বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে মধ্যপ্রাচ্যেকে টপকালো ইউরোপ-আমেরিকা প্রবাসীরা

মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০
661 ভিউ
দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে মধ্যপ্রাচ্যেকে টপকালো ইউরোপ-আমেরিকা প্রবাসীরা

কক্সবাংলা ডটকম :: মধ্যপ্রাচ্যের দেশ থেকেই সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে বাংলাদেশে। করোনাকালেও বড় প্রবৃদ্ধি নিয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহে শীর্ষস্থানটি ধরে রেখেছেন সৌদি প্রবাসীরা। সৌদি আরবের পরই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসত সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। কিন্তু করোনা মহামারীতে সে স্থানে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের নাম। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইউরোপ থেকেও বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। অন্যদিকে তুলনামূলকভাবে রেমিট্যান্স কমেছে কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলো থেকে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধিকে দেশের জন্য সুসংবাদ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, মাতৃভূমির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ প্রবাসী বাংলাদেশীদের শিকড় কিছুটা দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। ওই সব দেশে বসবাসকারী দ্বিতীয় প্রজন্ম ভুলতে বসেছিল দেশে থাকা স্বজনদের কথা। কিন্তু করোনা মহামারীতে প্রবাসীদের হূদয়ে মাতৃভূমির প্রতি নতুন করে ভালোবাসার সঞ্চার হয়েছে। অনেকেই দেশে বাড়িঘর নির্মাণে উদ্যোগী হয়েছেন।

নাগরিকত্ব পাওয়ার পর দেশে থাকা বেশির ভাগ স্বজনকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গিয়েছিলেন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আবদুল কাইয়ুম। প্রায় এক দশক ধরে দেশের কথা এক প্রকার ভুলেই ছিলেন তিনি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতিও ছিল তার প্রতিকূলে। এ অবস্থায় কুমিল্লার নিজ গ্রামে বাড়ি নির্মাণে উদ্যোগী হয়েছেন আবদুল কাইয়ুম। এজন্য গত দুই মাসে দেশে টাকা পাঠিয়েছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে আবদুল কাইয়ুম বলেন, কখনো দেশে ফিরতে হবে এমনটি ভাবনায় ছিল না। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রকে কেন্দ্র করেই স্বপ্ন সাজিয়েছিলাম। কিন্তু করোনাভাইরাস আমাদের বাস্তবতা ও মাতৃভূমির গুরুত্ব অনুধাবনের সুযোগ করে দিয়েছে। এজন্যই গ্রামের বাড়িতে ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি।

আবদুল কাইয়ুমের মতোই দেশে বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী অসংখ্য বাংলাদেশী। এর প্রতিফলনই দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার, যা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি।

উন্নত শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা, নিরাপত্তা ও আধুনিক জীবনের জন্য অভিবাসী বাংলাদেশীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো। এসব দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশীরা উপার্জিত অর্থের বড় অংশই নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করেন। আবার দ্বিতীয়-তৃতীয় প্রজন্মের সঙ্গে দেশে থাকা স্বজনের সম্পর্কেও ছেদ পড়েছে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ থেকে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি নতুন আশার সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীরা ২৪৭ কোটি ২৫ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন। সে হিসাবে বিদায়ী অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গড়ে প্রতি মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ২০ কোটি ডলার। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গড়ে ২৮ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাসকারী বাংলাদেশী তরুণ ইকবাল মাহমুদ জানান, যুক্তরাষ্ট্রে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শুরুর পর নাগরিকদের স্বার্থ সুরক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক আকারে আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়। বার্ষিক আয় ৭৫ হাজার ডলারের কম, এমন প্রত্যেক নাগরিকের ব্যাংক হিসাবে মাসে ১ হাজার ২০০ ডলার করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে ৬০০ ডলার করে কর্মহীন নাগরিকদের ভাতা দেয়া হয়। সব মিলিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা হিসেবে যে সহযোগিতা নাগরিকরা পেয়েছেন, তা পুরো মাস কাজ করেও অনেকের পক্ষে আয় করা সম্ভব হতো না। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের বড় অংশই গত কয়েক মাসের আয়কৃত অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। দেশে থাকা স্বজনদের উপার্জন কমে যাওয়ায় অনেকে রেমিট্যান্স পাঠাতে বাধ্যও হয়েছেন।

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক দুর্যোগের তৈরি করা নভেল করোনাভাইরাসের ধাক্কায় বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। গত মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস কিছুটা সত্য প্রমাণিত হলেও তার পর থেকেই চিত্র পাল্টে গেছে। জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে দেশে এসেছে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পরিমাণ রেমিট্যান্স। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাস তথা জুলাই ও আগস্টে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৪৫৬ কোটি ২১ লাখ ডলার। রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০৮ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন সৌদি আরব প্রবাসী বাংলাদেশীরা। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীরা ৫৬ কোটি ৩০ লাখ ও সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসীরা ৫২ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশীরা জুলাই ও আগস্টে পাঠিয়েছেন ৩৩ কোটি ১০ লাখ ডলার। একই সময়ে ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের বড় অংশই সিলেটের। গত তিন মাসে সিলেট অঞ্চলে ব্যাংকের শাখাগুলোতে রেমিট্যান্সে বড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ওবায়েদ উল্লাহ্ আল্ মাসুদ বলেন, রূপালী ব্যাংকের সিলেটের শাখাগুলোতে রেমিট্যান্স প্রবাহ অন্তত তিন গুণ বেড়েছে। যুক্তরাজ্য প্রবাসী সিলেটিদের দ্বিতীয় প্রজন্ম দেশের স্বজনদের ভুলতে বসেছিল। কিন্তু সম্প্রতিক সময়ে সিলেটে রেমিট্যান্সের বড় প্রবৃদ্ধি আমাদের আশান্বিত করছে।

প্রবাসীরা বৈধ পন্থায় দেশে রেমিট্যান্স পাঠালে ২ শতাংশ প্রণোদনা পাচ্ছেন সরকার থেকে। প্রণোদনার এ নীতি গ্রহণের পর রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক ধারা ফিরে আসে। একই সঙ্গে কমে আসে অবৈধ হুন্ডির তত্পরতা। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে সীমিত হয়ে পড়েছে আকাশযাত্রাসহ সব ধরনের যোগাযোগ। দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন অভিবাসন বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সি আর আবরার।

তিনি বলেন, যেকোনো দুর্যোগের সময় সাময়িকভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার প্রবণতা অতীতেও দেখা গেছে। করোনায় বিধ্বস্ত পরিস্থিতিতে দেশে মানুষের আয় বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রবাসীরা সঞ্চিত অর্থ, ব্যবসার পুঁজি থেকে শুরু করে যেকোনো উপায়ে দেশে স্বজনদের জন্য অর্থ পাঠানোর চেষ্টা করেছেন। তবে রেমিট্যান্সের বিদ্যমান প্রবৃদ্ধি দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে মনে হয় না। কারণ এরই মধ্যে বাংলাদেশীদের বিদেশযাত্রা প্রায় বন্ধ রয়েছে। শ্রমবাজারগুলোতে নতুন করে ভিসা পাওয়া যাচ্ছে না।

সি আর আবরারের মতে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে উগ্র জাতীয়তাবাদ চাঙ্গা হচ্ছে। করোনা মহামারী এটিকে আরো উসকে দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ইউরোপ ও আমেরিকায় বসবাসকারী অভিবাসীরা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে।

661 ভিউ

Posted ১:২২ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com