রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

ভূমিকম্পে মৃত্যুপূরী তুরস্কে এরদোগানকে কি চাপে ফেলেছে?

রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
58 ভিউ
ভূমিকম্পে মৃত্যুপূরী তুরস্কে এরদোগানকে কি চাপে ফেলেছে?

কক্সবাংলা ডটকম ::  ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৫ হাজার ছাড়িয়েছে। নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজারেরও বেশি হতে পারে মনে করছেন জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণবিষয়ক সমন্বয়কারী মার্টিন গ্রিফিথস। তিনি বলেছেন, ভূমিকম্পে দেশ দুটিতে মোট মৃত্যু বর্তমান সংখ্যার দ্বিগুণের বেশি হবে।

৬ ফেব্রুয়ারি, ভোররাতে তুরস্কের মানুষ যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, তখন দেশটির অন্তত ১০টি প্রদেশে আঘাত হানে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প। ১৯৩৯ সালের পর দেশটির মানুষ এমন ভয়ঙ্কর দুর্যোগের মুখোমুখি হয়নি।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পে তুরস্কে ২১ হাজার ৮৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ৭৫ হাজারের বেশি। অন্তত ছয় হাজার ভবন ধসে পড়েছে। সব মিলিয়ে দেশটির এক কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন।

তুরস্কে বিধ্বংসী ভূমিকম্পকে ঘিরে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, এতো বড় মাপের ট্র্যাজেডি এড়ানো যেত কিনা এবং প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সরকার মানুষের জীবন বাঁচাতে আরও কিছু করতে পারতেন কিনা। ১৯৩৯ সালের পর এটাই ছিল সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প।

ভূমিকম্পে এত বেশি প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে ইতোমধ্যে এরদোগান সরকারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিরোধীরা বলছে,  দুই দশক ধরে তুরস্ক শাসন করছে এরদোগানের নেতৃত্বাধীন সরকার। অথচ তারা দেশকে ভূমিকম্প মোকাবিলার উপযোগী করে তুলতে পারেনি।

ভূমিকম্পের পর দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে। অভিযোগ করা হচ্ছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ঘটনার পর তো দূরের কথা, দ্বিতীয় দিনেও উদ্ধার অভিযান শুরু করা যায়নি। অথচ এ ধরনের ভূমিকম্পের পর জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে প্রথম কয়েক ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেটা করতে পারেনি এরদোগান সরকার।
প্রেসিডেন্ট এরদোগান নিজেও বিষয়টি স্বীকার করেছেন যে, এ ধরনের দুর্যোগে যত তাড়াতাড়ি এবং যতটা বিস্তৃত পরিসরে সাড়া দেওয়া দরকার, সেটা করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া নিয়তিকেও দায়ী করেছেন তুর্কি নেতা।

এরদোগান বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা তো সব সময় ঘটেছে। এটি নিয়তির অংশ।’

শুক্রবার আদিয়ামান প্রদেশে উদ্ধার অভিযান পরিদর্শনকালে এরদোগান বলেন, ‘ভূমিকম্পের বিধ্বংসী প্রভাব ৫০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ায় উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। তাছাড়া এ অঞ্চল তীব্র শীতের সম্মুখীন হচ্ছে, আমরা সাম্প্রতিক সময়ে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি। এটি আমাদের সামনে আরেকটি বাধা।’

তুর্কি নেতা স্বীকার করেন যে, এ বিপর্যয়ে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় অংশগ্রহণ করতে পারছে না রাষ্ট্র। আমরা এক লাখ ৪০ হাজারের বেশি লোক নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল গঠন করেছি। কিন্তু বিস্তৃত এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞের পরিমাণ এত বেশি যে, আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত গতিতে উদ্ধার অভিযান ত্বরান্বিত করতে পারিনি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক দীর্ঘ প্রতিবেদনে বলেছে, আসছে মে মাসে দেশটিতে জাতীয় নির্বাচনের কথা রয়েছে। তার আগে এ ভূমিকম্প এরদোগান সরকারের বিভিন্ন বিষয় সামনে এনেছে, যা তাকে পুনরায় ক্ষমতায় আসীন হওয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকিতে ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি যে জাতীয় ঐক্যের আবেদন করেছেন, সেটা উপেক্ষিত হয়েছে।

বলা হচ্ছে, ভৌগোলিকভাবে তুরস্ক দুটি ফল্ট লাইনে অবস্থিত হওয়ায় ভূমিকম্পপ্রবণ। দেশটিতে প্রায়ই ছোটবড় ভূমিকম্প আঘাত হানে। অথচ তুরস্কে ভূমিকম্পের যে বিল্ডিং কোড রয়েছে সেটি ৮০ বছরের পুরনো। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে গত ২০ বছরে এরদোগান সরকার ভূমিকম্প মোকাবিলায় কিংবা ক্ষয়ক্ষতি কমাতে কী উদ্যোগ নিয়েছে?

অপরদিকে অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় তুরস্কের ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা বেশি থাকায় প্রস্তুতিও বেশি থাকার কথা। কিন্তু এবারের ভূমিকম্পের ঘটনায় রাজনীতি ঢুকে পড়েছে বলে অভিযাগ করছেন দেশটির স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধারকারী দলের প্রতিষ্ঠাতা নাসুহ মাহরুকি।

আকুত ফাউন্ডেশনের এই প্রধান বলছেন, যে কোনো দেশে সশস্ত্র বাহিনী সবচেয়ে সংগঠিত ও লজিস্টিকভাবে শক্তিশালী সংস্থাগুলোর অন্যতম। এটা সারা বিশ্বেই স্বীকৃত একটি বিষয়। কারণ সশস্ত্র বাহিনীর হাতে প্রচুর সরঞ্জামাদি থাকে। যেটা তারা দুর্যোগের সময় ব্যবহার করতে পারে।

কিন্তু এরদোগান সরকার তুরস্কের বেসামরিক দুর্যোগ কর্তৃপক্ষকেই এ দায়িত্ব দিয়েছে। যাদের কর্মী রয়েছে মাত্র ১০ থেকে ১৫ হাজার। অন্যদিকে আকুতের মতো বেসরকারি সংস্থাগুলো তিন হাজারের মতো স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে সহায়তা করছে। অথচ ১৯৯৯ সালের বড় ভূমিকম্পেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল দেশটির সশস্ত্র বাহিনী। এরদোগানের সরকার তুর্কি সমাজে সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।

অপরদিকে, বিশেষজ্ঞরা বছরের পর বছর ধরে সরকারকে সতর্ক করেছে যে, দেশটিতে একটি বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। কিন্তু সেই সতর্কতা অনুযায়ী সরকার খুব কমই ব্যবস্থা নিয়েছে। স্বাভাবিক কারণেই এখন প্রশ্ন তুলছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে ইস্তাম্বুল টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির ভূতত্ত্ব প্রকৌশলী অধ্যাপক নাসি গোরুর বলছেন, তিনি স্থানীয় সরকার, গভর্নর এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে সতর্ক করেছিলেন। এমনকি তিনি আদিয়ামান এবং কাহরামানমারাস শহরের উত্তরে পরবর্তী ভূমিকম্পের পূর্বাভাসও দিয়েছিলেন।

এতো বড় ক্ষতির জন্য বিল্ডিং শিল্পের অজ্ঞতা এবং অযোগ্যতাকে দায়ী করছেন তুরস্কের অন্যতম প্রধান ভূমিকম্প প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মুস্তাফা এরদিক। তার ধারণা, বিল্ডিং কোডগুলো অনুসরণ না করার কারণে এতটা বিপর্যয় নেমে এসেছে।

নগর পরিকল্পনাবিদরা অভিযোগ করেছেন, ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে নিয়ম মেনে ভবন তৈরি করা হয়নি। যারা নিয়ম না মেনে ভবন নির্মাণ করেছিল তাদের কিছু আর্থিক জরিমানা করে ছাড় দেওয়া হয়েছিল। ফলে প্রায় ৬০ লাখ ভবন আগের অবস্থাতেই থেকে যায়।

এক লাখেরও বেশি আবেদন জমা পড়েছিল এবারের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি শহর থেকে। বিল্ডিং কোড না মেনে করে বহু ভবন নির্মাণ হয়েছে এসব এলাকায়, বলছেন, ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেলিন পিনার গিরিটলিওগ্লুর। সরকারের সাধারণ ক্ষমা সর্বশেষ ভূমিকম্পে এত ভবন ধসে পড়ার ক্ষেত্রে অন্যতম বড় কারণ বলেও মনে করছেন তিনি।

এদিকে দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি নিয়ে নিন্দা বা সমালোচনা না করে ঐক্য ও সংহতির ডাক দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান।

ক্ষতিগ্রস্ত অনেক অঞ্চল পরিচালনা করছে এরদোগানের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি)।  হাতায় প্রদেশে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে এরদোগান বলেন, যারা রাজনৈতিক স্বার্থে নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছে, তিনি তাদের বরদাস্ত করবেন না।

বিবিসি বলছে, এরদোগান প্রথমে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তার পর প্রেসিডেন্ট ব্যবস্থা চালু করে কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেন। টানা ২০ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন তিনি। এর ফলে দেশটিতে রাজনৈতিক মেরুকরণের সৃষ্টি হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মে মাসে আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে এখনও প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়নি। তবে দেশটির অন্তত ছয়টি বিরোধী দল মিলে এরদোগানের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রার্থী ঘোষণা করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স বা টেবিল অব সিক্স নামে এ জোটের পদক্ষেপ নির্বাচনের আগে এরদোগানের দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রত্যাশায় জল ঢেলে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

58 ভিউ

Posted ১:২৬ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com