কক্সবাংলা ডটকম(১২ ফেব্রুয়ারী) :: দুর্নীতির মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ড পাওয়া কক্সবাজারের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির আপিল করে জামিনে মুক্তি পেতে সময় লেগেছিল ১৮ দিন। ঘটনাটি পুরনো হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজার পর আপিল ও জামিন আবেদনের চেষ্টা চলার কারণে বদির বিষয়টি উদাহরণ হিসেবে সামনে এসেছে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পেয়ে কারাগারে গেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তার দণ্ডের আদেশ হওয়ার পর পর আইনজীবীরা আপিল করে জামিন আবেদনের ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন। আর রবিবারের মধ্যে এই আপিল করা আশাও করছিলেন তারা।
কিন্তু আপিল করতে হলে রায়ের সার্টিফাইড কপি লাগবে। মোট ৬৩২ পৃষ্ঠার রায়ের সার্টিফাইড কপি অবশ্য রবিবারের মধ্যে পাওয়া যায়নি।
কাজেই দণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল আর জামিন আবেদন কবে হবে, তার আগ পর্যন্ত তাকে কত দিন কারাগারে থাকতে হবে, এই বিষয়টি নিয়ে তার সমর্থকদের মধ্যে এক ধরনের প্রশ্ন আছে।
আইনজীবীরা বলছেন, এই বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা কঠিন। কারণ, সার্টিফাইড কপি পাওয়ার পর কোন কোন যুক্তিতে আপিল করা হবে, এই বিষয়গুলো আগেই ঠিক করে তা জমা দিতে হবে। কারণ, এর ওপরই নির্ভর করবে আপিলের রায়। কাজেই তাড়াহুড়ো করে ভুল করলে পরে ক্ষতি হবে খালেদা জিয়ারই।
দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় কক্সবাজারে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির তিন বছরের জন্য দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যান গত ২ নভেম্বর। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ও জামিন আবেদন করতে করতে লেগে যায় ১৩ দিন।
১৫ নভেম্বর হাইকোর্টে এই আবেদন করার পর বদির জামিনে মুক্ত হতে লেগে যায় আরও পাঁচ দিন। ২০ নভেম্বর জামিনে কারাগার থেকে বের হন তিনি।
অবশ্য আপিল করে জামিন আবেদন করলেই যে উচ্চ আদালত কাউকে জামিন দেবেন, সেটাও সুনিশ্চিত নয় বলে জানিয়ছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি মামলায় কারাদণ্ড হওয়ার পর হাইকোর্ট থেকে জামিন মঞ্জুর ও জামিন না মঞ্জুর উভয় নজিরই আছে।’
দুদকে সম্পত্তির হিসাব জমা না দেয়ার মামলায় সাভারের রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার তিন বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল হলেও তার জামিনের আবেদনে সায় দেয়নি হাইকোর্ট। অবশ্য সোহেলের বিরুদ্ধে আরও মামলা রয়েছে।
আবার হাইকোর্ট আব্দুর রহমান বদির জামিনের আদেশ দিলেও সেটির বিরুদ্ধে আপিল করেছে দুদক। সংস্থাটির আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানান, আবেদনটি এখন শুনানির জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।
তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ আশা করছেন, খালেদা জিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জামিনে বেগ পেতে হবে না। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘রায়ের সার্টিফাইড কপি পেলেই আমরা আপিল করব। একইসঙ্গে জামিনের জন্য আবেদন করব। আমরা মনে করি তিনি জামিন পাবেন।’
তবে যে মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছে, সেটি ছাড়াও তার বিরুদ্ধে আরও ৩৫টি মামলা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা একেবারেই শেষ পর্যায়ে রয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায়ের তারিখ ঘোষণার পর থেকে তিন দিন যু্ক্তি উপস্থাপন হয়েছে চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায়। আগামী ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় যুক্তি উপস্থাপনের কথা আছে।
বাকি মামলাগুলোর মধ্যে পাঁচটি মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের আদেশ আছে আদালতের। এর মধ্যে কুমিল্লায় বাসের পেট্রল বোমা হামলা চালানোর ঘটনায় করা দুই মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লায় বাসে পেট্রল বোমা হামলার ঘটনায় করা দুই মামলায় গত ২ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে সেখানকার একটি আদালত। এই পরোয়ানাও ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মানচিত্র ও জাতীয় পতাকাকে অবমাননার অভিযোগে ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগে মামলা করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী। গত বছরের ১২ অক্টোবর ওই মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার মহানগর হাকিম নুর নবী। আগামী ১৪ তারিখ এই মামলার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৩ আগস্ট গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন নড়াইলের আদালত। নড়াইলের নড়াগাতী থানাধীন চাপাইল গ্রামের রায়হান ফারুকী বাদী হয়ে ২০১৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর নড়াইল সদর আমলি আদালতে এ মামলা করেন।
এছাড়া ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসনকে গ্রেপ্তারের আদেশ দেয় ঢাকার একটি আদালত। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে এই মামলায় গ্রেপ্তারের বিষয়ে আদালতকে প্রতিবেদন দিতে হবে পুলিশকে।
এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে পুলিশ গ্রেপ্তার দেখালে এই মামলাতেও তাকে জামিন চেয়ে আবেদন করতে হবে বিচারিক আদালতে।
এই মামলাটি ছাড়া বাকি মামলাতেও খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানো সম্ভব। যদিও ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার ইউসুফ আলী ঢাকাটাইমসকে নিশ্চিত করেছেন, পুলিশ তা করবে না।
ইউসুফ আলী বলেন, ‘উনার (খালেদা জিয়া) অধিকাংশ মামলাই বিচারাধীন। সেহেতু উনাকে কোনো মামলায় উনাকে শোন অ্যারেস্ট দেখানো হবে না।’
Posted ৮:০২ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta