ‘জঙ্গিবাদের আশঙ্কা’ তাদের বরাবরই কাজ করে।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘ত্রাণ বিতরণের নামে শিবিরের সন্দেহভাজন লোকজনের আনাগোনার বিষয়টি নিয়ে আমরা সজাগ রয়েছি। আমরা কাউকে রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ প্রসারের সুযোগ দেব না।

’ তিনি এ প্রসঙ্গে আরো জানান, রাতের বেলায়ও ত্রাণ বিতরণের নামে দেশি-বিদেশি লোকজন ঘুরে বেড়াচ্ছে শিবির এলাকায়। তবে দেশপ্রেমিক জনতার প্রশ্ন মানবতার দোহাইয়ে ত্রাণ বিতরণকারী এরা কারা? তারা এতদিন কোথায় ছিল? তাদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয়রা উদ্ধিগ্ন।

498 ভিউ

Posted ৯:৩৯ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com