রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

তারল্য সংকটে ভুগছে এস আলম গ্রুপের ৫ ব্যাংক

বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট ২০২৩
47 ভিউ
তারল্য সংকটে ভুগছে এস আলম গ্রুপের ৫ ব্যাংক

কক্সবাংলা ডটকম :: নানান অনিয়মের কারণে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে ভুগছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাহিদামতো নগদ জমা (সিআরআর) রাখতে পারছে না। এ জন্য প্রতিনিয়ত ব্যাংকগুলোর জরিমানা গুনতে হচ্ছে।

অবশ্য তারল্য সংকটে ভুগলেও জুন শেষে চলতি বছরের প্রথমার্ধে পরিচালন মুনাফা বেড়েছে বলে দাবি করেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড এবং চতুর্থ প্রজন্মের ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড।

যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআরআর রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে সেখানে মুনাফা দেখানো কিভাবে সম্ভব হলো সে প্রশ্নও আর্থিকখাত সংশ্লিষ্টদের।

সূত্র মতে, দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও সুশাসনের অভাবে আর্থিক সক্ষমতায় দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো। আগ্রাসী ব্যাংকিং ও ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণের কারণে অধিকাংশ ইসলামি ব্যাংকের নগদ প্রবাহ দীর্ঘদিন ধরে ঋণাত্মক। যে কারণে নগদ জমা সংরক্ষণেও (সিআরআর) বারবার ব্যার্থ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। যে কারণে এবার এস আলম গ্রুপের পাচ ইসলামী ব্যাংককে গুণতে হচ্ছে জরিমানা।

সিআরআর সংরক্ষণে ব্যার্থ ৬টি ইসলামি ব্যাংককে বিধিবদ্ধ জমা সংরক্ষণে (সিআরআর) ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যমাত্রা বেধে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ৩০ মে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের নির্দেশক্রমে এই লক্ষ্য পূরণে ব্যার্থ হলে সাড়ে ৪ শতাংশ হারে দ-সুদ আরোপের সিদ্ধান্তও জানিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন ডিপার্টমেন্ট। এরপরও একটি ব্যাংক বাদে বাকি ৫টি ব্যাংকই ৩০ জুনে এই লক্ষ্য পূরণে ব্যার্থ হয়েছে।

ব্যাংকগুলো হচ্ছে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের কাছে জমা দেয়া এক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করেছে অফসাইট সুপারভিশন ডিপার্টমেন্টের (ডস) বিধিবদ্ধ জমা সংরক্ষণ শাখা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ১৯৭২ এর ধারা ৩৬ মোতাবেক বাংলাদেশে কার্যরত তফসিলি ব্যাংক কর্তৃক বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে নিারির্ধত পরিমাণে নগদ জমা (সিআরআর) সংরক্ষণ করতে হয়। এক্ষেত্রে, সিআরআর সংরক্ষণে ব্যর্থতার জন্য ঘাটতির পরিমাণের ওপর দৈনিক, দ্বি-সাপ্তাহিক এবং অব্যাহতভাবে নগদ ঘাটতির পরিমাণের ওপর পৃথকভাবে দ-সুদ আরোপের বিধান রয়েছে।

বর্তমানে তারল্য চাপে থাকা শরিয়াহ্ ব্যাংকগুলোর মোট তলবি ও মেয়াদি দায়ের ন্যূনতম ৪ শতাংশ হারে শুধুমাত্র দৈনিক ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে সিআরআর সংরক্ষণ করার এবং সংরক্ষণে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে ব্যাংক রেটের চেয়ে ৫০ বেসিস পয়েন্ট অধিক হারে (৪ দশমিক ৫০ শতাংশ) দ-সুদ আরোপ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় গত ৩০ মে। অর্থাৎ, ব্যাংকগুলোকে প্রতিদিন ৪ শতাংশ হারে সিআরআর-সংরক্ষণ করতে হবে এবং চলতি হিসাবে রক্ষিত স্থিতি যেসকল দিনে উল্লিখিত ৪ শতাংশের কম হবে সেসকল দিনে ঘাটতির উপর ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হারে দ-সুদ আরোপ করা হবে।

এছাড়া, ২০২৩ সালের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রতি মাসে বিদ্যমান সিআরআর ঘাটতির ১৫ শতাংশ করে এবং অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ ৩০ নভেম্বর ২০২৩ এর মধ্যে পূরণ করার এবং বর্ণিত মাসভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হলে ঘাটতির সমপরিমাণ অর্থের উপর ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে অতিরিক্ত দ-সুদ আরোপ করার বিষয়েও নীতিমালা অনুমোদিত হয়।

এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংককে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

ব্যাংকগুলোর সিআরআর সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৩০ জুন আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক বাদে অন্য ৫টি ব্যাংকই লক্ষমাত্রা অনুযায়ী ঘাটতির পরিমাণ কমাতে ব্যর্থ হয়েছে।

৩০ জুনে ইসলামী ব্যাংকের ঘটতির সীমা ছিল ৪ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা। কিন্তু ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৬৯ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ৬১৮ কোটি টাকা ঘাটতি থাকায় ব্যাংকটিকে দ-সুদ বা জরিমানা দিতে হচ্ছে ৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সিআরআর সংরক্ষণে ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৯১ কোটি টাকা পিছিয়ে থাকায় দ-সুদ দিতে হচ্ছে ৬৭ লাখ টাকা। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ৩৭৫ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৪১৯ কোটি টাকা ঘাটতি থাকায় দ-সুদ দিতে হচ্ছে ২০ লাখ টাকা। ইউনিয়ন ব্যাংকে ৬০৪ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৬৮৩ কোটি টাকা ঘাটতি থাকায় জরিমানা দিতে হচ্ছে ৯৭ লাখ টাকা। একইভাবে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকে ৭৯৯ কোটি টাকা সিআরআর ঘাটতি থাকায় জরিমানা দিতে হচ্ছে ৮৪ লাখ টাকা।

সূত্র মতে, ক্যাশ রিজার্ভ রিকোয়ারমেন্ট (সিআরআর) হলো, কোনো একটি দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত একটি শতাংশ, যা মোট মেয়াদি ও তলবি বা চাহিবামাত্র দায়ের সমন্বয়ে গঠিত মোট আমানতের বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংরক্ষণ করতে হয়।

এদিকে তারল্য সংকট ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআরআর রাখতে ব্যর্থ হলেও পরিচালন মুনাফা বাড়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে আর্থিকখাত সংশ্লিষ্টরা। জুন শেষে চলতি বছরের প্রথমার্ধে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা কিছুটা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা।

এদিকে ২০২২ সালের প্রথমার্ধে ১৬৯ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছিল সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল)। চলতি বছরের প্রথমার্ধে ব্যাংকটি প্রায় ১৮০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা পেয়েছে বলে জানা গেছে।

এসআইবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাফর আলম বলেছেন, গত বছরের প্রথমার্ধের তুলনায় চলতি বছর আমাদের পরিচালন মুনাফা প্রায় ৭ শতাংশ বেড়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হারও কিছুটা কমেছে।

এদিকে ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংক ভালো পরিচালন মুনাফা পেয়েছে বলে দাবি করেছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২৫ কোটি টাকা। ২০২২ সালের একই সময়ে ১৭২ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফায় ছিল ব্যাংকটি।

ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম মোকাম্মেল হক চৌধুরী ওই সময়ে জানান, চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের অবস্থান শীর্ষে। ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৩ শতাংশে সীমাবদ্ধ। অন্যান্য সূচকেও ইউনিয়ন ব্যাংকের অবস্থান অত্যন্ত সুদৃঢ়। চলতি বছরের প্রথমার্ধে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। মুনাফার এ প্রবৃদ্ধি বছর শেষে আরো বাড়বে।

আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংকগুলো গত ডিসেম্বর থেকে থেকে তারল্য সংকটে ভুগছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাহিদামতো সিআরআর রাখতে পারছে না। এ জন্য প্রতিনিয়ত ব্যাংকগুলো জরিমানা গুনছে। এ অবস্থায় মাঝেমধ্যে টাকা ধার দিয়ে ব্যাংকটির লেনদেন কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর তাদের হিসাব বলছে মুনাফায় প্রবৃদ্ধি। বিষয়টিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ নজর দেয়া দরকার বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী বলেছেন, একটি গ্রুপের মালিকানাধীন শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটের কারণে জরিমানা দিচ্ছে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক হাত গুটিয়ে বসে আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নীতি ব্যাংক খাতকে আরও ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে। এমন সংকট হলে ব্যাংকের পরিষদ ভেঙে দিয়ে প্রশাসক বসিয়ে দেয়া উচিত। যাতে আমানতকারীদের অর্থ নিরাপদে থাকে। তাতে গ্রাহকের আস্থা বাড়ে।

উল্লেখ্য, শুধু ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়ে দায় সেরেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

47 ভিউ

Posted ১:০৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট ২০২৩

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com