কক্সবংলা ডটকম(২৮ ফেব্রুয়ারি) :: গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৩৪ থেকে ৭০ পয়সা পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। আর এই নতুন দাম মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই কার্যকর হতে যাচ্ছে। মার্চ থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারের দামের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে জ্বালানি তেলের দাম।
সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন নসরুল হামিদ।
মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানান, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন যেকোনো সময় প্রকাশ করা হবে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে অনুমোদন দিয়েছেন। এটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। ভেটিং হলেই প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
এ ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার। গতকাল সরকারের নির্বাহী আদেশে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে গ্যাসের জন্য নতুন দাম ঘোষণা করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী একে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি না বলে বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয় বলছেন। তিনি বলেন, খরচের চেয়ে বেশি দাম নিলে মূল্যবৃদ্ধি বলা যেত। এখন ঘাটতি অনেক, এজন্য দাম সমন্বয় করা হচ্ছে এবং তা খুবই কম পরিমাণে।
নসরুল হামিদ বলেন, কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার সময় মার্কিন ডলারের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা ধরে হিসাব করা হয়েছিল। এখন ডলারের দাম ৪০ টাকা বেড়ে গেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচও অনেক বেড়েছে। জ্বালানি খরচের ওপর ভিত্তি করে সারা বিশ্বেই দাম সমন্বয় করা হয়।
তেল-গ্যাস ও কয়লার আন্তর্জাতিক বাজারদর ক্ষেত্র বিশেষে একই থাকলেও আগের চেয়ে ডলারপ্রতি ৪০ টাকার বেশি খরচ হচ্ছে। এখানেই বিশাল গ্যাপ তৈরি হয়েছে। আমরা ধরে নিচ্ছি আগামী তিন বছর ডলারের দাম ১১০ টাকা থাকবে, সেভাবে প্রাক্কলন করা হয়েছে। এখনো কয়লা থেকে পাওয়া বিদ্যুতের দাম সবচেয়ে কম।
পরমাণু বিদ্যুতের দাম সাড়ে ৫ টাকার মতো পড়বে। ফার্নেস অয়েলে ১৪ থেকে ২০ টাকার মতো পড়ছে। যে কারণে কয়লার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। যেভাবে হোক কয়লা সরবরাহ চেইন ঠিক রাখতে হবে। তাদের বিল পেমেন্ট দিতে হবে যাতে কয়লা আমদানি ও সরবরাহে কোনো সংকট না হয়।
সরকার উচ্চ ব্যয়ের ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ‘কুইক রেন্টাল’ ও ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ থেকে বেরিয়ে এসেছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র আসছে। দুই বছরে২ হাজার মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎও আসবে। এখন যে মূল্য সমন্বয় হচ্ছে সেটা ডলারের দামের কারণে। ভর্তুকি থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য এ সমন্বয়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি লাভ করতাম তাহলে দাম বাড়ছে বলা যেত। আমরা খরচ উঠাতে চাচ্ছি। খুবই সামান্য পরিমাণে দাম বাড়তে পারে। লাইফ লাইন গ্রাহকের (৭৫ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারী) মাসের বিল ২০ টাকার মতো বাড়তে পারে। এখন তারা যদি একটু সাশ্রয়ী হন, তাহলে বিল আগের অবস্থায় থাকবে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে গ্রাহকদের মিতব্যয়ী হতে উদ্বুদ্ধ করা।
তিনি আরও বলেন, ১ কোটি ৪০ লাখ গ্রাহক রয়েছে যাদের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৪ টাকার মতো নেওয়া হয়। সেখানে হয়তো ৩০ থেকে ৩৫ পয়সার মতো বাড়তে পারে।
তবে যারা বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, বাসায় দুই থেকে তিনটি এসি ব্যবহার করে তাদের বিল ৭০ পয়সার মতো বাড়তে পারে। তাদের মাসের বিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বেড়ে গেলেও কোনো সমস্যা হবে না। সরকার ভর্তুকি থেকে বের হয়ে আসতে চাইছে। এখন রাজস্ব থেকে ভর্তুকি দিচ্ছে এটি খুবই ব্যয়বহুল।
নসরুল হামিদ বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে দৈনিক ২ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হলে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ অর্ধেকে নেমে আসত। যে কারণে বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদনে ৭০ পয়সার মতো বাড়িয়ে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো হবে।
সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি গ্রাহক পর্যায়ে নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। তার ৩ সপ্তাহ আগে ১২ জানুয়ারি গড়ে ৫ শতাংশ বাড়িয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়। দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। কিন্তু গ্রীষ্মে উৎপাদন করা হয় ১৩ থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট। শীতে তা নেমে আসে ৮ থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াটে। এখন পর্যন্ত দিনে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে গত বছরের ১৯ এপ্রিল, ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট।
সারা বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার একটি বড় অংশ অলস থাকে। এর বিপরীতে সরকারকে কেন্দ্রগুলো বসিয়ে রাখার জন্য বিপুল অঙ্কের কেন্দ্র ভাড়া দিতে হয়। যা ক্যাপাসিটি চার্জ নামে পরিচিত।
বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশ্লেষণ বলছে, গত বছর সক্ষমতার ৪১ শতাংশ অলস ছিল। এদিকে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৬ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে সরকারকে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের দাম বেড়েছে :
বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রতি ইউনিট গ্যাসের বর্তমান দাম ১৪ টাকা থেকে ১৪ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন দাম চলতি মাস থেকেই কার্যকর হবে। এতে শিল্পে উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (ক্যাপটিভ) জন্য ইউনিট প্রতি গ্যাসের দাম ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা করা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ১৮ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশ জারি করে গ্যাসের দাম গড়ে ৮২ শতাংশ বাড়ানো হয়। সে সময় সর্বোচ্চ ১৭৯ শতাংশ বাড়ানো হয় বিদ্যুৎ খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম। একই সময়ে শিল্পেও গ্যাসের দাম বাড়িয়ে তিন গুণ করা হয়। যা গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। গত বছর ৫ টাকা ২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে বিদ্যুৎ খাতের গ্যাসের দাম ১৫ টাকা করা হয়েছিল। আর ক্যাপটিভে ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক ব্যাখ্যায় বলা হয়, প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন, আমদানি, সরবরাহ মূল্যের সঙ্গে বিক্রয়মূল্যের পার্থক্যের কারণে সরকারকে এ খাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ৬ হাজার ৫৭০ কোটি টাকার বেশি ভর্তুকি দিতে হয়। সেচ মৌসুম, রমজান মাস ও গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের চাহিদা আরও বেশি থাকে। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে এলএনজির বর্তমান বাজারমূল্য ও ডলার বিনিময় হার বিবেচনায় এখন ভর্তুকি ৬ হাজার কোটি টাকার মধ্যে রাখা সম্ভব হবে।
জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় মার্চ থেকেই :
আসছে মার্চ মাস থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে জ্বালানি তেলের দাম। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, নতুন এই পদ্ধতিতে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের বিষয়টি আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর করবে।
তিনি বলেন, এই পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়লে বাংলাদেশেও বাড়বে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে বাংলাদেশেও কমানো হবে।
Posted ২:৫০ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta