কক্সবাংলা রিপোর্ট(১৫ ডিসেম্বর) :: সাপ্তাহিক ছুটি ও বিজয় দিবসসহ টানা তিন দিনের ছুটির সুযোগ পেয়ে ২ লক্ষাধিক পর্যটকের ঢল নেমেছে দেশের প্রধান অবকাশযাপন কেন্দ্র কক্সবাজারে ।দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা কক্সবাজারের বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতে ছুটে আসছে। মূলত গত বৃহস্পতিবার থেকেই কক্সবাজারে পর্যটকের ভিড় জমে যায়। শুক্রবার পড়ন্ত বিকালে সৈকতের বালুচর হয়ে পড়ে লোকে-লোকারণ্য। আর শনিবার ছিল ত্রাহি অবস্থা। আর কক্ষ ভাড়া না পেয়ে অনেক পর্যটক সমুদ্রসৈকত ও সড়কে পায়চারি করে সময় পার করছেন কেউ কেউ।রোববার এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। পর্যটকের ঢল নামায় কক্সবাজারের হোটেল-মোটেলগুলোতে ঠাঁই মিলছে ।৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শহরের ৪৫০টির বেশি হোটেল, মোটেল ও কটেজের সব কক্ষই অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। আর এ সুযোগে কলাতলীর হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউসগুলোতে চলছে গলাকাটা ভাড়া বাণিজ্য। শনিবার প্রতিটি রুম ব্রিক্রি হয়েছে ২৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পযন্ত।
কক্সবাজারের হোটেল মালিকদের মতে, প্রতিবছর দুই ঈদ ছাড়াও বছরের শেষ মাস বিজয় দিবসের ছুটি ও থার্টিফার্স্ট’র ছুটিতে কক্সবাজারে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। এসময় হোটেল-মোটেলে রুম খালি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তবে গত কয়েক বছরে শহরে এবং শহরের বাইরে সমুদ্র তীরবর্তী উপ-শহরগুলোসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র ঘিরে বেশ কিছু নতুন হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস চালু হওয়ায় কক্সবাজারে আগের মতো থাকার সংকট নেই। বর্তমানে কক্সবাজার শহরেই রয়েছে চার শতাধিক আবাসিক হোটেল ও গেস্টহাউস। এখানে প্রতিদিন লক্ষাধিক পর্যটকের থাকার সুবিধা রয়েছে।
ছুটির সুযোগে পর্যটকদের একটি বড় অংশ ছুটেন সেন্ট মার্টিনস দ্বীপে। এবারের মৌসুমে টেকনাফ থেকে ৪টি জাহাজ সেন্ট মার্টিনস দ্বীপে চলাচল করছে। দৈনিক ৪টি জাহাজে বেশি হলেও এক হাজারের মতো পর্যটক বহন করার কথা। অথচ বর্তমানে দৈনিক দুই হাজারেরও বেশি পর্যটক পরিবহন করা হচ্ছে। তারপরেও প্রতিদিন আরো হাজার-দুয়েক ভ্রমণকারী জাহাজে সিটের অভাবে সেন্ট মার্টিনস যেতে পারছেন না।
আবার অনেক পর্যটক কক্সবাজার থেকে মহেশখালী,, টেকনাফ, রামু, চকরিয়াসহ জেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে যাচ্ছেন। টেকনাফ থানা আঙিনায় স্থাপিত ঐতিহাসিক প্রেমকাহিনির ‘মাথিন কূপ’ দেখতে আসছেন হাজারো পর্যটক। সেখান থেকে তাঁরা ছুটছেন নাফ নদীর মিয়ানমার সীমান্ত হয়ে সেন্ট মার্টিন। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, চারটি প্রমোদতরি (জাহাজ) ও ৩০টির বেশি ট্রলার নিয়ে প্রতিদিন অন্তত ১২ হাজার পর্যটক সমুদ্র পাড়ি দিয়ে প্রবাল দ্বীপে আসছেন। সেখানকার ১২২টি হোটেল, মোটেল ও কটেজও ১ জানুয়ারি পর্যন্ত বুকিং হয়ে গেছে।
কলাতলীর লাবণী পয়েন্ট সৈকতের পাশেই হোটেল কল্লোল, হোটেল মিডিয়া ইন্টারন্যাশনাল, সি ওয়ার্ল্ড, অভিসার, দ্য কক্স টুডে, সি গার্ল, প্রাসাদ প্যারাডাইস, ওশ্যান প্যারাডাইস, সায়মান বিচ রিসোর্ট, লং বিচ, সি প্যালেসসহ ১৬টি তারকা মানের হোটেলের সংগঠন ‘কক্সবাজার হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের’ সহসভাপতি মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, শুক্রবার এই ১৬টি হোটেলে রাতযাপন করেন প্রায় ১০ হাজার পর্যটক। কক্ষ না পেয়ে বহু পর্যটক ফিরে গেছেন। ২৩ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত এসব হোটেলের সব কক্ষই অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি শফিকুর রহমান জানান, দুই-তিন দিনের ছুটি পেলেই কক্সবাজারে পর্যটকে ভরে যায়। তাই এবার জাতীয় নির্বাচনের ১৫ দিন আগে ছুটি পাওয়ার সুযোগে রেকর্ডসংখ্যক পর্যটক আসছে কক্সবাজারে। ইতোমধ্যে প্রায় হোটেলে পযটকে ঠাসা। আশা করি এ ধারা ভোটের পরও অব্যাহত থাকবে।
কক্সবাজারের তারকা মানের হোটেল সী-গালের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরুল কায়েস রুমী বলেন- ‘বেড়ানোর সময় হলেও আসন্ন নির্বাচনের কারণে এবার ভ্রমণকারীর সংখ্যা কমে গেছে। তবে নির্বাচনের আগেই দেশের নানা প্রান্তের লোকজন বেড়ানোর সময়টি এ সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি বাছাই করে নিয়েছেন। এ কারণেই এ সপ্তাহের তিনদিন কক্সবাজারের কোনো হোটেলেই কোনো কক্ষ খালি নেই।’ তবে আগামী দু’দিন থেকে কক্সবাজারে আবারো ভিড় কমে যাবে বলে জানান তিনি।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন-টোয়াক বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম কিবরিয়া খান জানান, যেহেতু জাতীয় নির্বাচনের আগে তিন দিনের ছুটি তাই ভ্রমণ পিপাসুদের কক্সবাজারে ছুটে আসছে। এ বিবেচনায় কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ছাড়াও সেন্টমার্টিন, হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানী, সাফারি পার্ক, মেদাকচ্ছপিয়া ন্যাশনাল পার্ক ও মহেশখালীর আদিনাথ ও রামু বৌদ্ধ বিহারে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। এটা পর্টন ব্যবসায়ীদের জন্য অবশ্যই সুসংবাদ।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত বেসরকারি সংস্থা ‘ইয়াছির লাইফ গার্ড স্টেশনের’ পরিচালক মোস্তফা কামাল বলেন, শুক্রবার সৈকতের চার-পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় সমবেত হয়েছিলেন প্রায় আড়াই লাখ পর্যটক। বিপুলসংখ্যক পর্যটক সামাল দিতে ২০ জন উদ্ধারকর্মীকে হিমশিম খেতে হয়েছে। শনিবারও একই অবস্থা।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, ‘বিজয় দিবসসহ তিনদিনের ছুটিতে শহরে পর্যটকদের চাপে তীব্র যানজটের যাতে সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি গত কয়েকদিন ধরে সড়কে সংস্কারও করা হয়েছে।’
পর্যটকের ভিড় উপলক্ষে কক্সবাজার জেলা পুলিশ এবং ট্যুরিস্ট পুলিশও বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান জানান, সৈকতে পর্যটকের ভিড়ের সুযোগে যাতে কোনো ছিনতাই হতে না পারে বা পর্যটকরা যাতে কোনো প্রতারণার শিকার না হন সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে পর্যটক হয়রানি রোধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালতের নজরদারি থাকবে বলে জানিয়েছেন, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, আবাসিক হোটেল ও রেস্তোরাঁয় অতিরিক্ত টাকা ও ভেজাল খাবার পরিবেশন করলে ব্যবস্থা নেবে এ আদালত।
Posted ৬:৪০ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta