কক্সবাংলা ডটকম(৮ জানুয়ারী) :: বুধবার গভীর রাতে পর আবারও দুটি মিসাইল আছড়ে পড়ল ইরাকের রাজধানী বাগদাদের গ্রিন জোনে। হাই সিকিউরিটি এলাকা, যেখানে মার্কিন সহ অন্য দেশের দূতাবাসগুলি রয়েছে, সেখানে এই হামলা চালানো হয়।
মার্কিন সেনা ঘাঁটি লক্ষ্য করে ইরানের মিসাইল ছোঁড়ার একদন পরেই ঘটল ঘটনা। বাগদাদ এলাকার মানুষ দুটি তীব্র বিস্ফোরণের শব্ধ শুনতে পান, এবং বুঝতে পারেন ফের একবার হামলা হয়েছে।
মঙ্গলবার ইরাকের সেনা ঘাঁটি লক্ষ্য করে ১৫টি মিসাইল ছুঁড়েছে ইরান। তাঁরা জানয় যে ওই মিসাইল হামলায় ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইরানের সংবাদমাধ্যমে ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ডের এক উচ্চপদস্থ আফিসার বলেছেন, ৮০ জন ‘আমেরিকান টেররিস্ট’-কে মারা হয়েছে ওই মিসাইল হামলায়।
যদিও ইরানের এ দাবিকে ফুতকারে উড়িয়ে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প বলেন, কোনও মার্কিন সেনার মৃত্যু হয়নি। ন্যুনতম ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমেরিকার স্থানীয় সময় সকাল ১১ টায় হোয়াইট হাউসে বিবৃতি দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, আমেরিকা যে কোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শিগগিরই ইরানের ওপর অতিরিক্ত আর্থিক ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। ইরানের আচরণ পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে।
মধ্যপ্রাচ্যের তেল-গ্যাসের প্রসঙ্গ টেনে ট্রাম্প বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের তেল-গ্যাসের তাদের প্রয়োজন নেই। তারা এখনই তেল-গ্যাস উৎপাদনে শীর্ষে আছে।
এদিন ইরানের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ইরানের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হোক। পরমাণু যুদ্ধের পথে যাতে ইরান না যায়, সেই বার্তা দেন তিনি। ইরান কোনোদিনই পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। উপরি নিষেধাজ্ঞা জারি হবে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
ইরাকে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার বিষয়টি আগেই জানিয়েছিল ইরান। ইরাকের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদুল মাহদির মুখপাত্র আজ বুধবার ভোরের ওই হামলার পর এমন তথ্য জানিয়েছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, কাসেম সোলেইমানি হত্যার প্রতিশোধে ইরাকে অবস্থিত দুটি মার্কিন ঘাঁটিতে ইরান যে ২২টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাবে, তা ইরাকের সরকার প্রধানকে জানানো হয়েছিল।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র এ বিষয়ে বলেন, ‘শহীদ কাসেম সোলেইমানির হত্যার পর তার বদলা নিতে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করবে বা করেছে, তা বুধবার মধ্যরাতের পরে মৌখিক বার্তায় আমাদের জানানো হয়েছিল।’
ওই মুখপাত্র আরও বলেন, ‘তেহরান থেকে ইরাকে শুধু যেখানে মার্কিন সেনা উপস্থিতি রয়েছে, সেখানেই হামলা করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদুল মাহদিকে নিশ্চিত করা হয়েছিল। তবে ঠিক কোথায় হামলা করা হবে, তা জানানো হয়নি।’
ইরাক সরকারের এই মুখপাত্র জানান, হামলার পর ট্রাম্প প্রশাসন থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করা হয়েছিল। তিনি জানিয়েছেন, মধ্যরাতের ওই হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
আজ ভোরে ইরাকে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বিমান ঘাঁটিতে অন্তত ২২টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এ হামলায় ৮০ জন ‘মার্কিন সন্ত্রাসী‘কে (মার্কিন সেনা) তারা হত্যা করেছে বলে দাবি করে ইরান। কয়েকঘণ্টা পরই ইরানের এ দাবি অস্বীকার করে যুক্তরাষ্ট্র।
যদিও ইরান বলছে, তারা কোনো যুদ্ধ চায় না। তবে যুক্তরাষ্ট্র হামলা করলে তাদের মূল ভূখণ্ডে আঘাত করা হবে।
হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘সব ঠিক আছে, ইরাকে দুটি বিমান ঘাঁটিতে ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। এখন ক্ষয়ক্ষতি এবং হতাহতের তথ্য মূল্যায়ন করা হচ্ছে। যা হয়েছে, ভালো হয়েছে! আমাদের কাছে সবচেয়ে ক্ষমতাধর এবং সুসজ্জিত সামরিক বাহিনী রয়েছে। বিশ্বের যেকোনো স্থানে তারা রয়েছে।’
গত শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা করা হয়, যা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেয়। ইরানিরা এই হত্যাকাণ্ডের কঠিন প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইরাকে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাল ইরান।
Posted ৪:২৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta