কক্সবাংলা ডটকম :: জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বে একটি অনন্য বস্তু খুঁজে পেয়েছেন। যা মাত্র তিন ঘণ্টায় পৌঁছে যেতে পারে পৃথিবী থেকে চাঁদে! মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে ধরা পড়েছে এই অনন্য জিনিস। যা ধরা পড়ে ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপে। এই টেলিস্কোপের প্রথম চিত্রটি নেওয়ার প্রায় এক মাস পরে জানা যায় আসনে ওই অনন্য বস্তুটি আসলে মুক্ত-ভাসমান ব্ল্যাক হোল।
মহাকর্ষীয় মাইক্রোলেনসিং ব্যবহার করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা গভীর মহাকাশে ব্ল্যাকহোলের এই ঘোরাঘুরির ঘটনাটি লক্ষ্য করেছেন। গ্র্যাভিটেশনাল মাইক্রোলেনসিং হল এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাক হোলের পিছনের একটি তারা থেকে আলো পর্যবেক্ষণ করেন, যা ক্ষণিকের জন্য উজ্জ্বল হয় এবং এটির সামনে দিয়ে যাওয়া একটি বস্তুর দ্বারা বিচ্যুত হয়। সেই বস্তুটি ব্ল্যাকহোল হিসেবে চিহ্নিত হয়।
ইউসি বার্কলে থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন যে, অদৃশ্য ওই কমপ্যাক্ট বস্তুর ভর সূর্যের ১.৬ থেকে ৪.৪ গুণের মধ্যে। এই রিপোর্ট অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্সে প্রকাশিত হতে চলেছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন, বস্তুটি একটি ব্ল্যাক হোলের পরিবর্তে একটি নিউট্রন তারকা হতে পারে। নিউট্রন তারাগুলি ঘন, অত্যন্ত কম্প্যাক্ট বস্তু, কিন্তু তাদের মাধ্যাকর্ষণ অভ্যন্তরীণ নিউট্রন চাপ দ্বারা ভারসাম্যপূর্ণ।
ইউসি বার্কলে জ্যোতির্বিদ্যার সহযোগী অধ্যাপক এবং প্রধান লেখক জেসিকা লু একটি বিবৃতিতে বলেছেন, “এটি প্রথম মুক্ত-ভাসমান ব্ল্যাক হোল বা নিউট্রন তারকা যা মহাকর্ষীয় মাইক্রোলেনসিংয়ের মাধ্যমে আবিষ্কৃত হয়েছে। মাইক্রোলেনসিংয়ের মাধ্যমে, আমরা এই নিঃসঙ্গ, কমপ্যাক্ট বস্তুগুলিকে পরীক্ষা করতে এবং তাদের ওজন করতে সক্ষম হয়েছি। আমি মনে করি আমরা এই অন্ধকার বস্তুগুলির জন্য একটি নতুন উইন্ডো খুলেছি, যা অন্য কোনও উপায়ে দেখা যায় না।”
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে করেন, আমাদের গ্যালাক্সিতে অর্থা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির ১০০ বিলিয়ন তারার মধ্যে ১০০ মিলিয়ন ব্ল্যাক হোল বিচরণ করা উচিত। কিন্তু যেহেতু ব্ল্যাকহোল থেকে নিজস্ব কোনও আলো নির্গত হয় না, তাই তাদের শনাক্ত করা অত্যন্ত কঠিন। হাবল স্পেস টেলিস্কোপ দ্বারা পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রায় ছয় বছর কাজের ফলাফল হল এটি।
বিচরণকারী ব্ল্যাক হোলটি আমাদের গ্যালাক্সির ক্যারিনা-ধনু সর্পিল বাহুতে প্রায় ৫ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। যাইহোক, এর আবিষ্কার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের অনুমান করতে দেয় যে, পৃথিবীর নিকটতম বিচ্ছিন্ন নাক্ষত্রিক-ভর ব্ল্যাক হোল ৮০ আলোকবর্ষ দূরে হতে পারে। বার্কলে যখন মাইক্রোলেনসিং ইভেন্টটি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, তখন বাল্টিমোরের স্পেস টেলিস্কোপ সায়েন্স ইনস্টিটিউট-এর জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একটি দল তা দেখেছিল। কৈলাশ সাহুর নেতৃত্বে ওই দলের বিশ্লেষণ গবেষণাপত্র ‘দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নালে’ প্রকাশের জন্য গৃহীত হয়েছে।
কৈলাস সাহুর দলের অনুমান, বিচ্ছিন্ন ব্ল্যাকহোলটি গ্যালাক্সিজুড়ে ১ লক্ষ ৬০ হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করেছে তিন ঘন্টারও কম সময়ে। অর্থাৎ মাত্র তিন ঘণ্টায় পৃথিবী থেকে চাঁদে ভ্রমণ করতে পারে ওই বিচ্ছিন্ন ব্ল্যাকহোল। এবং এটি আমাদের ছায়াপথের (মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি) অন্যান্য প্রতিবেশী নক্ষত্রের তুলনায় দ্রুততর। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাকহোলর বিচ্যুতি পরিমাপ করতে হাবল টেলিস্কোপ ব্যবহার করেছিলেন।
Posted ২:৩১ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৪ জুন ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta