কক্সবাংলা ডটকম(১২ এপ্রিল) :: দ্রুতবর্ধনশীল দেশগুলোর বৈশ্বিক তালিকায় ভারত অন্যতম। দেশটির অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথ যত গতিশীল হচ্ছে, জ্বালানি তেলের অভ্যন্তরীণ চাহিদাও তত বাড়ছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত— দুই ধরনের জ্বালানি তেল আমদানি আগের তুলনায় বাড়িয়েছে ভারত। একই সঙ্গে বাড়ানো হচ্ছে জ্বালানি পণ্যটির পরিশোধন সক্ষমতাও। এ খাতে নেয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প।
আসছে বিপুল পরিমাণ দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ। মহারাষ্ট্রে নতুন জ্বালানি তেল পরিশোধন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের যৌথ বিনিয়োগে সম্মত হয়েছে ভারত ও সৌদি আরব।
১১ এপ্রিল দুই দেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এ-সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকে সই করেছে।
খবর রয়টার্স ও মানি কন্ট্রোল।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেগা এ প্রকল্পে যুক্ত রয়েছে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় জ্বালানি প্রতিষ্ঠান সৌদি আরামকো। ভারতের পক্ষে রয়েছে রত্নাগিরি রিফাইনারি অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেড (আরআরপিএল)। ভারতীয় এ প্রতিষ্ঠানটি ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন, হিন্দুস্থান পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ও ভারত পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হয়। ভারতের মহারাষ্ট্রে নতুন পরিশোধন কেন্দ্র স্থাপন ও পেট্রোকেমিক্যাল প্রকল্পে ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে একমত হয়েছে উভয় প্রতিষ্ঠান। এ প্রকল্পে দুই পক্ষের সমান বিনিয়োগ থাকবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে এ কেন্দ্রে দৈনিক ১২ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল পরিশোধনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কেন্দ্রটির জ্বালানি তেল পরিশোধনের সক্ষমতা থাকছে বছরে ১ কোটি ৮০ লাখ টন। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে এটি হবে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম জ্বালানি তেল পরিশোধন কেন্দ্র ও পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্স। এ প্রকল্পে ৫০ শতাংশ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহ করবে সৌদি আরামকো।
প্রস্তাবিত এ প্রকল্পের বিষয়ে সৌদি আরবের জ্বালানিমন্ত্রী খালিদ আল-ফালিহ বলেন, সৌদি আরব থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিকারক দেশগুলোর মধ্যে ভারত অন্যতম। আমরা (সৌদি প্রশাসন) ভারতের জ্বালানি তেল পরিশোধন খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।
দীর্ঘমেয়াদি এ পরিকল্পনার প্রাথমিক পর্যায়ে সৌদি-ভারতের যৌথ উদ্যোগে নতুন পরিশোধন কেন্দ্র ও পেট্রোকেমিক্যাল প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আরামকোর পাশাপাশি সৌদি আরবের পেট্রোকেমিক্যাল প্রতিষ্ঠান সাবিক ভারতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী বলেও জানান তিনি।
বর্তমানে জ্বালানি তেলের ভোক্তা দেশগুলোর মধ্যে ভারতের অবস্থান বিশ্বে তৃতীয়। প্রতি বছরই দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা বাড়ছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদার সিংহভাগ জ্বালানি তেলই আমদানি করে ভারত। পরে নিজস্ব কেন্দ্রগুলোয় পরিশোধনের পর তা দেশজুড়ে সরবরাহ করা হয়।
২০৩০ সালের মধ্যে জ্বালানি তেল পরিশোধন সক্ষমতা বর্তমানের তুলনায় ৭৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এ সময় পর্যন্ত দেশটির জ্বালানি তেল পরিশোধন সক্ষমতা দাঁড়াবে দৈনিক ৮৮ লাখ ব্যারেলে। এ পরিকল্পনা প্রকাশের পরপরই ভারতে বিনিয়োগের বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছে সৌদি আরামকোসহ বিশ্বের বড় জ্বালানি প্রতিষ্ঠানগুলো।
অন্যদিকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানিকারক বিশ্বের বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান সৌদি আরামকো দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় ািবনিয়োগের বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এ অঞ্চলের দেশগুলোয় জ্বালানি পণ্যটির ক্রমবর্ধমান বাজার ধরতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।
এ লক্ষ্য পূরণে গত ফেব্রুয়ারিতে নয়াদিল্লি সফর করেন সৌদি জ্বালানিমন্ত্রী খালিদ আল-ফালিহ। ওই সফরের সময়ই মহারাষ্ট্রে নতুন পরিশোধন কেন্দ্র স্থাপন ও পেট্রোকেমিক্যাল প্রকল্পে যৌথ বিনিয়োগের বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছিল দুই দেশ। এর আগে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার পরিশোধন কেন্দ্রগুলোয় দীর্ঘমেয়াদে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহের চুক্তি সই করেছে সৌদি আরব।
ভারতেও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানিকারকদের তালিকায় শীর্ষে ছিল দেশটি। সম্প্রতি এ তালিকায় সৌদি আরবকে টপকে শীর্ষে উঠে এসেছে ইরাক। এখন ভারতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানিকারকদের তালিকায় ফের শীর্ষ অবস্থানে উঠতে দেশটির জ্বালানি তেল পরিশোধন খাতে সৌদি আরামকো বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
Posted ৭:৪৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ এপ্রিল ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta