রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বাবা কত দিন দেখি না তোমায়…

রবিবার, ১৬ জুন ২০১৯
272 ভিউ
বাবা কত দিন দেখি না তোমায়…

আব্দুল কুদ্দুস রানা(১৬ জুন) :: বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ডশিল্পী জেমস বাবাকে নিয়ে বিখ্যাত একটা গান গেয়েছেন। সময় পেলেই সেই গানটা একবার দুইবার বহুবার করে শোনা হয়। যাঁরা বাবাকে হারিয়েছেন, তাঁদের কাছে গানটার গুরুত্ব অপরিসীম। গানটা মানুষের হৃদয়ের একেবারে গহিনে গিয়ে টান মারে।

‘বাবা কত দিন, কত দিন
দেখি না তোমায়….
কেউ বলে না তোমার মত
কোথায় খোকা, ওরে বুকে আয়।
….যখন আমি থাকবো না
কী করবি রে বোকা’ ।

‘বাবা’ ছোট্ট একটি শব্দ। অথচ এর ব্যাপকতা বিশাল। ‘বাবা’ শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে আছে গভীর মমতা-ভালোবাসা, নিরাপত্তা আর নির্ভরতা।

বাবা দায়িত্বশীল স্নেহময় একজন পুরুষ। যিনি দুঃসময়ে সন্তানদের বুকে চেপে রাখেন। দু:খ কষ্টকে মাথায় নিয়ে সন্তানদের আলোকিত করার চিন্তায় নিমজ্জিত থাকেন। সন্তানের মুখে শুধু একবার বাবা ডাকতে শোনলেই নিমিষেই তিনি সকল দু:খ ভুলে যান। তাইতো বাবার সাথে সন্তানের সম্পর্ক এত সুমধুর-বন্ধুত্বের । সন্তানের কাছে বাবা হচ্ছেন পথপ্রদর্শক।

বাবাকে নিয়ে এতো কিছু বলার কারণ হচ্ছে আজ রোববার ১৬ জুন বিশ্ব বাবা দিবস। পৃথিবীর সব বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের জন্যই বাবা দিবসের উৎপত্তি।

ধারণা করা হয়, ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জেনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় এই দিনটি প্রথম পালিত হয়। মতান্তরে সনোরা স্মার্ট ডোড নামের যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের এক তরুণীর মাথাতেও বাবা দিবসের আইডিয়া আসে। যদিও তিনি ১৯০৯ সালে ভার্জিনিয়ার বাবা দিবসের কথা একেবারেই জানতেন না।

স্মার্ট ডোড তাঁর বাবাকে খুব ভালবাসতেন। তিনি সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগেই ১৯১০ সালের ১৯ জুন বাবা দিবস পালন করা শুরু করেন। ১৯১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সংসদে বাবা দিবসকে ছুটির দিন ঘোষণা করার জন্য একটা বিল উত্থাপন করা হয়। ১৯২৪ সালে তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ বিলটিতে পূর্ণ সমর্থন দেন। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন বাবা দিবস দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন হিসাবে আনুষ্টানিক স্বীকৃতি দেন।

এরপর থেকে বিশ্বের অন্তত ৮৭টি দেশে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এরমধ্যে ৫২টি দেশ বাবা দিবস পালন করে জুন মাসের তৃতীয় রোববার। দেশগুলোর মধ্যে আছে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, জাপান, ফ্রান্স, আমেরিকা, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক, ইংল্যান্ড ইত্যাদি। সে হিসাবে বাংলাদেশে বিশ্ব বাবা দিবস হচ্ছে আজ ১৬ জুন।

ইরানে বাবা দিবস পালিত হয় ১৪ মার্চ। ইতালি, পর্তুগালসহ কয়েকটি দেশ বাবা দিবস ১৯ মার্চ। দক্ষিণ কোরিয়ায় বাবা দিবস ৮ মে। ডেনমার্কে বাবা দিবস ৫ জুন। পোল্যান্ড ও উগান্ডায় বাবা দিবস ২৩ জুন। আর্জেন্টিনায় বাবা দিবস ২৪ আগস্ট। চীন ও তাইওয়ানে বাবা দিবস ৮ আগস্ট। সেপ্টেম্বর মাসের পূর্ণিমায় বাবা দিবস পালন করে নেপাল।

দিবস যে তারিখে হোক না কেন-উদ্দেশ্য কিন্তু একটাই বাবাকে স্মরণ করা। মনে রাখা। বাবার প্রতি সন্তানের সেই চিরন্তন ভালোবাসার প্রকাশ প্রতিদিনই ঘটে। তারপরও পৃথিবীর মানুষ বছরের একটা দিনকে বাবার জন্য রেখে দিতে চায়। যেমনটা মায়ের জন্য করা হয় মা দিবস।

বাংলা ভাষায় যাকে আমরা বাবা অথবা আব্বু ডাকি, জার্মান ভাষায় তাকে ডাকা হয় ফ্যাট্যা। ড্যানিশ ভাষায় ফার। আফ্রিকান ভাষায় ভাদের। চীনা ভাষায় বা। ডাচ ও কানাডিয়ান ভাষায় পাপা। ইংরেজি ভাষায় ফাদার, ড্যাড, পাপা। হিব্রু ভাষায় আব্বাহ। হিন্দিভাষায় পিতাজী। ভাষাভেদে শব্দ কিংবা স্থানভেদে উচ্চারণের বদল হলেও রক্তের টান কিন্তু এক। বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা সবার উর্ধে।

ইসলামী নীতি অনুযায়ী বাবা দিবস পালনের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু ইসলামে বাবা-মায়ের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁদের সেবা-যত্ন করা, তাঁদের সঙ্গে সদাচারণ করার নির্দেশ দেয়া আছে। তাঁদের মান্য করা ইসলামের দৃষ্টিতে ফরজ। পবিত্র কোরআন শরীফে বলা হয়েছে : ‘ তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন-তিনি ছাড়া অন্য কারও ইবাদত না করতে এবং বাবা মায়ের প্রতি সদব্যবহার করতে ( সূরা বনি ইসরাইল-২৩)।

আজ থেকে ১৫ বছর আগে অর্থাৎ ২০০৪ সালে ২৩ অক্টোবর আমি আমার প্রিয় চিকিৎসক বাবাকে ( ডা. আবদুল মান্নান) হারিয়েছিলাম। ৮২ বছর বয়সে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেছিলেন। মৃত্যুর ঠিক কয়েক মিনিট আগেও তিনি আমাকে পাশে বসিয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় উপদেশমুলক কিছু কথা বলেছিলেন। মৃত্যু যখন তাঁর চোখের একেবারে সন্নিকটে-তখনও তিনি সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করছিলেন। চোখের অশ্রু বিসর্জন দিয়ে তিনি বারবার নিজের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরার চেষ্টা করছিলেন । সন্তানদের প্রতি একজন বাবার এতটুকু দরদ মৃত্যুকেও তুচ্ছ মনে হয়েছিল।

যদিও এই বাবা তাঁর সন্তানদের জন্য অনেক কিছু দিয়ে গেছেন। লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করেছেন। তাইতো বাবার তুলনা অন্য কাউকে দিয়ে হয় না। ১৫ বছর ধরে বাবার স্মৃতি হাতড়ে বেড়াচ্ছি। বাবার নির্দেশ মাঝেমধ্যে অমান্য করলে বাবা রেগে বলতেন- ‘যখন আমি থাকব না-তখন বুঝবি’।

এখন আমি অনেক কিছু বুঝছি। আমার দুই সন্তানকেও মাঝেমধ্যে একই কথা বলি । তারা যদি শোনে ভালো, না শুনলে তারাও আমার মত হারিয়ে বুঝবে। আমার মত তারাও একদিন আকাশের দিকে তাকিয়ে অলক্ষ্যে বাবার স্মৃতি হাতড়াবে।

পৃথিবীতে যদি কোনো নি:স্বার্থ ভালোবাসা থাকে-তা হলো, সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের ভালোবাসা। সন্তানের জন্য বাবা-মা নিজের জীবন উৎসর্গ করতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না।

মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্টাতা সম্রাট বাবর সন্তানের প্রতি বাবার ভালোবাসার এক অনন্য উদাহরণ হয়ে আছেন। তিনি সন্তান হুমায়ুনের জীবনের বিনিময়ে নিজের জীবন বিসর্জন দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন নি।

তবে কিছু সন্তান আছে-যারা বাবা মায়ের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করেন। বাবা দিবস তাদের চোখের সামনের পর্দাটা খুলে দিক। বাবা-মার প্রতি তারা যত্নশীল হোক। দৃঢ় হোক তাদের পারিবারিক বন্ধন। সমাজে বাবার যে গুরুত্ব তা আলাদাভাবেই তুলে ধরাই হোক বাবা দিবসের মূল উদ্দেশ্য। পৃথিবীর সকল বাবার জন্য শুভকামনা।

লেখক : আব্দুল কুদ্দুস রানা,প্রথম আলো,কক্সবাজার অফিস
১৬ জুন-২০১৯

272 ভিউ

Posted ৫:৩৭ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৬ জুন ২০১৯

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com