কক্সবাংলা ডটকম(৮ ফেব্রুয়ারী) :: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। তবে তার আইনজীবীরা বলেছেন, তারা আপীল করবেন। বিএনপি বলেছে, এ রায়কে তারা আইনী ও রাজনৈতিক উভয়ভাবেই মোকাবিলা করবে।
অনেকের মনেই এ প্রশ্ন উঠতে পারে যে তাহলে খালেদা জিয়াকে আসলে ঠিক কত দিন জেলে থাকতে হতে পারে?
আইনবিদ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক শাহদীন মালিক বলছেন, রায়টা কতটা ঠিক হয়েছে তা বোঝা যাবে উচ্চতর আদালতে আপীল শুরু হলে।
প্রশ্ন হলো: রায়ের সত্যায়িত কপি হাতে পাবার পরই কেবল খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আপীলের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবেন, এবং ততদিন পর্যন্ত খালেদা জিয়া বন্দী থাকবেন।
এই রায়ের কপি পাবার কি কোন সময়সীমা আছে?
শাহদীন মালিক বলেন, কোন সময়সীমা বাঁধা নেই। তবে সার্টিফায়েড কপির আগে টাইপ করা কপি যাকে বলা হয় ট্রু কপি – সেটা হয়তো আইনজীবীরা আগামি সপ্তাহের প্রথম দিকেই পেয়ে যেতে পারেন এমন কথা শোনা গেছে। তাহলে তারা হয়তো আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি নাগাদই আপীল দায়ের করে দেবেন, হয়তো আপীলের সাথেই জামিনের আবেদনও করবেন।
“আইনী প্রক্রিয়ায় যেটা হয়, নারীদের ব্যাপারে, বয়েস বেশি হলে, বা সাজা কম বলে – কারণ এটা যাবজ্জীবন কারাদন্ড নয় এবং পাঁচ বছরের কারাদন্ডকে কম সাজাই বলতে হবে – তাই এসব বিবেচনায় হয়তো আমার সাধারণ জ্ঞানের যেটা ধারণা হয় – জামিন হয়ে যেতে পারে।”
“এক বা দু’সপ্তাহে ছাড়া পেয়ে গেলে এক অর্থে তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন, রাজনৈতিক কর্মকান্ডও শুরু করতে পারবেন।”
“আওয়ামী লীগ নিশ্চয়ই এটা বলবে যে আপীলে নির্দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত মিসেস জিয়া একজন দুর্নীতির দায়ে দোষী ব্যক্তি। কিন্তু বাংলাদেশে সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও দুর্নীতির মামলায় জেল খেটেছেন। তাই বিএনপিকে একটা ধাক্কা সামলাতে হবে, রাজনীতিতে কিছুটা প্রভাব পড়বে, কিন্তু তা খুব বেশি পড়বে এটা মনে হচ্ছে না।”
কিন্তু আরেকটি বড় প্রশ্ন হলো, এর পর খালেদা জিয়া কি এ বছরের শেষে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন?
এ নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
বিএনপির রাজনীতির একজন পর্যবেক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলছেন, খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন কিনা – তার চাইতেও বড় প্রশ্ন হচ্ছে: নির্বাচনের সময় তিনি জেলের ভেতরে থাকবেন না মুক্ত থাকবেন।
আসিফ নজরুলের কথায়, খালেদা জিয়া যদি নির্বাচনে অংশ নিতে না-ও পারেন, তবুও তিনি যদি জামিনে থাকেন এবং প্রচারাভিযানে অংশ নিতে পারেন – তাহলে এই কারাদন্ড বিএনপির জন্য নেতিবাচক না হয়ে বরং ইতিবাচক হতে পারে।
“কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, কোন কারণে যদি বেগম জিয়া জামিন না পান, এবং তার বিরুদ্ধে আরো মামলা রয়েছে সেটাও মনে রাখতে হবে – তিনি যদি ক্যাম্পেইনটা করতে না পারেন বিএনপি পরিস্থিতিটা কতটা কাজে লাগাতে পারবে – সেটা নিয়ে কিছুটা সন্দেহ থাকবে” – বলেন তিনি।
“তাই বেগম জিয়া নির্বাচনের সময় জামিনে মুক্ত থাকবেন কিনা এটার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে” – বলছিলেন অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
বিএনপির পরবর্তী কৌশল ?
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার প্রতিবাদের দু দিনের কর্মসূচী দিয়েছে বিএনপি। কিন্তু দলীয় চেয়ারপার্সনের বিষয়ে দলের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে যাচ্ছে?
জাতীয় নির্বাচনের আগে দলের চেয়ারপার্সনকে কারাগারে পাঠানোর কী প্রভাব পড়বে বিএনপির নির্বাচনী কৌশলে? চলতি বছরের শেষ দিকে এ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নিউজ টুডে’র সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ মনে করেন এই রায়ে খুব বেশি অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়বে না বিএনপি। কারণ তার মতে দলটি যথেষ্ট সময় পেয়েছে এই বিষয়ে পূর্বপ্রস্তুতি নেয়ার।
খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দল কিভাবে চলবে তা নিয়ে গত সপ্তাহে বিএনপির নির্বাহী কমিটির বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে।
বিএনপির জন্য এটি খুবই বড় সঙ্কট হলেও এটি কাটিয়ে উঠতে পারা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, “কারণ ১২ বছর দল ক্ষমতার বাইরে থাকলেও তৃণমূলে কোনো ভাঙন দেখা যায়নি”।
খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়ার প্রেক্ষিতে মি. আহমেদ বলেন জেলখানায় নেতাদের যাওয়া নতুন কিছু না।
তিনি বলেন,” বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ও পরে রাজনৈতিক নেতাদের জেলখানায় নেয়া হয়েছে। জেলখানা থেকে নেতার নির্দেশে দল পরিচালিত হয়। আগে জেল থেকে ছোট কাগজে বার্তা লিখে পাঠানোর রীতি ছিল যাকে ‘চিট’ বলা হোতো। আর বর্তমানে নানারকম প্রযুক্তি রয়েছে যার মাধ্যমে তিনি তাঁর সিদ্ধান্ত নেতাকর্মীদের জানাবেন”।
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপীল করলে তিনি হয়তো জামিন পেয়ে যাবেন বলেও মনে করেন মিস্টার আহমেদ।
মি. আহমেদের ধারণা খালেদা জিয়ার নির্বাচন করার পক্ষেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে উচ্চ আদালত।
তার মতে, রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকার যদি মনে করে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে রাখবে না তাহলে সেটি সরকারের জন্য খুব একটা লাভজনক হবে না।
তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের একজন সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই মামলার রায় দেয়া হয়েছে সরকারকে খুশি করার লক্ষ্যে”।
তিনি জানান রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করবে বিএনপি।
এই রায়ে খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হবে কিনা জানতে চাইলে মি. মিয়া বলেন আইনগতভাবে এই বিষয়ের সমাধান করবে বিএনপি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন এ রায়ে খালেদা জিয়া ন্যায় বিচার পাননি।
তিনি বলেন, “আমরা ক্ষুব্ধ। রায়ের বিরুদ্ধে, আমরা আইনগত পদক্ষেপ অবশ্যই নিবো”।
অন্যদিকে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নেতাকর্মীদের রাস্তায় নেমে এসে শাান্তিপূর্ণ ভাবে আইনের সীমায় থেকে আন্দোলনে নেমে আসার আহবান জানিয়েছেন।
তাৎক্ষনিক প্রেস ব্রিফিং এ তিনি বলেন, “এ রায়ে প্রতিহিংসার বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছে সরকার”।
ওদিকে দলের যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন তারা আদালতে রায়ের কপির জন্য আবেদন করেছেন এবং সেটি পেলে রবিবার বা সোমবারে এ রায়ের বিরুদ্ধ আপীল করবেন।