কক্সবাংলা ডটকম(২৩ আগস্ট) :: মহাকাশ বিজ্ঞানে নতুন ইতিহাস ভারতের ৷ নির্দিষ্ট সময়েই চাঁদের বুকে নামল চন্দ্রযান-৩ ৷ চাঁদের দক্ষিণ মেরু এখনও সবার কাছেই অজানা। পৃথিবীর আর কোনও দেশ সেখানে পৌঁছতে পারেনি। সেখানেই পৌঁছে নতুন কীর্তি গড়ল ভারত। তৈরি হল ইতিহাস ৷
সম্প্রতি চন্দ্রাভিযানে গিয়ে রাশিয়ার লুনা-২৫ ভেঙে পড়েছে। কিন্তু ইতিহাস গড়ল ভারতের চন্দ্রযান-৩।
ইসরো’র প্রধান এস সোমনাথ বলেছেন, আমরা চাঁদের নরম মাটিতে অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছি। ভারত এখন চাঁদে রয়েছে।
ইসরো ৫টি ২০ মিনিট থেকে লাইভ সম্প্রচার আরম্ভ করে। অবতরণের প্রক্রিয়াটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে ইসরোর ইউটিউব চ্য়ানেল ও ফেসবুক পেজে।
৫টা ৪৭ মিনিট থেকে ৬ টা বেজে ৪ মিনিট পর্যন্ত কঠিন পর্যায়টি হেসে-খেলেই উতরে গিয়েছে চন্দ্রযান-৩। ১৫ মিনিটের এই পর্যায়টি ছিল সবথেকে আতঙ্কের। তবে সেই আতঙ্কের মেঘ সরেছে। ঘড়ির কাঁটায় যখন ৬টা ৪ ঠিক তখনই তৈরি হল সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
হাসতে হাসতে চাঁদের বুকে বীরদর্পে নেমে পড়ল চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। গতি কমিয়ে নামানো হয় ল্যান্ডার ‘বিক্রম’-কে। আর এই মিশনের মাধ্যমেই বিশ্বের দরবার ভারতের মহাকাশ গবেষণার অগ্রগতি আরও জোরদার ভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হল।
আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ‘বিক্রম’-এর পেটের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসবে রোভার ‘প্রজ্ঞান’। চাঁদের বুকে ঘুরে-বেরিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে সে। বিশ্বের দরবারে তুলে ধরবে নয়া তথ্য।
স্বয়ংক্রিয় ভাবে কাজ করেছে ল্যান্ডারের মধ্যেকার যন্ত্রপাতিগুলি। চাঁদের মাটিতে খানাখন্দ, পাথর ইত্যাদি এড়িয়ে অবতরণের নিরাপদ স্থান খুঁজে বের করেছে বিক্রমের ক্যামেরা এবং সেন্সর। তার পর যথাস্থানে পাখির পালকের মতো অবতরণ করল।
৩০ কিলোমিটার উচ্চতা থেকে চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণে ‘বিক্রম’-এর সময় লেগেছে মোটামুটি ১৯ মিনিট। এই ১৯ মিনিটে ধাপে ধাপে তার গতি এবং উচ্চতা কমানো হয়েছে সেটির। এই পর্যায়ে কাজ করেছে একাধিক ক্যামেরা এবং সেন্সর।
বুধবার সকাল থেকে দেশের নানা প্রান্তে এই অভিযানের সাফল্য কামনা করে যাগযজ্ঞ হয়েছে। কেউ পড়ছেন নমাজ, কেউ আবার বিশেষ পুজোর আয়োজন করেছেন। প্রার্থনা একটাই, চার বছর আগের ব্যর্থতার গ্লানি এবার ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ব্রিক্স সম্মেলনে যোগ দিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছেন। বুধবার সেখান থেকেই তিনি ‘বিক্রম’-এর অবতরণ প্রত্যক্ষ করেন। ইসরোর সরাসরি সম্প্রচারে চোখ রাখেন মোদী।
এদিন ভারতের চন্দ্রযান চাঁদের মাটি ছুঁতেই জাতীয় পতাকা নাড়তে শুরু করেন। শুধু তাই নয়, এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত গবেষককে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ভারতের এই অভিযান চাঁদ নিয়ে থাকা সমস্ত মিথ ভেঙে দেবে। শুধু তাই নয়, আগামীদিনে চাঁদ নিয়ে আরও নানা তথ্য সামনে আসছে বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আরও বলেন, ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিতে হয় কীভাবে সফল হওয়া যায়। এই মুহূর্তে গোটা দেশজুড়ে শুরু হয়েছে উচ্ছ্বাস। বিভিন্ন জায়গায় উৎসবে শুরু হয়েছে। সকাল থেকেই চন্দ্রায়ন তিনের সফলতা কামনায় গোটা দেশজুড়ে ছিল চাপা টেনশন। কোথাও চলছিল পুজো অর্চনা তো কোথাও চলছিল বিশেষ প্রার্থনা।
চাঁদের দক্ষিণ মেরু এখনও পর্যন্ত অনাবিষ্কৃতই ছিল। পৃথিবীর আর কোনও দেশ সেখানে পৌঁছতে পারে। আর সেখানেই প্রথমবার পা পড়ল ভারতের। চাঁদে সফল ভাবে মহাকাশযান অবতরণ করানো দেশের তালিকায় চতুর্থ হিসাবে নাম তুলে নিল আমাদের দেশ। চাঁদের দক্ষিণ মেরু আবিষ্কারের কৃতিত্বের পালক জুড়ল ইসরোর মুকুটে।
প্রায় একই সময়ে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের জন্য লুনা-২৫ নামের মহাকাশযান পাঠিয়েছিল রাশিয়া। তবে রাশিয়ার মহাকাশযানটি গত শনিবার চাঁদে বিধ্বস্ত হয়। এর মধ্য দিয়ে ৪৭ বছরের মধ্যে রাশিয়ার প্রথম চন্দ্রাভিযান ব্যর্থ হয়।
২০১৯ সালে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে অবতরণের উদ্দেশ্যে চন্দ্রযান-২ পাঠিয়েছিল ভারত। কিন্তু অভিযানটি ব্যর্থ হয়।
গত ১৪ জুলাই ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশকেন্দ্র থেকে চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপণ করা হয়। চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডারের নাম ‘বিক্রম’, রোভারের নাম ‘প্রজ্ঞান’। ল্যান্ডারটি উচ্চতায় ২ মিটারের মতো, ওজন ১ হাজার ৭০০ কেজির বেশি। আকারে ছোট রোভারের ওজন ২৬ কেজি মাত্র। এই রোভারই চাঁদের বুকে ঘুরে ঘুরে বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালাবে।
Posted ৭:৫৬ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৩ আগস্ট ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta