কক্সবাংলা ডটকম :: পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে অবস্থিত বাসযোগ্য কৃত্রিম উপগ্রহ হলো আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। এটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ সহযোগিতায় পাঁচটি গবেষণা সংস্থার একটি প্রকল্প। এর মধ্যে যৌথভাবে রুশ মহাকাশ সংস্থা, রসকসমস ও মার্কিন মহাকাশ প্রশাসন নাসা অন্তর্ভুক্ত। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে চাপা উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন প্রকল্পের লক্ষ্য ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর কথা বলেছে বাইডেন প্রশাসন। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট।
ঘটনার সূত্রপাত পার্শ্ববর্তী দেশ ইউক্রেনকে রাশিয়ার দখল মনোভাব থেকে। রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে উত্তেজনা ক্রমে বাড়ার দরুন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে হুঁশিয়ারি জানায়। এরই মধ্যে নাসা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের লক্ষ্য ২০৩০ সাল ঠিক করেছে। এদিকে গত বছর নভেম্বরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রে একটি অকেজো কৃত্রিম উপগ্রহ ধ্বংস হয়ে যায়। বাইডেন প্রশাসন ও নাসার প্রশাসক বিল নেলসন এ ঘটনার নিন্দা করেন। ওয়াশিংটন পোস্টকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে নেলসন বলেন, রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থাও নিশ্চয়ই আমাদের মতোই আতঙ্কিত।
দুই দেশের মাঝে উত্তেজনা বাড়লেও হোয়াইট হাউজ ও নাসা রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চায় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। গত বছর সিএনএনের সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে রাশিয়া মহাকাশ সংস্থার প্রধান মিট্রি রাগোজিন বলেন, এটি একটি পরিবারের মতো। একটি স্টেশনের মাঝে বিচ্ছেদ সম্ভব নয়। এক বিবৃতিতে নেলসন বলেন, স্টেশনটি দেশগুলোর প্রযুক্তি ও কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিত্তি হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ রাশিয়া, জাপান, কানাডা, ইউরোপ এ স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত। নাসার ভাষায়, এটি ‘রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে জটিল মহাকাশ অনুসন্ধান প্রোগ্রাম’।
এদিকে চীন পৃথিবীর কক্ষপথে নিজস্ব মহাকাশ স্টেশন স্থাপনের উদ্যোগ নিচ্ছে। এ বিষয়ে চীনকে ‘কঠোর প্রতিদ্বন্দ্বী’ বলে উল্লেখ করেন নেলসন। নাসার প্রধান বলেন, মহাকাশ গবেষণায় নতুন নতুন দেশ আগ্রহী হয়ে উঠছে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়াতে এবং নীতি মেনে সুষ্ঠুভাবে মহাকাশ গবেষণা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রকে দিশারি হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে স্টেশনটি প্রতিস্থাপন করতে কোনো বেসরকারি সংস্থার খোঁজ করছে নাসা। বাণিজ্যিক মহাকাশ বাসস্থান নির্মাণের জন্য গত বছরের অক্টোবরে মোট তিনটি চুক্তি সই করেছে নাসা। চুক্তি তিনটির মূল্য ৪১ কোটি ৫৬ লাখ ডলার।
মহাশূন্যের জঞ্জাল পরিষ্কার করবে কে?
আমরা প্রতিদিন নিজেদের ঘরদোর ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে রাখি। কিন্তু মহাকাশে যে জঞ্জাল জমছে, তার কথা কয়জন ভাবি? অবশ্য সাধারণ চোখে মনে হয়, মহাকাশ তো বেশ স্বচ্ছ, তাহলে আবার পরিষ্কারের প্রশ্ন কেন? আসলে মেঘের ওপরে, আরও কিছু দূরে, পৃথিবীর ‘নিচু কক্ষপথ’ প্রান্তরে (লো আর্থ অরবিট) মহাশূন্যের আবর্জনা ছড়িয়ে পড়ছে। ইংরেজিতে একেই বলি ‘স্পেস জাঙ্ক’। এদের বেশির ভাগই মানুষের অনিয়ন্ত্রিত কাজের ফল। যেমন মহাশূন্যযানের অংশ, ওই সব যান থেকে ছিটকে পড়া ছোট ছোট বস্তু, রকেটের খসে পড়া টুকরা, এখন আর কাজ করছে না এমন কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ, অথবা এসব বস্তুর মধ্যে সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট আরও অসংখ্য বস্তু খণ্ড প্রভৃতি।
মহাশূন্যে শুধু মানুষের তৈরি বস্তুখণ্ডের সংখ্যা এখন প্রায় ১৭ কোটি। অবশ্য এদের আকার ১ মিমি’র বড়, আবার কোনোটি একটি বড় বাসের সমানও রয়েছে। স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিনের (১ জুলাই ২০১৮) তথ্য অনুযায়ী, এরা ঘণ্টায় প্রায় ১৭ হাজার ৫০০ মাইল বেগে ঘুরছে। খুব ছোট এক টুকরা বস্তুকণাও কিন্তু বিপজ্জনক হতে পারে। ২০১৬ সালে এক মিলিমিটারেরও কম চওড়া এক টুকরা ধাতব খণ্ড আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের জানালায় ঠোক্কর খেয়ে ছোট আঁচড় কেটেছিল। বিপদ দিনে দিনে বাড়ছে। ২০০৭ সালে চীন তাদের একটি মহাশূন্যযান নিজেরাই মহাশূন্যে ধ্বংস করে। এর বছর দুয়েক পর ২০০৯ সালে আমেরিকান ও রাশিয়ান দুটি মহাকাশযান দুর্ঘটনাক্রমে ধাক্কা খেয়ে বিধ্বস্ত হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ দুটি ঘটনায় মহাকাশে জঞ্জাল অন্তত ৭০ শতাংশ বেড়ে গেছে। এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতেও ঘটতে থাকবে। প্রশ্ন হলো, এই জঞ্জাল পরিষ্কারের দায়িত্ব কার?
আসলে এখনো এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক কোনো আইন নেই। তবে এটা সবার দায়িত্ব। লো আর্থ অরবিটে প্রায় ছয় হাজার টন বস্তু খণ্ড রয়েছে। নাসা তাদের অরবিটাল ডেবরিজ প্রোগ্রাম ১৯৭৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেছে। টেক্সাসের জনসন স্পেস সেন্টারের স্পেস সায়েন্সেস ব্রাঞ্চ থেকে এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, যথাসম্ভব কম জঞ্জাল যেন মহাশূন্যে জমা হয়, সে ব্যবস্থা করা এবং একই সঙ্গে এমন প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি বের করা, যার সাহায্যে ইতিমধ্যে সঞ্চিত জঞ্জালের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে রেখে সেগুলো অপসারণ করা যাবে। অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানও কাজ করছে। ওদের কেউ কেউ মডেল স্যাটেলাইট ও রোবটের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া কোনো মহাশূন্যযান বশে আনার কৌশল নিয়ে কাজ করছে। চুম্বকীয় প্রযুক্তি ব্যবহারের চিন্তাও আছে। বছর দুয়েক আগে নেদারল্যান্ডসে এক বৈঠকে ই-ডিঅরবিট মিশনের পরিকল্পনা হয়। এরও উদ্দেশ্য মহাকাশ জঞ্জাল নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন কৌশল বের করে কাজে লাগানো।