কক্সবাংলা ডটকম(১৫ জুলাই) :: বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাও-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ খুন হয়েছেন। নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি নিউজের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, মঙ্গলবার শহরের ম্যানহাটন এলাকার নিজ অ্যাপার্টমেন্ট থেকে তার ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এখনও হত্যার রহস্য জানা যায়নি। তবে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অপরাধী শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রকে উদ্ধৃত করে ডেইলি নিউজ জানিয়েছে, ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন ফাহিম। দীর্ঘ সময় ভাইয়ের কোনও খোঁজ পাননি বলে মঙ্গলবার ৯১১ নম্বরে ফোন করেন তার বোন। এরপর পুলিশ এসে অ্যাপার্টমেন্টের ৭ম তলা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে।
মরদেহের পাশেই একটি ইলেকট্রিক করাত মেশিনের সন্ধান পায় পুলিশ। খণ্ডবিচ্ছিন্ন অঙ্গগুলো পাওয়া যায় পাশেই রাখা একটি প্লাস্টিক ব্যাগে। পুলিশের ধারণা, ওই করাত দিয়েই ফাহিমের দেহ ছিন্নবিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এটিকে ‘খুবই কুৎসিত’ হত্যাকাণ্ড বলে আখ্যায়িত করেছে তারা।
এদিকে এনওয়াইপিডির অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ওই কন্ডোমেনিয়াম ভবনের সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, ফাহিম গত সোমবার দুপুর ১টা ৪০ মিনিটের সময় সর্বশেষ তার এপার্টমেন্টে প্রবেশ করেন। এ সময় সপ্তম তলায় যাওয়ার জন্য তিনি যখন নিচতলা থেকে এলিভেটর বা লিফটে চড়েন তখন আরও এক ব্যক্তি লিফটে উঠেন। স্যুট পরা লোকটির মুখে মাস্ক এবং হাতে গ্লাভস পরা ছিল এবং সে একটি ব্রিফকেস বহন করছিল, ফাহিম সন্দেহের দৃষ্টিতে অচেনা ওই লোকটির দিকে তাকিয়েছেন বলেও ভিডিওতে দেখা গেছে। এরপর সে ফাহিমের সঙ্গেই সপ্তম তলায় নেমে পড়েন এবং ফাহিম তার এপার্টমেন্টের দরজা খোলা মাত্রই লোকটি তার ওপর আক্রমণ চালায় এবং ধাক্কা দিয়ে তাকে এপার্টমেন্টের ভেতরে ঢুকিয়ে ফেলে। কিন্তু এরপর কী ঘটেছে তা আর সিসি ফুটেজে দেখা যায়নি। পুলিশ বলছে, প্রথমিকভাবে সবকিছু দেখেশুনে মনে হচ্ছে, হত্যকারী একজন পেশাদার খুনি। ফাহিমের মৃতদেহটি ইলেক্ট্রিক করাত দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করা হলেও মেঝেতে কোনো রক্তের দাগ ছিল না।
এদিকে একাধিক সূত্রে জানা গেছে যে, গোকোডো নামে নাইজেরিয়ার একটি রাইড শেয়ারিং কোম্পানি এবং পিকআপ নামে কলম্বিয়ার আরেকটি রাইডশেয়ারিং কোম্পনিরও তিনি অংশীদার। এরমধ্যে ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে গোকোডো বড় ধরণের বিপর্যয়ের কবলে পড়লে গত বছরের শেষদিকে ফাহিম কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এছাড়া ইন্দোনেশিয়াতেও একই ধরণের ব্যবসায় তার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে জানা গেছে।পেশায় ওয়েবসাইট ডেভেলপার ফাহিম অ্যাডভেঞ্চার ক্যাপিটাল গ্লোবাল নামক একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠানেরও উদ্যোক্তা ছিলেন।
পুলিশের ধারণা, ফাহিম লিফট থেকে বের হওয়ার পরপরই তাকে গুলি করা হয়েছে অথবা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হয়েছে। অপরাধীর কাছে একটি স্যুটকেসও ছিল। সে খুবই পেশাদার খুনি বলেই ধারণা করছে পুলিশ।
ফাহিম যে ভবনে থাকতেন সেটি খুব সম্প্রতি নির্মিত একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবন। ভবনের পর্দা নামানো ছিল।
ফাহিমের এক প্রতিবেশী ডেনিয়েল ফাউস্ট (৪০) বলেন, তিনি পুলিশ প্রহরায় দুই জন নারীকে ওই ভবন থেকে বের হতে দেখেছেন। এর মধ্যে একজন ছোট করে ছাঁটা কালো চুলের। আর দ্বিতীয়জন বেশ লম্বা এবং লম্বা চুল বিশিষ্ট। তাদের একেবারে উদভ্রান্তের মতো দেখাচ্ছিল। গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে তাদের বেরিয়ে যেতে দেখেছি। পুলিশ ওই ভবন থেকে একটি কুকুরও বের করে নিয়ে গেছে।
তার বন্ধু ও প্রতিবেশীরা বলছেন, সালেহকে কখনোই বলতে শোনা যায়নি তিনি কাউকে সন্দেহ করছেন বা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত আছেন। তাছাড়া এই এলাকায় ২০১৫ সালের পর একটিও খুন হয়নি।
ফাহিম সালেহর জন্ম ১৯৮৬ সালে। তাঁর বাবা সালেহ উদ্দিন চট্টগ্রামের, আর মা নোয়াখালীর মানুষ। ফাহিম পড়াশোনা করেছেন আমেরিকার বেন্টলি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনফরমেশন সিস্টেম নিয়ে। তিনি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাওয়ের অন্যতম উদ্যোক্তা। ২০১৪ সালে নিউইয়র্ক থেকে ঢাকায় গিয়ে পাঠাও চালু করে নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন তিনি।
ফাহিম সালেহ’র কাজিন আতাউর বাবু জানান, ফাহিম সালেহ’র জন্ম এখানেই। তার বাবা- মা নিউইয়র্কের পোকেএসপিতে থাকেন। তার আরো দুটো বোন রয়েছে। ফাহিম সালেহ কম্পিউটার সাইন্সে গ্যাজুয়েশন করেছেন। ছাত্র অবস্থা থেকেই ফাহিম সালেহ মিলিয়নার ছিলেন। তিনি বাংলাদেশীদের মুখ আমেরিকায় উজ্জ্বল করেছিলেন। তিনি একবার বাংলাদেশে বেড়োতে গিয়েছিলেন। সেখানে ট্রাফিক জ্যাম দেখে তার উপরই রাইড শেয়ারিং পাঠাও নামে একটি সফটওয়ার ডেভেলপ করেন। বাংলাদেশী এবং আমেরিকার তরুণ সমাজের আইন ফাহিম তার সফটওয়ার নিয়ে অতিসম্প্রতি নাইজেরিয়ার কাজ শুরু করেছিলেন।
Posted ৪:২০ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৫ জুলাই ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta