কক্সবাংলা ডটকম(৭ ডিসেম্বর) :: বিশ্বে বেকারত্বের হার বর্তমানে প্রায় ৪০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে অবস্থান করছে। শ্রমবাজারের দুর্দান্ত এ ফলাফলের পেছনে বেশকিছু পরিবর্তনের অবদান রয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। এর মধ্যে নমনীয় শ্রমচর্চা, কম মজুরি ও নিম্নতম সুদের হার অন্যতম। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ইউবিএসের এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।
উন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতির ৪৮টি দেশের ওপর পরিচালিত জরিপের মাধ্যমে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে ইউবিএস। বিশ্বের মোট অর্থনৈতিক উৎপাদনের ৮৪ শতাংশই এ দেশগুলো থেকে আসে। প্রতিবেদনে ইউবিএস জানিয়েছে, ২০১০ সালে বিশ্বের মোট শ্রমশক্তিতে বেকারত্বের হার ছিল ৮ শতাংশ, যা চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ৫ দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছে। এটি ১৯৮০ সালের পর সর্বনিম্ন বেকারত্বের হার; সে সময় কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ৫ শতাংশ।
ইউবিএসের প্রধান অর্থনীতিবিদ আরেন্দ কাপ্তিন বলেন, আর্থিক সংকটের পর থেকে বৃহত্তর শ্রমবাজারে নমনীয়তা অনেক দেশেই বেকারত্বের গতানুগতিক হার কমাতে সহায়তা করেছে। এ নমনীয়তার মধ্যে নিম্ন মজুরি ও গিগ অর্থনীতির আবির্ভাবের মতো বিষয় রয়েছে।
উল্লেখ্য, গিগ অর্থনীতি বা গিগ ইকোনমি বলতে মূলত সে অবস্থাকে বোঝায়, যখন অস্থায়ী ও শিথিল শর্তে নিয়োগের পরিমাণ বেড়ে যায়। কোম্পানিগুলো পূর্ণকালীন কর্মী নিয়োগের পরিবর্তে ফ্রিল্যান্সার বা স্বতন্ত্র চুক্তির মাধ্যমে কাজ আদায় করে নেয়।
এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেয়া পূর্বাভাসেও বলা হয়েছে, চলতি বছর উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোয় বেকারত্বের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ, যা সত্তরের দশকের পর সর্বনিম্ন হার। অন্যদিকে জাতিসংঘের শ্রমবিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) জানুয়ারিতে জানিয়েছিল, চলতি বছর বেকারত্ব হার কমে সাড়ে ৫ শতাংশে দাঁড়াবে।
ইউবিএসের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০০২ সালে পোল্যান্ডে বেকারত্বের হার ছিল ২০ শতাংশ। বর্তমানে তা কমে সেপ্টেম্বরে ৬ দশমিক ১ শতাংশে নেমেছে। ক্রোয়েশিয়া ও স্লোভাকিয়াতেও একইভাবে উল্লেখযোগ্য হারে বেকারত্ব কমেছে। মূলত ইউরোপের সরবরাহ শৃঙ্খল ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নতুন সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণেই এ পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে।
এছাড়া শুধু যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের মতো শিল্পোন্নত দেশ নয়, ইন্দোনেশিয়া ও রাশিয়ায় কর্মহীন মানুষের সংখ্যা কমে আসায় বিশ্বে সার্বিক বেকারত্ব কমেছে।
ইউবিএসের এ তুলনামূলক প্রতিবেদনটি ওইসিডির মতো সংস্থাগুলোর দেয়া বেকারত্বের সংজ্ঞার আলোকে তৈরি করা হয়েছে। যেখানে কেউ এক সপ্তাহের জন্যও সবেতনে কাজ করলে তাকে কর্মরত হিসেবে ধরে নেয়া হয়।
ইউবিএসের প্রকাশিত উপাত্ত বলছে, শ্রমবাজারের সমৃদ্ধ অবস্থা শেষ হতে এখনো দেরি রয়েছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে উন্নত বিশ্বে বার্ষিক কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ বছরের সর্বোচ্চ। মস্কোভিত্তিক বিনিয়োগকারী ব্যাংক রেনেসাঁ ক্যাপিটালের প্রধান অর্থনীতিবিদ চার্লস রবার্টসন বলেন, এটি ‘রোবট আমাদের কাজ ছিনিয়ে নিচ্ছে এমন থিসিসের’ জবাব। তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান বিশ্ব এ-যাবত্কালের মধ্যে সবচেয়ে স্বয়ংক্রিয় (অটোমেডেট), তবে এর সঙ্গে বর্তমানে বেকারত্বের হার সবচেয়ে কম।’
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বল্প সুদের হার ‘জম্বি’ কোম্পানিগুলোকে টিকে থাকার সুযোগ করে দিচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন রবার্টসন। এছাড়া বিশ্বায়নের কারণে মজুরি হ্রাস, জনসংখ্যা এবং মধ্য ও পূর্বাঞ্চলীয় ইউরোপে শ্রমশক্তির সংকোচন নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছেন তিনি।
ইউবিএস আরো জানায়, গ্রিস, ইতালি, স্পেন ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো হাতেগোনা কিছু দেশে বেকারত্ব ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের সময়ের চেয়ে ২ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি।
অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের গ্লোবাল ম্যাক্রো রিসার্চ বিভাগের প্রধান গ্যাব্রিয়েল স্টার্ন বেকারত্ব হারের অব্যাহত পতনকে ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে বড় বিস্ময়গুলোর একটি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি আরো জানান, ২০১৬ সাল থেকে আইএমএফ শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি৭ গ্রুপের কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধিকে অবমূল্যায়ন করে আসছে। শ্রমবাজারে নমনীয়তা থাকার কারণে মজুরি কম রাখা যাচ্ছে, যা কোম্পানিগুলোকে আরো কর্মী নিয়োগে আগ্রহী করে তুলছে।
অবশ্য কিছু দেশে মজুরি প্রবৃদ্ধিও হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইউবিএসের অর্থনীতিবিদ কাপ্তিন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মজুরি প্রবৃদ্ধি বর্তমানে নয় বছরের সর্বোচ্চ এবং ইউরো অঞ্চলে ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এ দেশগুলোর নিয়োগদাতারা কর্মী খুঁজতে হিমশিম খাচ্ছেন।
Posted ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta