কক্সবাংলা ডটকম(১০ অক্টোবর) :: জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও নিরাপদ জীবিকার খোঁজে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন অনেক বাংলাদেশী। দেশটিতে পাড়ি জমানো বাংলাদেশীর সংখ্যা বর্তমানে সাড়ে তিন লাখ। যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশীর বসবাস নিউইয়র্কে। অন্তত ৮০-৯০ হাজারের মতো বাংলাদেশী সেখানে বিভিন্ন পেশায় কর্মরত রয়েছেন। দীর্ঘদিন থাকার সুবাদে এতদিন সেখানে বড় ধরনের কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হলেও, সম্প্রতি গুম-খুনের মতো ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেকটাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা।
বাংলাদেশীদের ওপর হামলা, গুম, খুন এমনকি তুলে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করার মতো ঘটনা এখন বেড়ে চলেছে। সম্প্রতি রাইডশেয়ারিং অ্যাপ পাঠাওয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ খুন হওয়ার পর নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশীদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে। অনেকেই এখন চলাচলে রীতিমতো অস্বস্তিবোধ করছেন।
নিউইয়র্ক শহরে অবস্থানরত বাংলাদেশীরা জানান, নিউইয়র্ক শহরে সম্প্রতি দুর্বৃত্তদের উৎপাত বেড়েছে। বিশেষ করে এখানে অবস্থানরত ব্যবসায়ী বা ধনী ব্যক্তিদেরই টার্গেট করা হচ্ছে বেশি। এদিক থেকে তাদের নজর মূলত বাংলাদেশ থেকে আগত ব্যবসায়ী বা দীর্ঘদিন ধরে বসবাসরতদের ওপরই বেশি।
প্রায় দুই দশক ধরে ম্যানহাটনে বসবাস করছেন পরিকল্পনাবিদ নাফিস চৌধুরী (ছদ্মনাম)। যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বাসিন্দার (পিআর) স্বীকৃতি পাওয়া এ বাংলাদেশী জানান, গত দুই দশকে এমন হতাহতের ঘটনা তিনি দেখেননি। সম্প্রতি খুন ও হত্যার মতো ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে তিনি নিজেও বেশ শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন।
তিনি বলেন, করোনার আগে হত্যার মতো ঘটনা ঘটলেও তা খুব কমই ছিল। কিন্তু বর্তমানে সেটি বেড়েছে। প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভেতরে ঠিক কীভাবে এমন ঘটনা ঘটছে, তা জানি না। তবে রাতে রাস্তায় চলাচলে নিজের ও পরিবারের মধ্যে বেশ অস্বস্তি দেখা দেয়।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ১৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক শহরের জ্যাকসন হাইটসের বাসভবন থেকে নিখোঁজ হন বাংলাদেশী কলেজ শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম তৃপ্তি (১৮)। নিখোঁজ হওয়ার ১৭ দিন পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর হাডসন নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরও আগে গত ১৫ জুলাই নিউইয়র্কে খুন হন পাঠাওয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ। শহরের জ্যাকসন হাইটসের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে তার ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
২২ আগস্ট বোস্টনের ম্যাসাচুসেটস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বাংলাদেশী শিক্ষার্থী তানজিম সিয়াম (২৩)। এর আগে ১৪ জুলাই মুদির দোকানে মালামাল কেনার সময় অস্ত্রের মুখে সন্ত্রাসীরা তাকে জিম্মি করে তার জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। পরে তার মাথায় গুলি করে তারা পালিয়ে যায়। এছাড়া ৬ আগস্ট নিউইয়র্ক শহরে নিজের গাড়ি থেকে মহসিন আহমেদ নামে এক বাংলাদেশী যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এসব গুম-খুনের ঘটনায় বর্তমানে সেখানকার বাংলাদেশীদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে। গত দুই মাসে চার বাংলাদেশী খুনের ঘটনা সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গোটা নিউইয়র্কেই অপরাধ প্রবণতা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। নিউইয়র্ক পুলিশে কর্মরত বাংলাদেশী রাজু ভৌমিক জানান, গুম-খুনের মতো ঘটনা নিউইয়র্ক শহরে আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। তবে সেটা যে শুধু বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রে ঘটছে, এমন নয়। হতাহতের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় শহরের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ভুক্তভোগী হচ্ছেন।
স্থানীয় পুলিশ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিউইয়র্ক শহরে খুন হয়েছেন ছয়জন। গত ২৮ দিনে খুন হয়েছেন ৪৫ জন। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) সেখানে মোট খুন হয়েছেন ৩৩৭ জন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৯ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় নিউইয়র্ক ও আশপাশের শহরগুলোয় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। চলতি বছরের মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত চার মাসে সেখানে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে ৭৯১টি। মে-আগস্ট পর্যন্ত চার মাসে শুধু খুনের ঘটনায় মারা গিয়েছেন ১৮০ জন।
উত্তর আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকা (ফোবানা) ভাইস প্রেসিডেন্ট জাকারিয়া চৌধুরী বলেন, কভিড-১৯-এর কারণে নিউইয়র্কে বাংলাদেশীদের কাজের জায়গা সংকুচিত হয়েছে। ফলে অনেকে বেকার হয়ে পড়েছে। আর এ কারণে পারিবারিক কলহ থেকে শুরু করে গুম-খুনের মতো ঘটনা বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, নিউইয়র্ক শহর বিশ্বের যেকোনো শহরের তুলনায় নিরাপত্তার দিক থেকে প্রথম সারির। কিন্তু বর্তমানে যেসব ঘটনা ঘটছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত।
Posted ৯:২০ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১১ অক্টোবর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta