কক্সবাংলা ডটকম(১৫ জুলাই) :: প্রথমবার উড়ানের প্রচেষ্টা ব্যর্থ৷ তবে হাল ছাড়ছেন না ইসরোর বিজ্ঞানীরা৷ চন্দ্রায়ন ২ ফের উড়ানের চেষ্টা করবে, আর তা করা হবে চলতি মাসেই৷ এমনই বলছে সূত্র৷ সূত্রের খবর জুলাই মাসেই চন্দ্রাভিযানে যাত্রা করতে পারে চন্দ্রায়ন-২৷
ইসরোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে গভীর রাতে শ্রীহরিকোটা থেকে চাঁদের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেওয়ার কথা ছিল এই মহাকাশযানের। ৫৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ড আগে এই অভিযান বাতিল করা হয়। জানা গিয়েছে, শেষ মুহূর্তে প্রযুক্তিগত ত্রুটি পাওয়া যায় মহাকাশযানে। আর এরপরেই এই অভিযান স্থগিত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা।
সূত্র জানাচ্ছে, রকেট ও উপগ্রহ নিরাপদেই রয়েছে৷ ইতিমধ্যেই রকেট থেকে তীব্রদাহ্যশীল পদার্থ যেমন তরল হাইড্রোজেন ও তরল অক্সিজেন সরিয়ে ফেলা হয়েছে৷ ফের ত্রুটি সারিয়ে যাতে মহাকাশে পাড়ি দিতে পারে চন্দ্রায়ন ২, তারই তোড়জোড় শুরু হয়েছে নতুন করে৷
ঠিক কোথায় ত্রুটি ছিল?
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ৫৬ মিনিট আগে তরল হাইড্রোজেন এবং তরল অক্সিজেন ভরার কাজ চলছিল রকেটে। আর তা করার সময় একটা ছিদ্র দেখা যায়। আর এরপরেই তড়িঘড়ি বাতিল করা হয় এই অভিযান। কীভাবে এই ছিদ্র এল তা নিয়ে তদন্ত করবেন গবেষকরা। আর তা করতে প্রায় ১০দিন লেগে যেতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। কিন্তু কীভাবে এই রকেটে এই ছিদ্র এল তা ভাবাচ্ছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার বিজ্ঞানীদের।
জানা গিয়েছিল চলতি বছরের ৬ই সেপ্টেম্বর চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করবে এই মহাকাশযান৷ চন্দ্রায়ন ২-এর তিনটি মডিউল৷ ল্যাণ্ডার (বিক্রম), অরবিটার ও রোভার (প্রজ্ঞান)৷ মূলত জলের সন্ধানে এবার চন্দ্রাভিযান ছিল ভারতের৷ এই রোভারে ছিল মোট ১১টি অংশ৷ এর মধ্যে ভারতের ছটি, তিনটি ইউরোপের, ২টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের৷
এই প্রসঙ্গে ডিআরডিও-র ডিরেক্টর অফ পাবলিক ইন্টারফেস রবি গুপ্তা জানান, চন্দ্রায়ন ২-র উড়ান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত একেবারে সঠিক ছিল৷ নয়তো বড়সড় বিপদ হতে পারত৷ এই ধরণের অভিযানে কোনও ঝুঁকি নেওয়া উচিত নয়৷ ইসরোর সিদ্ধান্ত একেবারে যথাযথ ও সময়োপযোগী৷
ইসরো আগে জানিয়েছিল চন্দ্রায়ন ২ উতক্ষেপন করা হবে GSLV Mk II রকেট থেকে৷ এই স্পেসক্র্যাফ্টের ওজন ৩ হাজার ২৯০ কেজি৷ ১৪ দিন এই যান চাঁদে কাটাতে পারবে৷ চন্দ্রপৃষ্ঠে একাধিক পরীক্ষা চালাবে এই চন্দ্রযান৷ ৬ চাকার একটি রোভার চন্দ্রপৃষ্ঠে ঘুরে বেড়াবে৷ চন্দ্রপৃষ্ঠকে এটি পর্যবেক্ষন করবে ও ডেটা পাঠাবে পৃথিবীতে৷
চন্দ্রযান-১ নামের মহাকাশ যান ব্যবহার করে ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো চাঁদে অভিযানের প্রচেষ্টা চালায় ভারত। ওই মহাকাশযানটি চাঁদের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করলেও চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করেনি। তবে ১৫ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে চন্দ্রযান-২ এর নতুন অভিযানে চাঁদের পৃষ্ঠদেশেই মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছে ভারত। এর মাধ্যমে চন্দ্রপৃষ্ঠের পানি, খনিজ ও পাথরের গঠন বিষয়ক তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করবে দেশটি। এই প্রচেষ্টা সফল হলে চাঁদের পৃষ্ঠদেশে মহাকাশযান পাঠানো চতুর্থ দেশ হবে ভারত। এর আগে একই ধরনের অভিযানে সফল হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র,সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীন।
ভারতের মহাকাশ সংস্থার (আইএসআরও) প্রধান কে সিভান বলেছেন,নতুন এই অভিযানটি তাদের সংস্থার নেওয়া সবচেয়ে জটিল মহাকাশ অভিযান। সেপ্টেম্বর নাগাদ এটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুর পৃষ্ঠে অবতরণের কথা রয়েছে। সফলতা পেলে ওই অঞ্চলে এটিই হবে প্রথম কোনও অভিযান।
চন্দ্রযান-২ মহাকাশ যান চাঁদে পাঠাতে নিজেদের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট জিওসিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল মার্ক-৩ (জিএসএলভি এমকে-৩) ব্যবহার করছে ভারত। চন্দ্রযান-২ মহাকাশযানটির ওজন দুই হাজার ৩৭৯ কেজি। এর মূল অংশ তিনটি- অরবিটার,বিক্রম নামের একটি ল্যান্ডার এবং রোভার প্রজ্ঞান। উৎক্ষেপণ সফল হলে ৩ লাখ ৪৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া শুরু করবে চন্দ্রযান-২। ৫৪ দিন পর এটি চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
Posted ৮:১৫ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৫ জুলাই ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta