কক্সবাংলা ডটকম :: মঙ্গলে (Mars) জলের হদিশ অবশেষে নিশ্চিত হল। কারণ তথ্য অনুসন্ধানের খোঁজে লালগ্রহের মাটি চষে বেড়ানো ‘মার্স রিকনোস্যান্স অরবিটার’ তথা MRO নিশ্চিত করেছে যে, মঙ্গলপৃষ্ঠে নুনের নমুনা মিলেছে। এই লবণের উৎস জলই। আর তা প্রায় ২০০ কোটি বছরের পুরনো।
বিজ্ঞানীদের মতে, নুনের এই প্রাপ্তিই হল প্রথম খনিজ (Minerals) প্রমাণ, যা প্রমাণ করে, মঙ্গলের দুর্গম-অবসবাসযোগ্য মাটিতে তরল রূপে জলের উপস্থিতি ছিল। বস্তুত, মহাকাশবিজ্ঞানীরা এ কথা বারবারই দাবি করে এসেছেন যে লালগ্রহের মাটিতে আগে অফুরান জলের (Water) অস্তিত্ব ছিল এবং প্রায় ৩০০ কোটি বছর আগে তা শুকিয়ে যায়। তাঁদের দাবি ছিল, মঙ্গলে একসময় অগুনতি জলাশয় ছিল, যেখান থেকে এ কথা সহজেই অনুমেয় যে, অণুজীবদের বসতিও নিশ্চিতভাবেই গড়ে উঠেছিল।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জল বাষ্পীভূত হয়ে যায়, মাটি রয়ে যায় শুষ্ক, দুর্গম, পাথুরে। গবেষণামূলক নতুন এই সমীক্ষাটির নেপথ্যে রয়েছে ক্যালটেক-এর বিজ্ঞানীরা। তাঁরাই দাবি করেছেন যে, লালগ্রহের মাটিতে সম্প্রতি তারা যে নুনের নমুনা খুঁজে পেয়েছেন, তার উৎস যে জল, তা ২০০ থেকে ২৫০ কোটি বছর পুরনো। এই নয়া অনুসন্ধান থেকে এক লহমায় এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলল, যা জড়িয়ে রয়েছে মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ত্বের সঙ্গে। বলা ভাল, এই গ্রহেও যে প্রাণের আভাস ছিল, সেই সম্ভাবনা ফের সামনে এল।
এই সমীক্ষার প্রধান গবেষক, এহলম্যান জানিয়েছেন, “গত প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এমআরও আমাদের মঙ্গল গ্রহের হাই রেজলিউশন ছবি, স্টিরিও এবং ইনফ্রারেড তথ্য দিয়েছে। তবে এবারের প্রাপ্তি আগের সব কৃতিত্বকে ছাপিয়ে গিয়েছে। এবার এমআরও আমাদের জানিয়েছে মঙ্গলের পরিবেশ, এবং প্রাচীন সেই সমস্ত হ্রদ সম্পর্কে, যেগুলো লবণাক্ত জলে ভরা ছিল।”
৪৫ দিনের মিশন শুরু হচ্ছে মঙ্গলগ্রহে। মঙ্গল গ্রহের চাঁদ ফোবসে ভ্রমণের জন্য ৪৫ দিনের মিশন শুরু করেছেন চার মানুষ। তবে ঠিক মঙ্গল গ্রহে ভ্রমণ করতে পারবেন না তারা। তবে ভবিষ্যতে মঙ্গলে ভ্রমণের জন্য স্থল প্রস্তুত করে আসবেন তাঁরা। চার সদস্যের ‘ক্রু’ হল একটি গবেষণার অংশ, যা মানবদেহে দীর্ঘমেয়াদী মহাকাশ ভ্রমণের প্রভাব বুঝতে সাহায্য করবে।
চার সদস্যের ক্রু পরবর্তী ৪৫ দিনের জন্য তাদের নতুন বাড়িতে প্রবেশ করেছেন, যেখানে তারা মঙ্গল গ্রহের চাঁদগুলির মধ্যে একটিতে অনুসন্ধান অভিযান পরিচালনা করবেন। মিশনটি হিউম্যান এক্সপ্লোরেশন রিসার্চ এনালগ বা হেরা নামে শুরু হয়েছিল, এই মিশনে একটি টেস্টবেড হিসাবে কাজ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
চার ক্রু সদস্যের মধ্যে রয়েছেন জ্যারেড ব্রডড্রিক, পিয়েত্রো ডি টিলিও, ড্রাগোস মাইকেল পোপেস্কু এবং প্যাট্রিক রিডগলি। ৪৫ দিনের মিশনের সময়, ক্রু-রা নানা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরিচালনা করবেন এবং দীর্ঘ মহাকাশ মিশনের বিচ্ছিন্নতা, বন্দিত্ব এবং সময় বিলম্বের মুখোমুখি হবেন। মিশনটি ১৪ মার্চ শেষ হবে।
হেরা একটি অ্যানালগ মিশন যা গ্রহাণু, মঙ্গল ও চাঁদের নিকটবর্তী। ভবিষ্যতের অনুসন্ধানের জন্য স্থলে নভোচারী, প্রকৌশলী এবং দলকে প্রস্তুত করার জন্যই এই মিশনের আয়োজন করা হয়। নাসা বলেছে, এই ধরনের মিশন এমন ক্ষেত্র হয়, যেখানে মহাকাশ পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পরীক্ষা হয়ে যায়
হেরা মিশনের মধ্যে রয়েছে নতুন প্রযুক্তি, রোবোটিক সরঞ্জাম, যানবাহন, বাসস্থান, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ উৎপাদন, গতিশীলতা, অবকাঠামো এবং স্টোরেজ পরীক্ষার ব্যবস্থা। আচরণগত প্রভাব যেমন বিচ্ছিন্নতা ও বন্দিত্ব, দলের গতিশীলতা, মেনু ক্লান্তি এবং অন্যান্যও পরিলক্ষিত হয় এই হেরা মিশনে।
নাসা জানিয়েছে, মিশনের সময় ক্রু-রা বাইরের বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগে ক্রমবর্ধমান বিলম্ব অনুভব করবে। যখন ক্রু ফোবসে পৌঁছবে, এই বিলম্বটি প্রতিটি পথে পাঁচ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হবে। এই ধরনের বিলম্ব ক্রু এবং তাদের যাত্রার সমন্বয়কারীকে এমনভাবে যোগাযোগের অনুশীলন করতে বাধ্য করবে, যা মিশন অপারেশনগুলিতে প্রভাবগুলি কমিয়ে দেবে।
চার সদস্যের ক্রু পরবর্তী ৪৫ দিনের জন্য তাদের নতুন বাড়িতে প্রবেশ করেছে যেখানে তারা ফোবসে একটি অনুসন্ধান মিশন তৈরি করবে। ৪৫ দিন ব্যাপী মিশনের সময় বিজ্ঞানীরা সাতটি পুরনো বিষয়ে তদন্ত এবং আটটি নতুন বিষয়ে মোট ১৫টি গবেষণা পরিচালনা করবেন। নাসা বলেছে, এই মিশনের অংশ হিসাবে সংগৃহীত ডেটা চাঁদে আর্টেমিস অনুসন্ধান মিশন, পরিকল্পিত চন্দ্র গেটওয়ে আউটপোস্টে ভ্রমণ এবং মঙ্গলে দীর্ঘমেয়াদী মিশনের জন্য মানুষকে প্রস্তুত করতে সহায়তা করবে।
গবেষণা কার্যক্রমের প্রধান বিজ্ঞানী ব্র্যান্ডন ভেসি জানিয়েছেন, হেরা প্রচারাভিযানে আমরা একটি স্বায়ত্তশাসিত পরিবেশে কাজ করে সে সম্পর্কে আরও শিখছি, যেখানে পৃথিবীর সঙ্গে সীমিত যোগাযোগ রয়েছে মাত্র। আসন্ন সিমুলেশনটি হেরার ক্যাম্পেইন ৬-এর দ্বিতীয় মিশন। প্রথম মিশনটি ২০২১-পর ১৫ নভেম্বর শেষ হয়েছে। প্রচারণার অংশ হিসাবে দুটি অতিরিক্ত মিশন অনুসরণ করা হবে। চূড়ান্ত সিমুলেটেড মিশন ২০২২-এর ১২ সেপ্টেম্বর শেষ হবে।
Posted ৮:১৩ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta