রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

দেশের ১২টি ব্যাংকে মারাত্বক নগদ প্রবাহ ঘাটতি : শীর্ষে ইসলামী ব্যাংক

রবিবার, ০৬ আগস্ট ২০২৩
48 ভিউ
দেশের ১২টি ব্যাংকে মারাত্বক নগদ প্রবাহ ঘাটতি : শীর্ষে ইসলামী ব্যাংক

কক্সবাংলা ডটকম :: কোনো ব্যাংকে নগদ অর্থ প্রবেশের চেয়ে বের হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেলে সেটির নগদ প্রবাহে ঘাটতি তৈরি হয়। এ ঘাটতি যত বড়, ব্যাংকের তারল্য ঝুঁকিও তত বেড়ে যায়। নগদ প্রবাহ বা ক্যাশ ফ্লো হিসেবে পরিচিত এ সূচককে ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার নির্দেশক মনে করা হয়।

আগ্রাসী ব্যাংকিং ও ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণের কারণে দেশের অনেক ব্যাংকেরই নগদ প্রবাহ দীর্ঘদিন ধরে ঋণাত্মক।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৫টি ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি বছরের জুন শেষে দেশের ১২টি ব্যাংকের শেয়ার প্রতি নিট পরিচালন নগদ প্রবাহে (এনওসিএফএস) বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

এর মধ্যে আটটির এনওসিএফএস ২০২২ সালের জুনেও ঋণাত্মক ধারায় ছিল। নতুন করে ঋণাত্মক ধারায় চলে গেছে চারটি ব্যাংকের এনওসিএফএস। তবে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে কিছু ব্যাংকের নগদ প্রবাহে উন্নতি হয়েছে।

চলতি বছরের জুন শেষে নগদ প্রবাহে সবচেয়ে বেশি ঘাটতিতে আছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি। ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি এ ঘাটতির পরিমাণ ৩৯ টাকা ২১ পয়সা। এনওসিএফএসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঘাটতি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের। জুন শেষে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহে ঘাটতি ২৮ টাকা ৫২ পয়সা।

একই সময়ে এনওসিএফএস ঘাটতিতে থাকা অন্য ব্যাংকগুলো হলো গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), এবি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও আইএফআইসি ব্যাংক।

এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, এসআইবিএল ও এবি ব্যাংকের নগদ প্রবাহ ২০২২ সালের জুনে উদ্বৃত্তের ধারায় ছিল।

গত এক বছরে নগদ অর্থ প্রবেশের চেয়ে বের হয়ে যাওয়ার প্রবণতায় চলতি বছরের জুনে এসে এ চার ব্যাংকের ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক ধারায় পড়েছে। বাকি আটটি ব্যাংকের এনওসিএফএস আগে থেকেই ঘাটতিতে।

পেশাদার হিসাববিদদের ভাষ্য হলো, নগদ প্রবাহ হলো যেকোনো ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার নির্দেশক। কোনো ব্যাংকের আমানত প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার পাশাপাশি ঋণ আদায় পরিস্থিতির অবনতি হলে তা নেতিবাচক ধারায় চলে যায়।

এনওসিএফএসের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানের তারল্য পরিস্থিতির শক্তিমত্তা পরিমাপ করা যায়। এটি নেতিবাচক ধারায় থাকার অর্থ হলো প্রতিষ্ঠানের পরিচালন কার্যক্রম থেকে যে পরিমাণ নগদ প্রবাহ আসছে তা পরিচালন ব্যয় মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়।

এ ঘাটতি পূরণ করতে প্রতিষ্ঠানকে অন্য উৎস থেকে অর্থ ধার করতে হয়। এতে সুদ বাবদ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ব্যয় বেড়ে যায়, যা মুনাফাকেও সংকুচিত করে তোলে। ঋণপত্রের (এলসি) দায় নির্দিষ্ট সময়ে সমন্বয় না হলে সেটিকে গণ্য করা হয় ফোর্স লোন হিসেবে। এভাবে নানাভাবে ব্যাংকে নগদ অর্থের আন্তঃপ্রবাহ কমে বহিঃপ্রবাহ বাড়লে তা সার্বিক নগদ প্রবাহকে ঘাটতিতে ফেলে দেয়।

এ ঘাটতি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকের তারল্য ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

ব্যাংক নির্বাহীরা বলছেন, গ্রাহকরা ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ করছেন না। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধে বারবার নীতি ছাড় দেয়ার বিষয়টি। এতে মেয়াদোত্তীর্ণ ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর নগদ প্রবাহ ঋণাত্মক ধারায় চলে যাচ্ছে।

ব্যাংক ঋণের স্থিতি বাড়াতে না চাইলেও অসমন্বিত এলসি দায় ফোর্স লোন হয়ে মেয়াদি বিনিয়োগে রূপান্তর হচ্ছে। ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধিও ব্যাংকগুলোর নগদ প্রবাহের ঘাটতি সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা রাখছে।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির জুন শেষে সম্পদ ও দায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা। চলতি বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংকটির আমানত ৬ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা বেড়েছে। যদিও এ ছয় মাসে ব্যাংকটি বিনিয়োগ বাড়িয়েছে ৯ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। আমানতের তুলনায় বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি বেশি হলেও প্রত্যাশিত মুনাফা পায়নি ইসলামী ব্যাংক।

বিনিয়োগ গ্রহীতারা যথাসময়ে অর্থ ফেরত না দেয়ায় নগদ আদায় কমছে। অর্থাৎ গত ছয় মাসে ইসলামী ব্যাংকে যে পরিমাণ অর্থ ঢুকেছে, বের হয়েছে তার চেয়ে বেশি। এ কারণে তাদের পরিচালন কার্যক্রম থেকে নিট নগদ প্রবাহে (নিট ক্যাশ ফ্লো ফ্রম অপারেটিং অ্যাক্টিভিটিজ) বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

গত বছরের জুন শেষে পরিচালন কার্যক্রম থেকে ইসলামী ব্যাংকের নগদ প্রবাহে ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুনে এসে তা ৬ হাজার ৩১২ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ব্যাংকটির এনওসিএফএস গত জুন শেষে ৩৯ টাকা ২১ পয়সা ঋণাত্মক অবস্থানে রয়েছে। গত বছরের জুনে শেয়ারপ্রতি এ ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১২ টাকা ২৯ পয়সা।

তবে এর আগে ক্যাশ ফ্লোর দিক থেকে ইসলামী ব্যাংকের অবস্থান ছিল খুবই শক্তিশালী। ২০২১ সালের একই সময়ে ব্যাংকটির এনওসিএফএস প্রায় ৩৮ টাকা ধনাত্মক ছিল। ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়ছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে এর পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ১০১ কোটি টাকা।

বিনিয়োগ থেকে আদায় কম হওয়ায় নগদ প্রবাহ ঋণাত্মক বলে জানিয়েছেন ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা।  তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের বিনিয়োগ থেকে আদায় কম। এ কারণে ক্যাশ ফ্লো নেগেটিভ। আমরা বিনিয়োগ থেকে আদায় বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের আমানত স্থিতি গত এক বছরে ১ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা কমেছে। ২০২২ সালের জুন শেষে ব্যাংকটির আমানত ছিল ৪৭ হাজার ৩০২ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুন শেষে তা ৪৫ হাজার ৮৬১ কোটি টাকায় নেমেছে। বিপরীতে বিনিয়োগ স্থিতি বেড়েছে। আবার বিনিয়োগ থেকে প্রত্যাশিত মুনাফা তুলতে পারেনি শরিয়াহ ভিত্তিক এ ব্যাংক।

এ কারণে পরিচালন কার্যক্রম থেকে নিট নগদ প্রবাহে ২ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা ঘাটতি তৈরি হয়েছে। জুন শেষে ব্যাংকটির এনওসিএফএস ছিল ঋণাত্মক ২৮ টাকা ৫২ পয়সা। যদিও গত বছরের জুনে শেয়ারপ্রতি ১১ টাকার বেশি উদ্বৃত্ত ছিল ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামীর।

প্রায় একই কারণে শরিয়াহ ভিত্তিক গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকেরও নগদ প্রবাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। জুন শেষে ব্যাংকটির এনওসিএফএস দাঁড়ায় ঋণাত্মক ১০ টাকা ৫১ পয়সা। গত বছরের জুনে উত্তরা ব্যাংকের এনওসিএফএস ছিল ঋণাত্মক ১১ টাকা ২৩ পয়সা। চলতি বছরের একই সময়ে এসে ব্যাংকটির এ সূচকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। জুন শেষে তাদের এনওসিএফএসে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ৭৩ পয়সা।

অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সুশাসন ভেঙে পড়া ব্যাংকগুলোর একটি ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড। তাদের বিতরণকৃত ঋণের বড় অংশ থেকেই কোনো আদায় নেই। নগদ প্রবাহের দিক থেকে কয়েক বছর ধরেই ঋণাত্মক ধারায় চলছে ব্যাংকটি। ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। স্বাভাবিক পদ্ধতিতে আদায় অযোগ্য হওয়ায় আরো ১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করেছে ব্যাংকটি।

পাশাপাশি রয়েছে আদালতের স্টে অর্ডারে থাকা বিপুল পরিমাণ ঋণ। ২০২২ সালে ৩ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা পরিচালন লোকসান দিয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক। আর চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে এ লোকসানের পরিমাণ ৬৩৫ কোটি টাকা। জুন শেষে ব্যাংকটির এনওসিএফএস ঋণাত্মক ৩ টাকা ৮৯ পয়সা।

ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মেহমুদ হোসেন বলছেন, ‘ন্যাশনাল ব্যাংকের ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হওয়ার একমাত্র কারণ খেলাপি ঋণ ও আদালতের নির্দেশে স্থগিত থাকা ঋণ। ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের উল্লেখযোগ্য অংশ থেকে কোনো আদায় নেই। এ কারণে ব্যাংকের ক্যাশ ফ্লো ইতিবাচক ধারায় ফিরতে পারছে না।’

নগদ প্রবাহ নেতিবাচক ধারায় থাকা অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইস্টার্ন ব্যাংকের এনওসিএফএস ঋণাত্মক ৩ টাকা ৫১ পয়সা। এছাড়া পূবালী ব্যাংকের এনওসিএফএস ঋণাত্মক ২ টাকা ২৮ পয়সা, এসআইবিএলের ঋণাত্মক ২ টাকা ২৮, এবি ব্যাংকের ঋণাত্মক ১ টাকা ৯৯, প্রাইম ব্যাংকের ঋণাত্মক ৭৯, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ঋণাত্মক ৭৭ ও আইএফআইসির ঋণাত্মক ৩৮ পয়সা।

48 ভিউ

Posted ৮:৫৮ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৬ আগস্ট ২০২৩

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com