কক্সবাংলা রিপোর্ট :: বিশ্বজুড়ে চলছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ধাক্কা ঠেকাতে কক্সবাজারে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্যবিভাগ নিয়েছে নানা উদ্যোগ। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি নিয়মিত চালানো হচ্ছে অভিযান।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যনুসারে কক্সবাজার জেলায় গত ৮ মাসে ৭১ হাজার ৭৮৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৭০৮ জন এবং চিকিতসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫৩৬৪ জন।আইশোলেশনে ভর্তী রয়েছেন ৩৪ জন এবং মৃত্যবরণ করেছেন ১০ রোহিঙ্গা সহ ৮৩ জন। আর করোনা মহামারির কারণে কক্সবাজার এখন দেশের ৪র্থ স্থানে অবস্থান করছে। এত আশংকার মধ্যেও তুব হুশ ফিরছে না মানুষের। নতুন বছরের প্রথম দিনই সমুদ্র সৈকত ও হোটেল মোটেল জোনে যেন সবাই উঠে-পড়ে লাগলেন করোনা চাষে।
ইংরেজি নতুন বছরকে বরণ করে নিতে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত,ইনানী সৈকত,সেন্টমার্টিন সহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ভিড় করেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত দর্শনার্থীরা।তারা কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তবে সামান্য সংখ্যক মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানলেও বেশিরভাগের মুখে ছিলো না মাস্ক, ছিলো না শারীরিক দূরত্ব।
ইংরেজি নববর্ষের (শুক্রবার) প্রথম দিন কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, করোনাভাইরাসের ভয় উপেক্ষা করে দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত সমুদ্র সৈকত,সেনটমার্টিন সহ পর্যটন কেন্দ্রীক ও দর্শনীয় স্থানগুলো। একে তো সাপ্তাহিক ছুটি, তার সাথে নতুন বছরের প্রথম দিন- তাই কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণপ্রেমী পর্যটকদের ভিড় ও উচ্ছ্বাস ছিলো চোখে পড়ার মতো। এর মধ্যে তরুণ-তরুণীদের সংখ্যাই বেশি।তবে ভিড় জমানো লোকজনের বেশিরভাগের মুখে ছিলো না মাস্ক। আগতদের মধ্যে ছিলো না কোনো সামাজিক দূরত্ব। যেন স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘণের এক অসম প্রতিযোগিতায় ছিলেন তারা।
বিকালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, বছরের প্রথম দিন শুক্রবার সকাল থেকেই সেখানে দর্শনার্থীদের ভিড়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বড়বাস,প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের মাধ্যমে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসেন। কেউ বন্ধুদের নিয়ে, কেউ পরিবার নিয়ে আবার কেউ একাও এসেছেন ঘুরতে। এসময় তারা মেতে উঠেন সমুদ্র স্নানে,সেলফিবাজিতে, মত্ত হন ছবি তোলায়। কিন্তু ঘুরতে আসা বেশিরভাগ মানুষ করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কাই করেননি। এর মধ্যে তরুণ-তরুণীদের মাঝে বিধি লঙ্ঘনের প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
ঢাকা থেকে জামান-সালেহা দম্পতি বলেন, ‘করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে ঘরে বন্দি। তাই ইংরেজি নতুন বছরকে বরণ করে নিতে ও ছেলে-মেয়েদের বন্দিদশা থেকে মুক্তি দিতে খানিকটা বিনোদনের উদ্দেশ্যেই সমুদ্র সৈকতে আসা। মুখে মাস্ক নেই কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি তারা বলেন- মাস্ক পরলে দম বন্ধ হয়ে আসে।সাগরের বিশুদ্ধ বাতাস নিতে পারিনা।
লিটন নামে চট্রগ্রাম নগরীর এক তরুণ বলেন, ‘করোনার কারণে ২০২০ সালটিতে আমরা তেমনভাবে খোলামেলা কোনো কিছু করতে পারিনি। বাড়ির বাহিরে বের হলেই মাস্ক পরাসহ নানা ধরনের বিধি-নিষেধের মধ্যে কাটাতে হয়েছে। তাই নতুন বছরটাকে নতুনভাবে বরণ করে নিতে বন্ধুদের দিয়ে মোটরসাইকেলযোগে কক্সবাজারে এসেছি। বন্ধুদের নিয়ে সমুদ্র সৈকতে ঘুরে বেড়াচ্ছি, ছবি তুলে সময় কাটাচ্ছি, সবমিলিয়ে খুব মজা করছি।’
স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন প্রসঙ্গে কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা: মাহবুবুর রহমান কক্সবাংলাকে বলেন, মানুষকে স্বাস্থ্যসচেতন করতে আমাদের পক্ষ থেকে সবকিছুই করা হচ্ছে। কিন্তু মানুষ এত উদাসীন, বিষয়টি আমাদের রীতিমতো হতাশ করেছে। সেই সঙ্গে উদ্বেগেরও সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, বছরের প্রথম হিসেবে দিন সমুদ্র সৈকত সহ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ঘুরাফেরা করলেও সবার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানাটা জরুরি ছিলো। যারা মানছেন না তারা নিজেরা যেমন ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন, তেমনি ঝুঁকিতে ফেলছেন পরিবার এবং কক্সবাজারের মানুষকে। এই জিনিসটা অনুধাবন করতে না পারলে কক্সবাজারের জন্য সত্যিই ভয়ানক দিন অপেক্ষা করছে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে করোনা ইউনিটের এক ডাক্তার বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে কক্সবাজারে অনেক উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্যবিভাগ, জেলা ও পুলিশ প্রশাসন এবং পৌরনভা। মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, সরকারি অফিস-আদালত,ব্যাংক, ব্যানার টানানো সহ চালানো হচ্ছে ভ্রাম্যমান আদালতের নিয়মিত অভিযান। তবু যদি করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি না মানা হয় তবে কক্সবাজারবাসীকে চরম বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিবেন বেড়াতে আসা অসচেতন পর্যটকরা।
Posted ৫:২১ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০২ জানুয়ারি ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta