শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

চাইলাম প্রতিরোধ গড়তে, কিন্তু জিয়া বললেন ‘বার্মা যাও’

শনিবার, ২৪ মার্চ ২০১৮
283 ভিউ
চাইলাম প্রতিরোধ গড়তে, কিন্তু জিয়া বললেন ‘বার্মা যাও’

নজরুল ইসলাম চৌধুরী(২৪ মার্চ) :: ১৯৭১ সাল। সবেমাত্র ছাত্ররাজনীতি ছেড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছি—কক্সবাজার আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক পদে। মার্চের শুরু থেকেই দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। আমরা তখন চট্টগ্রাম  জেলা আওয়ামী লীগ নেতা এম আর সিদ্দিকী, আতাউর রহমান কায়সার, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আকতারুজ্জামান বাবু, এম এ হান্নানদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলি; তাঁদের কাছ থেকে নির্দেশ পাই।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর আমরা একটি দিকনির্দেশনা পাই, বুঝে নিই দেশ স্বাধীনতার দিকে যাচ্ছে। ১০ মার্চ আমরা কক্সবাজারে অস্ত্র প্রশিক্ষণের ক্যাম্প চালু করি। ২৩ মার্চ পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবসে আমরা কক্সবাজার জেলার সর্বত্র, মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করি। এমএনএ নুর আহমেদ, এমপিএ জহিরুল ইসলাম, ওসমান সরোয়ারসহ আমরা এলাকায় এলাকায় জনসভা করে সবাইকে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য প্রস্তুত করতে থাকি।

কক্সবাজারে ইপিআরের একটি ক্যাম্প ছিল। সেখানে ওয়্যারলেস অপারেটর ছিলেন জোনাব আলী। তিনি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। ১৭ মার্চ জোনাব আলী সংগ্রাম পরিষদের অফিসে এসে বলেন, হালি শহরে ইপিআরের দায়িত্বরত মেজর রফিকুল ইসলাম তাঁকে বলেছেন, সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করতে। এ ক্যাম্পে একজন সুবেদার মেজরসহ ২৫ জন পাকিস্তানি ইপিআর ছিল। ২৫ মার্চ রাত সাড়ে ১২টার দিকে জোনাব আলী আমাদের জানান, মেজর রফিকুল ইসলাম তাঁকে সিগন্যাল পাঠিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন।

মেজর রফিকুল ইসলাম জোনাব আলীকে বলেছেন, বাঙালি ইপিআরদের নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা জামালউদ্দিন আহমেদ ফোন করে আমাকে ও কামাল চৌধুরীকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার কথা জানান। আমরা রাতেই আওয়ামী লীগ নেতা মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে কক্সবাজার ইপিআর ক্যাম্প ঘেরাও করে পাকিস্তানিদের বন্দি করি। রাতেই কক্সবাজার বন বিভাগের অস্ত্র ভাণ্ডার লুট করে অস্ত্রগুলো কবজায় নিই।

সকাল ৮টার দিকে হাজার হাজার লোক সংগ্রাম পরিষদের অফিসে আসতে থাকে। এর মধ্যে কক্সবাজার ও সীমান্ত এলাকায় দায়িত্বরত প্রায় ২০০ বাঙালি ইপিআর কক্সবাজারে জড়ো হন। সাড়ে ৮টার দিকে মেজর রফিকুল ইসলামের কাছ থেকে খবর পাই তিনি ইপিআরদের দ্রুত কালুরঘাট যেতে বলেছেন, সেখানে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে তাদের যুদ্ধ চলছে। ইপিআর সদস্যরা দ্রুত কালুরঘাট রওনা দেন।

কালুরঘাট যুদ্ধে ক্যাপ্টেন হারুন (পরবর্তীকালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল) ও লেফটেন্যান্ট শমসের মবিন চৌধুরীসহ আরো বেশ কিছু সৈনিক আহত হন। তাঁদের কক্সবাজার নিয়ে আসা হয়। ক্যাপ্টেন হারুনকে ভর্তি করা হয় ডোলাহাজারা খ্রিস্টান হাসপাতালে। অন্যদের উখিয়া নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ক্যাপ্টেন হারুন পরে আমাদের সঙ্গে বার্মা বন্দি ছিলেন।

ইতিমধ্যে মেজর জিয়াউর রহমান বেতারে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পড়ে পরিচিতি পেয়েছেন। ২৮ মার্চ তিনি তাঁর দলবল নিয়ে কক্সবাজার এসে রাতে আমাদের সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আমরা তাঁকে কক্সবাজারে একটি প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরির অনুরোধ করি। বৈঠকে তিনি এমএনএ নুর আহমেদ, ড. সামসুদ্দিনসহ আমাদের বার্মায় গিয়ে আশ্রয় নিতে বলেন। জিয়াউর রহমান আমাদের আরো বললেন, তাঁর সঙ্গে থাকা সৈনিকদের হাতে কোনো টাকা-পয়সা নেই। এটার ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন। তখন কক্সবাজার মহকুমা ট্রেজারির দায়িত্বে ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট আবদুস শহিদ।

তিনি বললেন, যাঁদের বেতন দেওয়া হবে তাঁদের নাম ও টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে তালিকা দিন। তালিকা করে আমরা সংগ্রাম পরিষদের নেতারা তাতে স্বাক্ষর করলে আবদুস শহিদ অষ্টম ইস্ট বেঙ্গলের সবাইকে বেতন দিলেন। টাকা তোলা হলো ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান থেকে।

মেজর জিয়া ২৯ মার্চ মেজর মীর শওকতকে কক্সবাজার রেখে আমাদের বলে গেলেন, প্রশিক্ষণ চালিয়ে যান, মীর শওকত আপনাদের প্রশিক্ষণ দেবেন। আরো বললেন, বান্দরবান হয়ে আপনারা সহজে ভারতে পৌঁছাতে পারেন কি না—আমি সে রুট খুঁজতে যাচ্ছি। পরে আমি এসে আপনাদের নিয়ে যাব। শুনলাম তিনি বান্দরবানের রুট খুঁজে আমাদের নিয়ে যাবেন। পরে জানতে পাই তিনি চট্টগ্রামের দিকে চলে গেছেন। মেজর জিয়া আর আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। মীর শওকত প্রশিক্ষণ দিতে থাকলেন। হঠাৎ ৪ এপ্রিল ভোরে গিয়ে শুনি রাতে মীর শওকতও তাঁর দলবল নিয়ে চলে গেছেন। আমরা হতভম্ব হয়ে পড়ি। কক্সবাজারের সবাই তখন হতাশ। প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ল। সবাই চিন্তিত।

৭ এপ্রিল কক্সবাজার প্রবেশ করল পাকিস্তানি সেনারা। বার্মা যাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো পথ খোলা থাকল না। এমএনএ নুর আহমেদ, এমপিএ জহিরুল ইসলাম, ওসমান সরোয়ার, আওয়ামী লীগ নেতা ডা. সামসুদ্দিনসহ কয়েক শ নেতাকর্মী বামায় গিয়ে আশ্রয় নিলাম।

আমাদের মংডু এলাকায় ক্যাম্প করে নজরবন্দি করে রাখা হলো। পাহারা দিত নাসাকা বাহিনী। মাঝে মধ্যে আমাদের চাল, ডাল, মরিচ দিয়ে যেত—যা চাহিদার তুলনায় ছিল খুবই অপ্রতুল। আমরা সঙ্গে থাকা অতিরিক্ত কাপড় রোহিঙ্গা মুসলমানদের কাছে বিক্রি করে খাদ্য কিনতাম। ক্যাম্পের বাইরে যেতে দিত না। কখনো কখনো চার ঘণ্টার জন্য বাইরে যেতে একজনের অনুমোদন মিলত বাজারে যাওয়ার জন্য। নির্ধারিত সময় পরে এলে শাস্তি হতো পাহাড় থেকে লাকড়ি কেটে নাসাকা বাহিনীর কাছে জমা দেওয়া। আবার প্রকাশ্যে বাইরেও যেতে পারতাম না রোহিঙ্গা মুসলমানদের ভয়ে, তারা রাস্তাঘাটে আমাদের দেখলে মারপিট করত, কাছে টাকা পয়সা থাকলে ছিনিয়ে নিত।

৩ ডিসেম্বর কক্সবাজার এয়ারপোর্টের কাছে পাকিস্তানি সেনারা শান্তি কমিটির নেতাদের নিয়ে বৈঠক করছিল। বৈঠক চলাকালে ভারতীয় বিমানের বোমা বর্ষণে কক্সবাজার শান্তি কমিটির সভাপতি নিহত হন। ভয়ে এরাও বার্মা গিয়ে আশ্রয় নেয়। এ ঘটনার পর নাসাকা বাহিনীর অচরণ পাল্টে যায়।

১১ ডিসেম্বর জাহাজযোগে প্রায় ২০ হাজার ভারতীয় সেনা কক্সবাজারে পৌঁছায়। এদিন নাসাকা বাহিনীর পাহারা ঢিলেঢালা হয়ে পড়ে। আমরা প্রায় মুক্ত হয়ে যাই। ইনানী বিচ হয়ে কক্সবাজার চলে আসি।

লেখক-নজরুল ইসলাম চৌধুরী : সাবেক ছাত্রনেতা। কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি)

283 ভিউ

Posted ২:৫১ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৪ মার্চ ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com