চাঁদের দেশে পাড়ি দিল ভারতের চন্দ্রযান-২ : মিলবে কি প্রাণের খোঁজ ?
সোমবার, ২২ জুলাই ২০১৯
200 ভিউ
কক্সবাংলা ডটকম(২২ জুলাই) :: প্রতীক্ষা শেষ। চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা করল চন্দ্রযান-২। দৈত্যাকার রকেটটি অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে সোমবার দুপুর ২.৪৩ মিনিটে আকাশে উড়ল। এক সপ্তাহ আগেই ছাড়ার কথা ছিল এই যানটির। ঠিক ৫৬ মিনিট আগে যাত্রা স্থগিত করা হয়। কিন্তু এবার সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হল। ইসরোর কন্ট্রোল রুম থেকে দেখা গেল রকেটটি ক্রমে গতি বাড়িয়ে উড়ে চলেছে আকাশপথে। শক্তিশালী ৬৪০ টনের ‘বাহুবলী’ রকেট দ্রুত মহাকাশে পৌঁছবে। জিএসএলভি মার্ক ৩ ইসরোর সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী রকেট। ৪৪ মিটার লম্বা এই রকেটটি একটি ১৫ তলার বাড়ির সমান উঁচু। রবিবার ৬.৪৩ মিনিট থেকে ২০ ঘণ্টার কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে যায়। ১০০০ কোটি টাকার মিশন এই চন্দ্রযান-২।
উৎক্ষেপণের মিনিটখানেকের মধ্যেই রকেট চন্দ্রযান-২-কে পৃথিবীর কক্ষপথে পৌঁছে দেয়। আর তার সঙ্গে সঙ্গেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে কন্ট্রোল রুম। মিশনের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত বিজ্ঞানীরা একে অপরকে অভিনন্দন জানাতে থাকেন।
ইসরোর চেয়ারম্যান কে সিভান বলেন, ‘‘আমি অত্যন্ত খুশি এটা ঘোষণা করতে পেরে যে, জিএসএলভি মার্ক-৩ কক্ষপথে চন্দ্রযান-২-কে পৌঁছে দিয়েছে। ভারতের এক ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু হল। আমরা একটা গুরুতর যান্ত্রিক ত্রুটি সারাতে পেরেছি। যার ফলে সাফল্যের সঙ্গে প্রত্যাবর্তন ঘটাল ইসরো।” একথা যখন বলছিলেন তিনি, তখন তাঁকে ঘিরে রেখেছিলেন আপ্লুত বিজ্ঞানীরা।
এই মিশন সফল হলে আমেরিকা, রাশিয়া ও চিনের পরে চাঁদে সফল অবতরণের ক্ষেত্রে ভারত চতুর্থ দেশ হবে। রকেটটি মহাকাশে পাড়ি দিল একটি অরবিটার, ‘বিক্রম’ নামের একটি ল্যান্ডার ও ‘প্রজ্ঞান’ নামের মুন রোভারকে সঙ্গে নিয়ে।
গত সোমবার উৎক্ষেপণের সময়ের ৫৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ড আগে যাত্রা স্থগিত হয় চন্দ্রযানের। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এক বর্ষীয়ান ইসরো আধিকারিক তখন NDTV-কে জানিয়েছিলেন, ‘‘সমস্যাটি গুরুতর ছিল। কিন্তু সহজেই সমাধান করা গিয়েছে। সৌভাগ্যবশত আমরা ত্রুটিটা ধরতে পেরেছিলাম। সতর্কতা, প্রার্থনা এবং একশো কোটি ভারতবাসীর শুভকামনায় মিশনটি ব্যর্থ হতে হতে বেঁচেছে।”
ইসরোর চেয়ারম্যান কে সিভান চন্দ্রযান-২কে উল্লেখ করেছেন ‘‘ইসরোর সবচেয়ে জটিল মিশন” বলে।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার থেকে ২০ ভাগ কম খরচে ইসরো চন্দ্রাভিযানের পরিকল্পনা করেছে। ১০০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে এই মিশন বাবদ, যা সাম্প্রতিক হলিউড ব্লকবাস্টার (অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ড গেম) তৈরির থেকেও কম!
চন্দ্রযান-২ সম্পর্কে কে সিভান জানাচ্ছেন, চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের পরে চাঁদের মাটিতে প্রাকৃতিক সম্পদের সন্ধান করবে সেটি। খুঁজে দেখবে চাঁদে জলের অস্তিত্ব। এবং অবশ্যই ‘হাই রেজলিউশন’ ছবি তুলে আনবে।
উল্লখ্য, গত সোমবার অভিযানের এক ঘণ্টা আগে প্রযুক্তিগত ত্রুটির জেরে স্থগিত রাখা হয় চন্দ্রযান-২ অভিযান। সূত্র মারফৎ জানা যায়, GSLV-MkIII রকেটে জ্বালানি ভরার সময় গোলযোগ দেখা যায়। রকেটে তরল হাইড্রোজেন ভরার সময় ত্রুটি দেখা যায় বলে খবর। উল্লেখ্য, ইসরোর তৈরি এই রকেট অত্যন্ত শক্তিশালী। চন্দ্রযান ২-এর অভিযান ঘিরে রবিবার সকাল থেকেই সাজো সাজো রব ছিল শ্রীহরিকোটায়। সন্ধের পর থেকে রীতিমতো কাউন্টডাউন শুরু হয়েছিল। চন্দ্রযান ২-এর অভিযানের দিকে তাকিয়ে ছিল গোটা দেশ। শেষ মুহূর্তে তা বাতিল হওয়ায় হতাশ হয় সব মহল। এদিন ফের চন্দ্রাভিযানের খবর মেলায় নতুন করে কাউন্টডাউন শুরুর অপেক্ষায় গোটা দেশ।
চাঁদে জলের সন্ধান প্রথম দিয়েছিল ভারত, এবার কি মিলবে প্রাণের খোঁজ
চাঁদের কালো অংশ রয়েছে বরফ। আর সেই খোঁজ প্রথম পেয়েছিল ভারত। বছর দশেক আগে ভারতের পাঠানো মহাকাশযান চন্দ্রায়ন ১-এর তোলা ছবি থেকেই এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে পরে জানান নাসার বিজ্ঞানীরা। এবার কিসের সন্ধান পাওয়া যাবে, সেই প্রশ্নই ঘুরেফিরে আসছে দেশবাসীর মনে।
চাঁদের পৃষ্ঠে বেশ কিছুটা এলাকা জুড়ে রয়েছে সেই বরফ। যা থেকে আগামিদিনে জল তৈরি হওয়ার আশাও রয়েছে। সেই জলের উপস্থিতিতে হয়ত একদিন চাঁদকেও বাসযোগ্য করার পরিকল্পনা নেওয়া হবে। এই বরফের রেশ ধরে চাঁদের পৃষ্ঠদেশের তলায় যদি কোনোভাবে জলের সন্ধান মেলে তাহলে, চন্দ্র অভিযান সহজ হবে মানুষের পক্ষে। নাসার গবেষণা বলছে, বহুকাল আগে থেকেই ওই বরফ রয়েছে চাঁদের অন্ধকার অংশে। আর সেই তথ্য প্রথম এনে দিয়েছিল ভারত।
চাঁদের দক্ষিণ অংশে যে বরফ রয়েছে সেটা একই জায়গায় পুঞ্জীভূত হয়ে আছে। আর উত্তর অংশে থাকা বরফ অনেকটা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। চাঁদের ওই অন্ধকার অংশে তাপমাত্রা কখনই মাইনাস ১৫৬ ডিগ্রির উপরে ওঠে না। ওই অঞ্চলে সূর্যের আলো কখনই স্পর্শ করতে পারে না। এর আগেও বরফের উপস্থিতির ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল, তবে এবার বিষয়টা আরও স্পষ্ট হল।
তবে ভারতের এই স্পেসক্রাফট চন্দ্রায়ন ১ দীর্ঘদিন ধরেই নানা ধরনের যান্ত্রিক সমস্যায় ভুগছে। ২০০৯-এর ২৮ অগাস্টের পর থেকে ওই মহাকাশযানের রেডিও সিগন্যাল আসাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
তবে কিছুদিন আগে, নাসার বিশেষ রাডারে ধরা পড়ে চন্দ্রায়ন-১-এর সেই ছবি। আর সেই মহাকাশযান এখন নিশ্চিন্তে চাঁদের চারপাশে ঘুরে-বেড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। ২০০৮ সালের ২২ অক্টোবর এটি মহাকাশে পাঠানো হয়। জানা গিয়েছে, এটি এখনও চাঁদের ২০০ কিলোমিটার দূর দিয়ে ঘুরছে। গত মাচর্ষ মাসে এমনটাই জানিয়েছিল, নাসার জেট প্রপালসান ল্যাবরেটরির রাডার সায়েন্টিস্ট।
এবার চন্দ্রায়ন-২ চাঁদে পাঠাচ্ছে ইসরো। হয়ত না কোনও একদিন এই যান ই বিশ্বের কাছে নিয়ে আসবে চাঁদে লুকিয়ে থাকা কোনও প্রাণের খবর। আপাতত আশায় বুক বাঁধছে সবাই।