রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বাংলাদেশে আমদানিতে রেকর্ড, রফতানিতে বিপর্যয়

রবিবার, ১৫ এপ্রিল ২০১৮
353 ভিউ
বাংলাদেশে আমদানিতে রেকর্ড, রফতানিতে বিপর্যয়

কক্সবাংলা ডটকম(১৫ এপ্রিল) :: বৈদেশিক বাণিজ্যে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। একদিকে আমদানি ব্যয় রেকর্ড গড়েছে, অন্যদিকে রফতানি আয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, গত মার্চ মাসে রফতানিতে নেগেটিভ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০১৭ সালের মার্চ মাসের তুলনায় এ বছরের মার্চে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাইনাস এক দশমিক ৩৮ শতাংশ। আবার, একই সময়ে রেকর্ড পরিমাণ আমদানি করতে হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, অস্বাভাবিকভাবে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া ও রফতানি আয় কমে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশকে বড় ধরনের চাপের মুখে পড়তে হবে।

তিনি বলেন, ‘এখনই এই চাপ সহ্য করতে হচ্ছে। আগামীতে এই চাপ আরও বাড়বে। যেহেতু রফতানিতে নেগেটিভ প্রবৃদ্ধি; অথচ আমদানি ব্যয় ৩৩ শতাংশেরও বেশি। এর ফলে ক্রমেই বৈদেশিক বাণিজ্যে ভারসাম্যহীন পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।’

আহসান এইচ মনসুরের মতে, আমদানি ব্যয় মেটাতে যে পরিমাণ টাকা লাগবে, সেই টাকা থাকলে সমস্যা হবে না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কতদিন এভাবে চলবে। এই অর্থবছরেও বড় ধরনের টানাপড়েনে থাকতে হবে সরকারকে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে টানাপড়েন আরও বাড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আমদানি ব্যয় ছিল ৫০১ কোটি ৯১ লাখ ডলার। যদিও ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমদানি ব্যয় ছিল মাত্র ৩৭৬ কোটি ৯ লাখ ডলার। এই হিসাবে গত বছরের ফেব্রুয়ারির তুলনায় এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১২৬ কোটি ডলার।

২০১৮ সালের মার্চ মাসে রফতানি আয় হয়েছে ৩০৫ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। যদিও ২০১৭ সালের মার্চে রফতানি আয় হয়েছিল ৩০৯ কোটি ৭৩ লাখ ৩০ হাজার ডলার। এই হিসাবে গত বছরের মার্চের তুলনায় এই বছরের মার্চে রফতানি আয় কমেছে চার কোটি ২৮ লাখ ডলার।

অবশ্য রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসের হিসাবে রফতানি প্রবৃদ্ধি নেগেটিভ হলেও এ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল ফেডারেশনের (আইএএফ) বোর্ড মেম্বার ও তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘সার্বিকভাবে রফতানি কমেনি; বিদেশের বাজারে তৈরি পোশাকের দাম কমে যাওয়ায় রফতানি আয় কম এসেছে। অবশ্য নির্বাচনের বছরে অসাধু অনেকেই রফতানি আয় দেশে নাও আনতে পারেন। এ কারণেও রফতানি আয় কমছে।’

ড. আহসান এইচ মনসুরের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যই বলে দিচ্ছে আমদানি ও রফতানি এই দুই প্রক্রিয়াতেই টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এই বছরই নির্বাচন হওয়ার কথা। নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশ থেকে টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা উচিত। দেশে বড় বড় যেসব প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে সেগুলোর পেছনে আমদানি ব্যয় হলে দোষের কিছু নেই। কিন্তু আমদানির নামে টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে কিনা সেটাও দেখার বিষয়। আবার রফতানিও বাড়ছে না। এর পেছনে কোনও রহস্য আছে কিনা তাও বের করা জরুরি।

’ পিআরআই’র এই গবেষক মনে করেন, এমনও হতে পারে, কেউ কেউ রফতানি করছেন কিন্তু রফতানি আয়ের টাকা দেশে আনছেন না। মানে অর্থ পাচার করছেন। আর সত্যি যদি রফতানি পরিস্থিতি এতটা খারাপ হয়, তাহলেও সেটা চিন্তার বিষয়। তিনি বলেন, ‘যদি অর্থ পাচার না হয়ে থাকে, তাহলেও বিপদে আছি ধরে নিতে হবে। বিষয়টি সরকারকে গভীরভাবে ভাবতে হবে।’

তিনি বলেন, এখন ব্যাংকগুলোতে ৬০ শতাংশের বেশি এলসি খোলা হয়েছে। অর্থাৎ আগামী দিনগুলোতেও আমদানি বাড়তেই থাকবে। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাবে। এর ফলে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম আরও বাড়বে।

এ প্রসঙ্গে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি ও তৈরি পোশাক রফতানিকারদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘মাসের হিসাবে রফতানি আয় কমলেও বছরের হিসাবে রফতানি আয় বাড়ছে।’ তবে বিদেশে পোশাকের দাম কমে যাওয়ার কারণে মার্চ মাসের রফতানি আয় কম হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি এই আট মাসে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৮৭১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৬৭ কোটি ২৪ লাখ ডলার। ফলে আট মাসে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ২৬ দশমিক ২২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে পাঁচ হাজার ২০ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় তা ৬০ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি।

এদিকে, আমদানি ব্যয় সামাল দিতে গিয়ে বেসামাল হয়ে পড়েছে ব্যাংকগুলো। তারল্য সংকটের কারণে এলসির দায় পরিশোধ করতে পারছে না বেশ কয়েকটি ব্যাংক।

জানা গেছে, এ অর্থবছরের শুরু থেকেই খাদ্যশস্যসহ মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির বিপুলসংখ্যক এলসি খোলা হয়েছে। সে তুলনায় রেমিটেন্স ও রফতানি আয় না বাড়ায় ব্যাংকগুলোতে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদা মেটাতে প্রতিদিনই ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ অর্থবছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে ছেড়েছে ১৮০ কোটি ডলারের বেশি। এর পরও থামছে না টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল আন্তঃব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৭৯ টাকা ৭০ পয়সা। এ বছরের একই দিন ৪ শতাংশ বেড়ে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ৮২ টাকা ৯৮ পয়সায়।

অবশ্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বলছে, অধিকাংশ ব্যাংকই ঘোষিত মূল্যের বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে। গত সপ্তাহের শেষ দুই কর্মদিবসে প্রায় সব ব্যাংকই ৮৪ থেকে ৮৬ টাকায় ডলার বিক্রি করেছে। আর খোলাবাজারে (কার্ব মার্কেট) ৮৭ টাকার বেশি দামেও ডলার বিক্রি হয়েছে।

আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে চলতি হিসাবেও ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) দেশের চলতি হিসাবে ৬৩১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। যদিও ২০১৫-১৬ অর্থবছরের চলতি হিসাবে ৪২৬ কোটি ২০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।

এই অর্থবছরের সাত মাসেই (জুলাই-জানুয়ারি) পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১২ কোটি ৩০ লাখ (১০ দশমিক ১২ বিলিয়ন) ডলার। এই অংক গত অর্থবছরের পুরো সময়ের চেয়েও প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বেশি।

২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশ ৩১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। এই সময়ে বিভিন্ন দেশে পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশের আয় হয়েছে ২১ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার। এই হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ১০ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার।

353 ভিউ

Posted ১০:৫৭ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৫ এপ্রিল ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com