শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক অস্ত্র ক্রয় ও তেল আমদানিকে ঘিরে উষ্ণতা হারাচ্ছে

শনিবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮
334 ভিউ
ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক অস্ত্র ক্রয় ও তেল আমদানিকে ঘিরে উষ্ণতা হারাচ্ছে

কক্সবাংলা ডটকম(১ সেপ্টেম্বর) :: রাশিয়ার কাছ থেকে দূরপাল্লার এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কিনতে যাচ্ছে ভারত। ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য এ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কিনতে দেশটির ব্যয় হবে প্রায় ৬০০ কোটি ডলার।

বিশ্বের অন্যতম সেরা এ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনাবেচা নিয়ে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে শিগগিরই একটি চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে। এ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে যে আরো মজবুত করে তুলবে তা নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু এর ফলে অন্যরকম এক কূটনৈতিক সংকটে পড়ে যেতে পারে দেশটি।

কারণ রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের এস-৪০০ কেনার খবরে নাখোশ যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পেন্টাগন। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কেউ যদি রাশিয়ার সঙ্গে কোনো ধরনের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয়ে চুক্তি করে, তাহলে মার্কিনিরাও ছেড়ে কথা বলবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন পেন্টাগনের এক কর্মকর্তা।

শুধু রাশিয়া নয়, ইরান ইস্যুতেও ভারতের সঙ্গে মনকষাকষির অবকাশ রয়েছে মার্কিনিদের। ইরানের ওপর থেকে তুলে নেয়া নিষেধাজ্ঞা সম্প্রতি আবার বহাল করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্যদিকে ইরানের সঙ্গে গভীর বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখা দেশগুলোর অন্যতম হচ্ছে ভারত। এখনো তেহরানের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে জ্বালানি তেল কিনে চলেছে দেশটি।

জুলাইতে দেশটি থেকে ভারতের জ্বালানি তেল আমদানির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় রেকর্ড সর্বোচ্চে। ভবিষ্যতেও এ আমদানি যে শূন্যে নামিয়ে আনা হবে না, সে বিষয়টিও পরিষ্কার করেছে ভারত। সব মিলিয়ে বলা চলে, ভারতের রাশিয়া থেকে অস্ত্র ক্রয় ও ইরান থেকে জ্বালানি তেল আমদানিকে ঘিরে উষ্ণতা হারাচ্ছে ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির সম্পর্ক।

ইউক্রেনের কাছ থেকে ২০১৪ সালে ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ কেড়ে নেয় রাশিয়া। ঘটনাবহুল ক্রাইমিয়া সংকট সে সময় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ আলোড়ন তোলে। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি অবস্থান নেয় বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। ক্রাইমিয়া উপদ্বীপকে অঙ্গীভূত করে নেয়ায় রাশিয়ার ওপর বেশকিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ওয়াশিংটন। এর মধ্যে অন্যতম হলো, কোনো দেশ যদি রাশিয়ার সঙ্গে কোনো ধরনের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার চুক্তি করে বা গোয়েন্দা তথ্য-সংক্রান্ত কার্যক্রমে জড়ায়, তাহলে ওই দেশটিও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে যাবে।

বিষয়টি নিয়ে পেন্টাগনের এক শীর্ষ কর্মকর্তার মন্তব্য হলো, ভারত যদি রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনে, তাহলে দেশটিকে যে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হবে না; সে বিষয়ে কোনো ধরনের নিশ্চয়তা দিতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র।

র্যান্ডাল শ্রিভার নামের ওই কর্মকর্তা সম্প্রতি এ মন্তব্য করেন। তার বক্তব্যে দুটি বিষয়ের আভাস পাওয়া যায়। প্রথমত, ভারতের সঙ্গে যেকোনো অবস্থায় সুসম্পর্ক বজায় রাখবে যুক্তরাষ্ট্র, এ ধারণা ঠিক নয়। দ্বিতীয়ত, এ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ক্রয়সংক্রান্ত চুক্তির বেশ শক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাবে যুক্তরাষ্ট্র।

র্যান্ডাল শ্রিভার বলেন, ‘আমি এখানে বসে একথা বলতে পারি না যে, তাদের ছেড়ে দেয়া হবে বা কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হবে। এ সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব শুধু প্রেসিডেন্টের।’

নতুন এক প্রতিরক্ষা বিলের মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে এ ছাড় দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে শ্রিভার বলতে চাইছেন, ছাড় ঘোষণার ক্ষমতা থাকার অর্থ এই নয় যে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ ঘটাবেন। যদিও মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে এ ছাড় দেয়ার পক্ষে।

রাশিয়ার কাছ থেকে ৬০০ কোটি ডলারে দূরপাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য  এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে এসেছে ভারত। চলতি বছরই এ নিয়ে এক চুক্তি সই হবে। রাশিয়ার কাছ থেকে এর আগেও বেশকিছু যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন কিনেছে ভারত।

বিমান বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা বর্তমান সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ হিসেবে বিবেচিত। শ্রিভারের ভাষ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র এ খবরে উদ্বিগ্ন। এমনকি ওয়াশিংটন এ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসতেও রাজি বলে জানিয়েছেন তিনি।

শুধু রাশিয়া নয়, ইরান ইস্যুতেও মার্কিন নীতির বিরুদ্ধ স্রোতে সাঁতার কাটছে ভারত। ক্ষ্যাপাটে নীতির প্রয়োগ ঘটিয়ে ইরানের ওপর থেকে তুলে নেয়া নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এখন পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা পালনের কোনো লক্ষণ দেখায়নি ভারত। বরং জুলাইয়ে ইরান থেকে দেশটির অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে রেকর্ড সর্বোচ্চে।

যুক্তরাষ্ট্র চাইছে, ভারত ইরান থেকে জ্বালানি তেল আমদানি বন্ধ করে দিক। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে, ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা না মানা দেশগুলোকেও একই পরিণতি ভোগ করতে হবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প কড়া গলায় বলেছেন, ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যে লিপ্ত কোনো দেশের সঙ্গে ব্যবসা করবে না যুক্তরাষ্ট্র।

ট্রাম্প প্রশাসনের এ আস্ফাালন খুব একটা কার্যকর হয়নি। ইরান থেকে শীর্ষ জ্বালানি তেল আমদানিকারক চীন যথারীতি তার আমদানি বহাল রেখেছে। জুলাইয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, খোদ ট্রাম্প প্রশাসনেরই ধারণা, নিষেধাজ্ঞা বহালের পর চীন ইরান থেকে জ্বালানি তেল আমদানি না কমিয়ে বরং বাড়াবে।

অন্যদিকে ইরান থেকে জ্বালানি তেল আমদানিতে দ্বিতীয় শীর্ষস্থানীয় দেশ ভারতের ওপর  আমদানি বন্ধের জন্য ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করে গেছে ট্রাম্প প্রশাসন। জুনের শেষ সপ্তাহে ভারত সফরে আসেন জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি। সে সময় ইরানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়টি পুনরায় ভেবে দেখার জন্য নয়াদিল্লির ওপর চাপ প্রয়োগ করেন তিনি।

সে সময় এক ভারতীয় চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাত্কারে নিকি হ্যালি বলেন, ‘আমি ভারতের ভবিষ্যতের কথা ভাবি। এবং যেখানে যেখানে তারা নির্ভরশীল, সেখান থেকে তাদের সম্পদ আহরণের সামর্থ্যের ভবিষ্যৎ নিয়েও ভাবি। ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক যাতে পুনর্বিবেচনা করে দেখা হয়, সে বিষয়েও তাদের উৎসাহ দিচ্ছি।’

নিকি হ্যালির এ ঘোরানো-প্যাঁচানো বক্তব্যের অর্থ হলো, যুক্তরাষ্ট্র চাইছে না ভারত ইরানের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখুক।

প্রাথমিকভাবে ভাবা হচ্ছিল, ভারতের ওপর মার্কিনি চাপের আছর পড়তে শুরু করেছে। জুনে দেশটির ইরান থেকে তেল আমদানি হ্রাস পাওয়ার বিষয়টিকেও এর ইঙ্গিত হিসেবেই ভেবে নিয়েছিল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অয়েলপ্রাইসডটকমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্ভবত ইরানের কোনো এক গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নের কাজ ভারতীয় প্রতিষ্ঠানকে না দেয়ার প্রতিক্রিয়ায় এ সময় দেশটি থেকে জ্বালানি তেল আমদানি কমিয়েছিল ভারত।

পরের মাসেই অর্থাৎ জুলাইয়ে ভারতের ইরান থেকে জ্বালানি তেল আমদানি বেড়ে দাঁড়ায় রেকর্ড সর্বোচ্চে। এ সময় ইরান থেকে দৈনিক জ্বালানি তেল আমদানি দাঁড়ায় ৭ লাখ ৬৮ হাজার ব্যারেলে। যেখানে গত বছরের জুলাইয়ে এর পরিমাণ ছিল দৈনিক ৪ লাখ ১৫ হাজার ব্যারেল। অর্থাৎ ২০১৭ সালের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের জুলাইয়ে দৈনিক জ্বালানি তেল আমদানি বেড়েছে প্রায় ৮৫ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা একতরফা নিষেধাজ্ঞা অনুসরণ না করার ঘোষণা দিয়েছে নয়াদিল্লি। বরং এক্ষেত্রে জাতিসংঘ যদি কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তাহলে সেটিকেই অনুসরণ করা হবে বলে জানিয়েছে ভারত।

সমস্যা হলো ভারতের অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ব্যবস্থার প্রতি অনেকাংশেই সংবেদনশীল। ফলে শেষ পর্যন্ত ইরান বিষয়ে কোনো এক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে বাধ্য হতে পারে ভারত। তাই বলে ইরান থেকে আমদানি একেবারেই শূন্যে নামিয়ে আনা হবে না।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স নয়াদিল্লির এক শীর্ষ কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, ইরান থেকে জ্বালানি তেল আমদানি বন্ধ করবে না ভারত। বরং এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ছাড় আদায়ের চেষ্টা করবে নয়াদিল্লি।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘অবশ্যই আমরা (ক্রয়ের দিক থেকে) শূন্যে নেমে আসব না।’

আগামী বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার উচ্চপর্যায়ের এক সংলাপের পরই এ বিষয়ে ভারত তার কৌশল চূড়ান্ত করবে বলে ওই কর্মকর্তার বক্তব্যে উঠে আসে। টু প্লাস টু ডায়ালগ নামে পরিচিত এ সংলাপে মার্কিন তরফ থেকে সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস এবং ভারতীয় পক্ষে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমন অংশ নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

এরই মধ্যে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে দেশটির পরিশোধনাগারগুলোকে জ্বালানি তেল আমদানির বিকল্প উৎস খুঁজে রাখতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ ইরান ইস্যুতে এরই মধ্যে বেশ নরম হয়ে এসেছে ভারত। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, ইরানের ওপর আগের দফায় আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বলবৎ অবস্থায় হাতে গোনা যে কয়টি দেশ তেহরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখেছিল; তাদের অন্যতম হলো ভারত। এবারও তার ব্যত্যয় হবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

আল জাজিরা, রয়টার্স, অয়েলপ্রাইসডটকম, অয়েলম্যান ম্যাগাজিন অবলম্বনে

334 ভিউ

Posted ৩:২৯ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com