রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গারা স্বদেশে কেন ফিরে যেতে চান

মঙ্গলবার, ১৫ মে ২০১৮
336 ভিউ
কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গারা স্বদেশে কেন ফিরে যেতে চান

কক্সবাংলা রিপোর্ট(১৪ মে) :: বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দুই দেশের সমঝোতা চুক্তি হলেও কক্সবাজারে আশ্রিতদের স্বচ্ছল-অসচ্ছল অনেকেই স্বদেশে ফিরতে চান।

তবে একইসাথে রোহিঙ্গা হিসেবে নাগরিকত্বের স্বীকৃতি স্বদেশে নিরাপত্তা, আবাসস্থল ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয় কেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ৫ লাখেরও বেশি। সবশেষ গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে সেনা বাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নের জেরে নতুন করে কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছেন আরও ৭ লাখ রোহিঙ্গা।

এখনো এপারে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। বিষয়টি এখন আর্ন্তজাতিক মহলে ব্যাপক আলোচিত একটি ইস্যু।

সম্প্রতি মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। এ চুক্তি নিয়ে রোহিঙ্গারা দেখিয়েছেন মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকে স্বদেশে ফেরত যেতে চাইলেও অনেকে আবার বলছেন ভিন্ন কথা। নিরাপত্তাহীনতার প্রশ্নে তারা এখনই দেশে ফিরতে রাজী নন।

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার প্রত্যাবাসনে স্থায়ী নিরাপত্তা প্রদান, আবাসস্থল নির্মাণ ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন। এদিকে রোহিঙ্গাদের দেশে না ফিরতে এনজিওদের ত্রাণের প্রাচুর্যও ইন্ধন যোগাচ্ছে।

ঐশ্বর্য ফেলে শূন্যতায় ভাসতে চাননি কলিমুল্লাহ (৪৫)। তবু ভাসতে হয়েছে। ফেলে আসা চিংড়িঘেরটি হয়তো এখন শূন্য কিংবা অন্য কারো দখলে। গোয়ালের গরুগুলোও হয়তো পুড়েছে অথবা অন্য কোনো গোয়াল খুঁজে নিয়েছে। রেখে আসা ৫০ বিঘা জমিতে আর ফসল ফলাতে পারবেন কিনা, তাও জানা নেই কলিমুল্লাহর।

তবে স্বপ্নটা এখনো বাঁচিয়ে রেখেছেন। বালুখালী ক্যাম্পের ১৮ ফুট বাই ১২ ফুটের কুটিরে শুয়ে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখেন নিজের ঠিকানা মংডু পাড়ি দেয়ার।

মংডুর সচ্ছল কৃষক কলিমুল্লাহ ক্যাম্পের পরিবেশ এখনো মানিয়ে নিতে পারেননি। উঠোন মাতিয়ে রাখা কলিমুল্লাহর নয় বছরের মেয়ে উম্মে হাবিবাও ক্যাম্পের গুমোট পরিবেশে এখন শান্ত ও সুস্থির এক শিশু। চঞ্চলতার সবটাই সে রেখে এসেছে মংডুতেই। সেখানে ফিরে যাওয়ার আকুতি তাই উম্মে হাবিবার চোখে-মুখেও।

কলিমুল্লাহ বলছিলেন, এখানে দুধ-ভাত খাওয়ালেও শান্তি নেই। দেশে যেতে পারলেই শান্তি। আমরা জীবন বাঁচানোর জন্য এখানে এসেছি। মিয়ানমার রোহিঙ্গা হিসেবে নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দিলেই চলে যাব।

কলিমুল্লাহর ঘরের সামনের রাস্তা পেরিয়ে তিনটি ঘর পেরোলেই শাকের আলীর ঘর। মংডুতে তার পরিচিতি ছিল জমিদার হিসেবে। মিয়ানমারে তার ১৬ দোন (প্রতি ১৬ বিঘায় এক দোন) জমি ছিল। ছিল নিজের একাধিক ব্যবসা, চিংড়ির ঘের।

শাকের আলীর স্ত্রী শনজিদা জানান, মিয়ানমারে তাদের দোতলা ঘর ছিল। এখানে ত্রিপলের ছোট ঘরে অনেকে একসঙ্গে থাকায় তার সন্তানরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

গরমের কারণে চার সন্তানদের জ্বর, সর্দি, কাশি লেগেই আছে। একসময়ের ধনাঢ্য শাকের আলীর পক্ষে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অন্যদের মতো কাজ করাও সম্ভব হচ্ছে না। তাই তাদের বেশির ভাগ সময়ই ত্রাণের ডাল-মরিচ দিয়েই খেতে হচ্ছে।

ক্যাম্পের পরিবেশে হাঁপিয়ে উঠেছেন শনজিদা। মিয়ানমার তাদের স্বীকৃতি দিলে তিনি ১ সেকেন্ডও বাংলাদেশে থাকতে রাজি নন।

তিনি বলেন, আঁরারে বর্মা রোহিঙ্গা মানি লইলে আঁরা এডে ১ সেকেন্ডও ন থাইক্কুম। জীবন বাঁচাইবেল্লাই বাংলাদেশত বউত হষ্ট গরি থাকা পরের। (মিয়ানমার মেনে নিলে আমরা এখানে ১ সেকেন্ডও থাকব না। জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে অনেক কষ্ট করে থাকতে হচ্ছে)।

কলিমুল্লাহ, শনজিদার মতো নিজ ভূমে বেশ সচ্ছল জীবনযাপন করে আসা রোহিঙ্গারা এখনো ক্যাম্পের উদ্বাস্তু জীবনযাপনের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেননি। উদ্বাস্তু শিবিরের গাদাগাদি পরিবেশ, দিনমজুরির কাজে অনভ্যস্ততা ও সন্তানদের দুর্দশা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে তাদের। এ কারণেই তারা দিন গুনছেন, কবে ফিরে যাবেন নিজের ভিটেমাটিতে।

একই অবস্থা মধুরছড়া ক্যাম্পের বাসিন্দা সগীর মোহাম্মদের। মিয়ানমারের বুড়িচংয়ের (বুথিডং) বলিবাজারে ৭৫ বিঘা জমি ছিল তার। জমিতে দৈনিক কাজ করতেন ৪০ জনের মতো শ্রমিক। ক্যাম্পের একটি মুদিদোকানে বসে নিজের ১৮টি মহিষ, ২২টি গরু ও ৪০টি ছাগলের হিসাব করতে করতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।

কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আঁরার জীবন, বিডাবারি ইতারা মগরে দিফেলাইর। দেশর লাই অন্তর ফুরি যারগই। বেগ্গিন ঠিক অইলে অনই যাইয়মবোই। (আমাদের জমি, বাড়ি-ভিটা তারা মগদের দিয়ে দিচ্ছে। দেশের জন্য মন উতলা হয়ে উঠছে। সব ঠিক হয়ে গেলে এখনই চলে যাব)।

সগীর মোহাম্মদ সাত ছেলে ও চার মেয়ে নিয়ে কোরবানির দুদিন পর পালিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে। পথে দেখেছেন নির্যাতনের অনেক দৃশ্য। তাই এখনো মিয়ানমারের যে পরিস্থিতি, তাতে দেশে ফেরা হবে কিনা, তা নিয়ে নিশ্চিত নন তিনি। তবুও আশায় বুক প্রিয় ‘বর্মাত’ ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশে আসার পর ধনী রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ শুরুর দিকে অর্থের বিনিময়ে ভালোভাবে থাকার চেষ্টা করেছেন। তবে তাদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। মিয়ানমার থেকে যারা অর্থ নিয়ে আসতে পেরেছেন, তারা শুরুর দিকে ক্যাম্পেও কিছুটা ভালোভাবে থেকেছেন। ত্রাণের বাইরে খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনেছেন। কিন্তু এখন অর্থ ফুরিয়ে আসায় আর সে সুবিধা পাচ্ছেন না তারা। শ্রমিকের কাজে অভ্যস্ততা না থাকায় তাদের এখন ত্রাণের ওপর নির্ভর করেই চলতে হচ্ছে।

আর যারা কষ্টেসৃষ্টে কাজ করছেন, এনজিওগুলোর তত্ত্বাবধানে ক্যাম্পের ভেতরই দৈনিক ভিত্তিতে মজুরি খাটছেন তারা। কিন্তু মাসে সর্বোচ্চ সাতদিনের বেশি কাজ না থাকায় বেশির ভাগ সময় বেকার বসেই দিন কাটাতে হয় তাদের।

দেশে ফেরার বিষয়ে ধনীদের মতো আগ্রহ নেই দরিদ্র রোহিঙ্গাদের। তাদের বেলায় চিত্রটি ভিন্ন। সগীরের সঙ্গে একই মুদিদোকানে আড্ডা দিচ্ছিলেন ৩৩ বছর বয়সী নুরুল আমিন। কোরবানির তিনদিন পর বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেন তিনি। ১৫ দিন পরপর ত্রাণের ৩০ কেজি চাল, পাঁচ কেজি ডাল ও তিন কেজি সয়াবিন তেল পান তিনি। আর মাঝে মধ্যে ক্যাম্পেই কাজ করে যে আয় হয়, তা দিয়ে ভালোই চলছে তার সংসার।

এ কারণে সগীর মোহাম্মদের মধ্যে দেশে ফেরার যে তাড়া রয়েছে, নুরুল আমিনের মধ্যে তা নেই। দেশে ফেরার চেয়ে ক্যাম্পের পরিবেশ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ঘর মজবুত করে গড়ে তোলার কায়দাকানুন নিয়েই বেশি আগ্রহ তার।

গত ২৫ আগস্টের পর থেকে শুরু হওয়া সেনাবাহিনীর নিপীড়নের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চল এখন কার্যত জনশূন্য। জাতিসঙ্ঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ব সম্প্রদায় ওই ঘটনাকে সরাসরি জাতিগত নিধন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। এরপর বিশ্ব সম্প্রদায়ের চাপে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য চুক্তি করলেও বিশেষজ্ঞরা এর বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।

ইতোমধ্যে মিয়ানমারের অনেক কর্মকর্তা বলেছেন, ফিরিয়ে নেয়ার পর রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে রাখা হবে। এ লক্ষ্যে নাকি দু’টি ব্যারাকও নির্মাণ করা হয়েছে। আর এ বিষয়টি নিয়ে শঙ্কায় আছেন রোহিঙ্গারা। তারা তাদের পিতৃভিটায় ফিরতে চান, যেখানে তারা বসবাস করেছেন কয়েক পুরুষ ধরে। ক্যাম্পে বাসিন্দা হয়ে ফিরতে চান না রোহিঙ্গারা।

336 ভিউ

Posted ৪:০৬ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৫ মে ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com