রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

দুর্বল হচ্ছে দেশীয় মুদ্রা টাকার মান

সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩
84 ভিউ
দুর্বল হচ্ছে দেশীয় মুদ্রা টাকার মান

কক্সবাংলা ডটকম(১ অক্টোবর) :: দেশে কোনোভাবেই ডলার সংকট যেন কাটছে না। এর ফলে দেশের বাজারে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ডলার সরবরাহ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে বড় ধাক্কা লেগেছে রেমিট্যান্স প্রবাহে। এতে করে দিন দিন রিজার্ভ কমে যাচ্ছে।

এছাড়া আশানুরূপ পণ্য রপ্তানি না হওয়া, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়া এবং বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপসহ সবমিলিয়ে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছে মার্কিন মুদ্রা ডলার। এর বিপরীতে দুর্বল হচ্ছে দেশীয় মুদ্রা টাকার মান। গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ১৬ শতাংশের বেশি। আর দুই বছরের ব্যবধানে কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ।

এক বছর আগে ১ ডলার কিনতে খরচ হয়েছে ৯৫-১০০ টাকা, ২ বছর আগে ৮৪-৮৬ টাকা। আর এখন ১ ডলার কিনতে ব্যয় হচ্ছে ১১০-১১৬ টাকা। ২ বছর আগে ১০০ ডলার কিনতে খরচ করতে হয়েছিল ৮৫০০ টাকার মতো। এখন ১০০ ডলার কিনতে খরচ হচ্ছে খোলা বাজারে প্রায় ১১৬০০ টাকা। এই হিসেবে ২ বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মানে প্রায় ৩০ শতাংশ পতন হয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা জানান, রিজার্ভ একটা সময়ে ব্যাপকভাবে বেড়েছিল। তখন আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগেছি। সঠিক ব্যবহার করিনি। কৃত্রিমভাবে ডলারের দাম ধরে রেখেছি। যা এখন আমাদের ভোগাচ্ছে। ডলারের বাড়তি মূল্য আমাদের মূল্যস্ফীতিকে উস্কে দিয়েছে। টাকার মান ধারাবাহিকভাবে কমছে। অর্থনীতিতে এগুলো এখন ক্ষত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই সমস্যা সমাধান না হলে ভবিষ্যতে বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে দেশের অর্থনীতি।

জানা গেছে, করোনা মহামারির আগের বছরগুলোতে বিশ্ববাজারে ঋণের সুদহার অনেক কম ছিল। ওই সময়ে বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ প্রবাহও বেশ ভালো ছিল। একই সময় রেমিট্যান্স ও রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল। এসব কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে ছিল। ফলে এ নিয়ে বড় ধরনের আত্মতুষ্টিতে ভোগে সরকার। রিজার্ভ থেকে শ্রীলঙ্কাকে দেয়া হয় ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ। মালদ্বীপকেও ঋণ দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়।

এ ছাড়া রিজার্ভ থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঋণ নেয়া হয় এবং উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়। কিন্তু করোনার পর ২০২১ সালের শেষ দিকে অর্থনীতিতে বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। তখন আমদানির চাহিদা বাড়ে।

অন্যদিকে রেমিট্যান্স কমে যায়। এর প্রভাব পড়ে রিজার্ভে। এরমধ্যে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এতে অর্থনীতিতে নতুন সংকট তৈরি হয়। সংকট কাটাতে কঠিন শর্তে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিতে হয়েছে সরকারকে।

এ ছাড়া ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমদানিতে নানা শর্ত আরোপসহ বিভিন্নরকম উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে অল্প অল্প করে ডলার ছাড়া হচ্ছে নিয়মিত। কিন্তু কোনো পদক্ষেপই কাজে আসছে না।

এদিকে ডলারের দর দীর্ঘদিন কৃত্রিম উপায়ে ৮৪ থেকে ৮৬ টাকার মধ্যে ধরে রেখেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বর্তমানে এটি বেড়ে ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় উঠেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, দুই বছর আগে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ডলারের দাম সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা ৫০ পয়সায় উঠেছিল। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের শুরুতে ডলারের দাম দাঁড়ায় ৯৫ টাকায়। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দাম গিয়ে ঠেকেছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সায়।

অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ডলারের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা ৫০ পয়সা বা ১৬.৩১ শতাংশ। আর দুই বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ২৫ টাকা বা ২৯.৪১ শতাংশ। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এখন প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১৪ টাকা আর খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১৬ থেকে ১১৮ টাকা।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমাদের অর্থনীতি যখন ভালো করছিল, নিয়মিত রিজার্ভ বাড়ছিল, তখন কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এ ছাড়া রিজার্ভ অনেক বাড়ার কারণে আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগেছি। তিনি বলেন, রিজার্ভ থেকে উন্নয়ন খাতে অপরিকল্পিত ব্যয় করা হয়েছে। যেটা ঠিক করেনি। কারণ রিজার্ভ যতই বাড়তে থাকুক তা উন্নয়ন ব্যয়ের জন্য নয়। এটা একটা দেশের শক্তি। এর মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হয়।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, যখন উদ্যোগ নেয়ার প্রয়োজন ছিল তখন নেয়নি। দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, যা সহসা সমাধানের কোনো সুযোগ নেই। রিজার্ভ বাড়ানোর মতো সক্ষমতাও নেই। এখন রিজার্ভ কমতে থাকবে; তবে যতটুকু রক্ষা করা যায় তা করতে হবে। তিনি বলেন, প্রথমে মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে। এটা কমাতে পারলে ডলারের বাজার স্থিতিশীল হয়ে যাবে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এরপর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সুদহার ধাপে ধাপে ৫-৬ শতাংশের মতো বাড়াতে হবে। যা এখন করা সম্ভব নয়। নির্বাচনের পরে এসব পদক্ষেপ নিতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর থেকে রিজার্ভ কমছে। এর আগে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছিল। ১০ বছর আগে ২০১৩ সালের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫.৩২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয়েছিল ৩৩.৬৮ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে আরও বেড়ে ২০২০ সালের ৮ই অক্টোবর ৪০ বিলিয়ন ডলার হয়। এরপর তা বেড়ে ২০২১ সালের আগস্টে প্রথমবারের মতো ৪৮.০৬ বিলিয়ন ডলার হয়। রিজার্ভের এ অঙ্ক ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এরপর আর রিজার্ভ ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।

মহামারি-পরবর্তী বিশ্ববাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব, জ্বালানি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর দেশে তীব্র ডলার সংকট দেখা দেয়। সংকট মোকাবিলায় রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে।

বাজারে ডলার সংকট কাটাতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ১৩.৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল। আর আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) ডলার বিক্রি করেছিল ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার।

সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত ২.২৪ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। এভাবে ধারাবাহিক ডলার বিক্রির ফলে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি সঞ্চয় করা রিজার্ভ এখন ২১ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

মূলত রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয়, বিদেশি বিনিয়োগ, বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণ থেকে যে ডলার পাওয়া যায় তা দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি হয়। আবার আমদানি ব্যয়, ঋণের সুদ বা কিস্তি পরিশোধ, বিদেশি কর্মীদের বেতন-ভাতা, বিদেশে পর্যটক হিসেবে যাওয়া বা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাসহ বিভিন্ন খাতে যে ব্যয় হয়, তার মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রা চলে যায়। এভাবে আয় ও ব্যয়ের পর যে ডলার থেকে যায় সেটাই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে যোগ হয়। বেশি খরচ হলে রিজার্ভ কমে যায়।

84 ভিউ

Posted ১:৩৮ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com