রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের “বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি” : রক্ষকই যেখানে ভক্ষক !

রবিবার, ২৩ জুন ২০১৯
358 ভিউ
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের “বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি” : রক্ষকই যেখানে ভক্ষক !

বিশেষ প্রতিবেদক(২২ জুন) :: পর্যটন নগরী কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে সব স্থাপনা অপসারণে হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। উপরন্তু হকার পুনর্বাসনের নামে ৫ শতাধিক দোকানঘর নির্মাণ করে তা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন খোদ ‘বিচ ব্যবস্থাপনা কমিটি’র কতিপয় সদস্য। এ কমিটিই কক্সবাজার সৈকত দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন ও প্রটোকল শাখা সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে অনুমোদিত ঝিনুকের দোকান রয়েছে ২৬৪টি, খাবারের দোকান রয়েছে ৯৮টি। লাবনী পয়েন্টে ঝিনুকের দোকান রয়েছে ২০২টি, খাবারের দোকান রয়েছে ৪৯টি। সৈকতে ২৩৯টি স্টুডিওর নামে দুটি করে মোট ৪৭৮টি ফটোগ্রাফার কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ ফটোগ্রাফারের কার্ড ইস্যু করা হয়েছে ১৮০টি। সুগন্ধা পয়েন্টে ৫৪টি বিচ বাইক ও ২৫টি জেট-স্কি কার্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও কিটকট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় দেড় হাজার।

কক্সবাজার সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সদস্য নইমুল হক চৌধুরী টুটুল। জেলা জাসদের একাংশের সভাপতি তিনি। সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা হকার্স মার্কেটে তার নামে বরাদ্দ রয়েছে একাধিক দোকান। সৈকতে ভ্রাম্যমাণ হকারদের জন্য এসব অস্থায়ী দোকান বরাদ্দের কথা বলা হলেও এখানে দোকান বরাদ্দ নিয়েছেন টুটুল নিজে।

শুধু টুটুলই নন, সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির আরও কয়েক সদস্য নিজের নামে, স্বজন বা অনুগত লোকজনের নামে দোকান বরাদ্দ নিয়েছেন। হাতিয়ে নিয়েছেন কিটকট, জেট স্কি, বিচ বাইক, ভ্রাম্যমাণ ফটোগ্রাফিসহ বিভিন্ন ব্যবসার লাইসেন্স। জেলা প্রশাসনের পর্যটন ও প্রটোকল শাখা থেকে দেওয়া হয়েছে এসব লাইসেন্স। তবে হকারদের জন্য বলা হলেও প্রকৃত কোনো হকার এখানে দোকান বা অন্য কোনো ব্যবসার লাইসেন্স পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে।সৈকতের বালু দখল করে যারা এখানে ব্যবসা করছেন তার তালিকায় রয়েছেন সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য, স্থানীয় রাজনীতিক, সরকারের প্রভাবশালী আমলার স্বজন, সচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রভাবশালীরা।

জেলা প্রশাসনের একাধিক সূত্র ও সৈকতের ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।

কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সুগন্ধা পয়েন্টে টুটুলের দুটি মুদি দোকান ও দুটি ঝিনুকের দোকান রয়েছে। জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো. শাহাজানের রয়েছে চারটি দোকান। আরও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানদের নামে দোকান রয়েছে। এসব দোকানের ভোগদখলে রয়েছেন সৈকতে কথিত ব্যবসায়ী সমিতির নেতা বাহাড়ছড়ার লালু।

একই পয়েন্টে একটি খাবারের দোকান রয়েছে সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির আরেক সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিমের। তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আরও কিছু দোকান। সেগুলোর তদারকি করেন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. রুবেল।

স্থ্থানীয় একাধিক ব্যবসায়ী জানান, সরকারের একজন প্রভাবশালী আমলার ভাই জহির আলমের নামে সুগন্ধা পয়েন্টে অন্তত ২০টি দোকান নির্মাণ করা হয়েছে মাস তিনেক আগে। কিটকট ব্যবসার জন্য ৩০টির বেশি কার্ডও বরাদ্দ নিয়েছেন তিনি। সেগুলোর দেখাশোনা করেন সৈকতে স্টুডিও মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাঞ্চন আইচ। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে কাঞ্চন আইচ বলেন, ‘জহির আলমের নামে সেখানে ছয়টি দোকান রয়েছে। সিগাল পয়েন্টে রয়েছে ৩০টি কিটকট। সেগুলোর দেখাশোনা করি আমি।’

সুগন্ধা পয়েন্ট হয়ে সাগরে নামার পথে ডান পাশের মার্কেটের বড় একটি অংশ ‘মুক্তিযোদ্ধা’ মার্কেট নামে পরিচিত। ওই অংশে ৪০টির মতো দোকান রয়েছে।

সৈকতের ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা জানান, সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য নইমুল হক চৌধুরী টুটুল ও মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহাজানের শেল্টারে ওই মার্কেটের দেখভাল করেন লালু নামে একজন। লালু ও তার ছেলে বকুলের নামেও এ মার্কেটে চারটি দোকান রয়েছে। বাবা-ছেলে সৈকতে ২০টি কিটকট ব্যবসার কার্ডও বরাদ্দ নিয়েছেন। ভাড়া নিয়ে চালান আরও ২৫টির মতো। লালু স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির একাংশের সভাপতি। সড়কের পাশে টুটুলের একটি খাবারের দোকান চালান কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁওর বাসিন্দা হেলাল। তিনি বলেন, ‘আমি ভাড়া নিয়েছি লালুর কাছ থেকে। প্রতি মাসে তাকেই ভাড়া পরিশোধ করি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নইমুল হক চৌধুরী টুটুল বলেন, দেশের একজন নাগরিক হিসেবে সৈকতে দোকান বরাদ্দ নিতেই পারি। এখানে লুকোচুরির কিছু নেই। ভ্রাম্যমাণ হকারের কথা বলে খোদ সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা এই দোকান কেন বরাদ্দ নিয়েছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমিটির সভার সিদ্ধান্তমতেই তা হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহাজান বলেন, সুগন্ধা পয়েন্টে ৬ থেকে ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের সন্তানদের নামে দোকান বরাদ্দ রয়েছে। তৎকালীন জেলা প্রশাসক গিয়াস উদ্দিন আমাকে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বরাদ্দ নেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করেছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমার ছেলের নামে একটি দোকান বরাদ্দ নিয়েছি।

সুগন্ধা পয়েন্টে মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের পরের অংশ ‘জালাল মার্কেট’ হিসেবে পরিচিত। সেখানে রয়েছে ১০৫টি দোকান। ব্যবসায়ী সমিতির একাংশের সভাপতি জালাল ওই মার্কেটের নিয়ন্ত্রক। জেলা আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতা তাকে শেল্টার দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আরওঅভিযোগ রয়েছে, এই মার্কেটে প্রতিটি দোকান বিক্রি হয়েছে ৪ থেকে ৬ লাখ টাকায়। জালাল মার্কেটের পরের অংশে কিছু নতুন দোকান গড়ে তোলা হয়েছে।

এ মার্কেটের বিপরীত দিকে অর্থাৎ সৈকতে নামার বাম পাশে গড়ে তোলা মার্কেটের একাংশ নিয়ন্ত্রণ করেন মো. রুবেল। অপর অংশ নিয়ন্ত্রণ করেন জাকির নামে একজন। অভিযোগ রয়েছে, সেখানেও প্রায় দোকানই হাতবদল হয়েছে। প্রভাবশালীরা প্রতিটি দোকান ৪ থেকে ৬ লাখ টাকায় বিক্রি করে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। জেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি জহিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আনসারির নামেও বিচ বাইক ব্যবসা রয়েছে।

জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির আরেক সদস্য জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুন্নাহার বাপ্পী তার ছেলের নামে বরাদ্দ নিয়েছেন বিচ বাইক ব্যবসার লাইসেন্স। বাড়ির কাজের ছেলের নামে একটি ফটোগ্রাফি কার্ডও সংগ্রহ করেছেন।

তবে লুৎফুন্নাহার বাপ্পী বলেন, ‘আমার ছেলের নামে একটি বিচ বাইকের জন্য আবেদন করেছি। সেটি এখনও অনুমোদন হয়নি। আর আমার গৃহকর্মীর নামে কোনো ফটোগ্রাফার কার্ড বরাদ্দ নিইনি।’

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সৈকতে অস্থায়ী দোকান দেওয়ার জন্য প্রকৃত হকার যারা জেলা প্রশাসনের পর্যটন ও প্রটোকল শাখা থেকে অনুমতি পেয়েছেন, তাদের অনেকেই স্থানীয় প্রভাবশালীদের আশীর্বাদ না থাকায় দোকান বসাতে পারেননি। অনেকে কথিত সমিতির নেতাদের চাহিদামতো টাকা দিতে না পারায় দোকান বসানোর সুযোগ পাননি।

তেমনই দুইজন কক্সবাজার সদরের পিএমখালীর বাসিন্দা আব্দুল্লাহ ও এমাদুল করিম। এ দুই হকার বলেন, ‘২০১০ সালে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে অস্থায়ী দোকান করার অনুমতি পেয়েছি। প্রতি বছর সেগুলো নবায়ন করে আসছি। কিন্তু এখনও দোকান বসাতে পারিনি।’

এদিকে ঈদের ছুটিতে সুগন্ধা পয়েন্টে প্রভাবশালীরা রাতারাতি নির্মাণ করছিল আরও শতাধিক অবৈধ দোকান। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হলে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তা উচ্ছেদ করা হয়। সৈকতে এই দখল প্রক্রিয়ায় নেপথ্যে থাকা সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহজাহান আলীকে প্রধান করে ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসনের পর্যটন ও প্রটোকল শাখা থেকে সংশ্নিষ্ট ফাইল ও নথিপত্র জব্দ করেন তিনি।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহজাহান আলী বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন উপস্থাপন করব।

এ বিষয়ে বিচ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, সৈকতে হকারদের জন্য নির্ধারিত স্থানে দোকান ও অন্যান্য ব্যবসা পরিচালনায় কার্ড বরাদ্দ নিয়ে কিছু অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অপরদিকে সৈকতে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, বিচ ব্যবস্থাপনা কমিটির অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্ত এবং কমিটি বিলুপ্ত করার দাবিতে ‘আমরা কক্সবাজারবাসী’ নামে একটি সংগঠন আগামী সোমবার মানববন্ধন এবং প্রতিবাদ সমাবেশ আহ্বান করেছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে এ প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে।

সূত্র : মো: অবু তাহের চৌধূরী,দৈনিক সমকাল,কক্সবাজার অফিস

(২৩ জুন প্রকাশিত)

358 ভিউ

Posted ৩:১২ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৩ জুন ২০১৯

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com