বিশেষ প্রতিবেদক,চকরিয়া(১৫ জুন) :: কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়েছে, কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সর্বশেষ কমিটিতে স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সদস্য কুখ্যাত রাজাকার বদর মিয়ার নাতী খালেদ মোহাম্মদ মিথুনকে শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে।
জীবনে কোনদিন আওয়ামীলীগ না করলেও রাতারাতি বড় নেতা বনে গিয়ে ওই ব্যক্তিসহ দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা বিএনপি-জামায়াতের প্রেতাত্মারা নানা ধরণের উস্কানি ও প্রপাগা-া ছড়িয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টিতে লিপ্ত রয়েছেন। এতে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে বড় ধরণের বিপর্যয় দেখা দেওয়ার সম্মুখিন এবং সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত সুযোগ নেবেন বলেও আশঙ্কা করেছেন নেতৃবৃন্দরা।
বুধবার রাতে চকরিয়া পৌরসভার সম্মেলন কক্ষে চকরিয়া উপজেলা, চকরিয়া পৌরসভা, পেকুয়া ও মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দরা এই অভিযোগ করেছেন।
এতে বলা হয়, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই স্থানীয় আওয়ামীলীগকে বহুধা বিভক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে কতিপয় ষড়যন্ত্রকারীরা। এরই অংশ হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে চকরিয়া ও পেকুয়ার গণমানুষের নেতা চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আলমকে নিয়ে নানা ধরণের কুৎসা রটিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে ধারাবাহিক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
এতে কক্সবাজার-১ আসনের চার ইউনিটের আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে এসব ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারী দিয়ে নেতৃবৃন্দরা বলেন, ‘এখন থেকে যদি জাফর আলমসহ আওয়ামীলীগের পরিক্ষিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের নিয়ে নতুন করে অপপ্রচার বা ষড়যন্ত্র করা হয় তাহলে এর বিরুদ্ধে যথাযথ জবাব দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও চকরিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক ছাত্রনেতা এস এম জাহাঙ্গীর আলম বুলবুল অভিযোগ করেন, কোনদিন আওয়ামীলীগের রাজনীতি না করেও খালেদ মোহাম্মদ মিথুন নামের এক ব্যক্তি এখন কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক। রাতারাতি আওয়ামীলীগ নেতা বনে যাওয়া এই মিথুনের দাদা বদর মিয়া ছিলেন একজন বড় মাপের রাজাকার।
এই বদর মিয়ার বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ছয়দফার বই বিক্রির অপরাধে নুরুল ইসলাম নামের তৎকালীন এক আওয়ামীলীগ নেতাকে পিটিয়ে ছয়দফার বইয়ের থলে কেড়ে নেওয়ার। এখন সেই স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সদস্য এবং দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা বিএনপি-জামায়াতের প্রেতাত্মারা আওয়ামীলীগের ত্যাগী, পরিক্ষিত নেতাদের বেঁছে বেঁছে ঘায়েল করার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে। এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত জেলার আরেক নেতাও রয়েছে, যাকে ইতিপূর্বে প্রতারণা মামলায় চট্টগ্রামের একটি আদালত কারাগারে পাঠিয়েছিল।
তাদের উদ্দেশ্য একটাই, সেটি হলো সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তাই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ তথা নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নেতৃবৃন্দরা ষড়যন্ত্রকারীদের সর্তক করে দিয়ে বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে সারাদেশের মতো চকরিয়ায় যে পেট্রোলবোমা, নাশকতাসহ আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাজপথে থেকে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদেরকেই বেঁছে বেঁছে কোনঠাসা করতে মাঠে তৎপর রয়েছেন দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা বিএনপি-জামায়াতের প্রেতাত্মা গুঁটিকয়েক ষড়যন্ত্রকারী। প্রতিনিয়ত কক্সবাজার-১ তথা চকরিয়া ও পেকুয়া আসনের গণমানুষের নেতা চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ জাফর আলমের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে তথ্য সন্ত্রাস করা হচ্ছে। যা চকরিয়া ও পেকুয়ার আওয়ামীলীগের রাজনীতির জন্য কোনদিনই সুখকর খবর নয়।
কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটুর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ জাফর আলম এমএ, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, চকরিয়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর চৌধুরী, মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক ছাত্রনেতা এস এম জাহাঙ্গীর আলম বুলবুল এবং সাধারণ সম্পাদক ও সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মহসিন বাবুল, পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও আওয়ামীলীগ নেতা মো. বশিরুল আইয়ুব। সংবাদ সম্মেলনে উপজেলার সব ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, বিভিন্ন পেশাজীবী, আওয়ামীলীগ ও সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, জাফর আলমের বিরুদ্ধে যারা সাম্প্রতিক সময়ে অপপ্রচারে নেমেছেন তাদেরকে আমরা সতর্ক করছি। ভবিষ্যতে যারা ষড়যন্ত্র করবেন তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে কক্সবাজার-১ আসনটি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেওয়া। এই আসনে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে তার পক্ষেই আমরা একযোগে মাঠে কাজ করে যাব।
চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আলম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা যড়যন্ত্র করেই যাবে, এটি আমার আগে থেকেই জানা রয়েছে। কারণ গতবারের সংসদ নির্বাচনে দলের সভানেত্রী এই আসনে আমাকেই মনোনয়ন দিয়েছিলেন।
কিন্তু এই আসনে আওয়ামীলীগ তথা নৌকার সুনিশ্চিত বিজয় হবে জেনে আওয়ামীলীগের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা ষড়যন্ত্রকারীরা তা হতে দেয়নি। এতে আওয়ামীলীগের এই আসনটি হাতছাড়া হয়ে যায়। ভবিষ্যতে এই আসনে আমাকে মনোনয়ন দিতে পারেন জননেত্রী শেখ হাসিনা, এই আশঙ্কায় বিএনপি-জামায়াতের প্রেতাত্মারা এখন থেকেই নানা ধরণের ষড়যন্ত্র নিয়ে মাঠে নেমেছেন।
