শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

মহেশখালীতে বেজার মাঠের ২০০ একরের প্যারাবন উজাড় : চিংড়িঘের ও লবনের মাঠ তৈরি

রবিবার, ১৭ মার্চ ২০২৪
24 ভিউ
মহেশখালীতে বেজার মাঠের ২০০ একরের প্যারাবন উজাড় : চিংড়িঘের ও লবনের মাঠ তৈরি

বিশেষ প্রতিবেদক :: কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের সোনাদিয়া ও ঘটিভাঙা উপকূলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) অধীনে থাকা প্যারাবন দখল করে চিংড়িঘের ও লবণ উৎপাদনের মাঠ তৈরির হিড়িক পড়েছে। লুট করা হচ্ছে প্যারাবনের বাইন ও কেওড়াগাছ।

লবণ মাঠের জন্য প্যারাবন দখলকে কেন্দ্র করে ২ মার্চ দুই পক্ষের গোলাগুলি ও সংঘর্ষের দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন, গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অন্তত ১০ জন। এরপরও প্যারাবন দখল থেমে নেই।

সম্প্রতি মহেশখালীর এসব স্থান সরেজমিনে ঘুরে দেখেছেন, পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’-এর কক্সবাজার জেলা সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী। তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে অন্তত দুই হাজার একর প্যারাবন ধ্বংস করে ছোট–বড় ৪৫টির বেশি চিংড়িঘের এবং অনেক লবণের মাঠ তৈরি হয়েছে। কেটে ফেলা হয়েছে দুই লাখের বেশি বাইন ও কেওড়াগাছ। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পর এসব প্যারাবন সৃজন করেছিল উপকূলীয় বন বিভাগ।

ফজলুল কাদের চৌধুরী আরও বলেন, আরও চার হাজার একর প্যারাবন ধ্বংসের প্রস্তুতি চলছে। এর আগে প্যারাবন দখলের প্রতিবাদে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হলেও দখলদারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

উপকূলীয় বন বিভাগের তথ্যমতে, সোনাদিয়াতে ইকো ট্যুরিজম পার্ক করার জন্য ২০১৭ সালের মে মাসে বেজা কর্তৃপক্ষকে ৯ হাজার ৪৬৬ দশমিক ৯৩ একর প্যারাবন হস্তান্তর করে উপকূলীয় বন বিভাগ। এর মধ্যে সোনাদিয়াতে ৭ হাজার ৫৪৮ দশমিক ৫৫ একর এবং ঘটিভাঙাতে ১ হাজার ৯১৮ একর প্যারাবন অবস্থিত।

কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আয়াছুর রহমান বলেন, দীর্ঘ সময় পার হলেও বেজা ইকো ট্যুরিজম পার্ক করতে পারেনি। বিশাল প্যারাবন দেখভাল কিংবা তদারকিরও কেউ নেই। ফলে ‘মিনি সুন্দরবন’খ্যাত মহেশখালীর প্যারাবন দিনদুপুরে নিধন হয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিনে যা দেখা গেল

মহেশখালী পৌরসভার গোরকঘাটা থেকে আট কিলোমিটার পশ্চিমে গেলে কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙা এলাকা। সেখান থেকে ঘটিভাঙা খাল অতিক্রম করে সোনাদিয়াতে পা ফেলতেই দেখা যায়, প্রায় ২০০ একরের প্যারাবন উজাড় করে কয়েকটি চিংড়িঘের করা হচ্ছে। দুটি মাটি কাটার খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে ঘেরের বেড়িবাঁধ করা হচ্ছে। কেটে ফেলা কয়েক শ বাইন ও কেওড়াগাছের গোড়ালি চোখে পড়ে সেখানে। তবে ছবি তুলতে গেলে লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন শ্রমিক নিষেধ করেন।

সাইনবোর্ড টানিয়ে প্যারাবনে তৈরি করা হচ্ছে চিংড়িঘের। সম্প্রতি কক্সবাজারের মহেশখালীর কুতুবজোমের ঘটিভাঙায়
সাইনবোর্ড টানিয়ে প্যারাবনে তৈরি করা হচ্ছে চিংড়িঘের। সম্প্রতি কক্সবাজারের মহেশখালীর কুতুবজোমের ঘটিভাঙায়

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শ্রমিক বলেন, বৈদ্যুতিক করাত দিয়ে ২০-৪০ ফুট উঁচু কয়েক হাজার বাইন ও কেওড়াগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। প্রতিটি গাছ ৩০০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। ক্রেতারা গাছগুলো নৌকায় কক্সবাজার শহরে নিয়ে গেছেন।

কেটে ফেলা প্যারাবনের মধ্যভাগে দুটি সাইনবোর্ড দেখা যায়। একটিতে লেখা ‘ঘটিভাঙা পূর্ব পাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি’, অন্যটিতে ‘ঘটিভাঙা পশ্চিম পাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি’। সেখানেও ১০০ একরের বেশি প্যারাবন দখল করে চিংড়িঘের করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শ্রমিক বলেন, দুই সমিতির ৫০ জন সদস্য মিলে প্যারাবনে কয়েকটি চিংড়িঘের নির্মাণ করছেন। এর নেপথ্যে রয়েছেন রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা, যার কারণে প্রশাসন কোনো বাধা দেয় না।

প্যারাবন দখল করে চিংড়িঘের নির্মাণ প্রসঙ্গে ঘটিভাঙা পূর্ব পাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি জাফর আলম বলেন, দুই সমিতির ৫০ জন সদস্যের বিপরীতে চিংড়ি চাষের জন্য ২০ একর ভূমি বন্দোবস্তি চেয়ে এক বছর আগে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু ওই ভূমি বেদখল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তাঁরা দখলে নিয়ে আগেভাগে চিংড়িঘের নির্মাণ করছেন। তবে গাছ কাটা হচ্ছে না।

ঘটিভাঙা সেতুর দুই কিলোমিটার পশ্চিমে প্রায় ৫০ একরের প্যারাবন নিধন করে সেখানে চিংড়িঘের করছেন উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন। ইতিমধ্যে সেখানে ৫০০ মিটার বাঁধ তৈরি হয়েছে, বাঁধের পাশে পড়ে আছে একটি খননযন্ত্র। এর আশপাশে আরও ৩০০ একরের মতো প্যারাবন উজাড় করে তাতে চলছে চিংড়িঘের ও লবণ মাঠ তৈরির প্রস্তুতি।

জানতে চাইলে উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ঘটিভাঙার মোহাম্মদ মালেক নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি প্যারাবনের ওই জায়গাটি ১০ বছরের জন্য ইজারা নিয়েছেন, এখন চিংড়ি চাষের জন্য বাঁধ নির্মাণ করছেন।

ঘটিভাঙার জেলে সাজ্জাদ হোসেন বলেন, পাঁচ মাস আগেও এলাকার কয়েক শ মানুষ প্যারাবনে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন চোখের সামনে প্যারাবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

কুতুবজোম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শেখ কামাল বলেন, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বেজা কর্তৃপক্ষ ঘটিভাঙাতে অভিযান চালিয়ে দুটি খননযন্ত্র জব্দ করেছিল। এরপর কিছুদিন চিংড়িঘের নির্মাণ বন্ধ ছিল। তবে অভিযানের কয়েক দিন পর আবার শুরু হয়েছে প্যারাবন নিধনযজ্ঞ। দুর্গম ও যোগাযোগবিচ্ছিন্ন উপকূল হওয়ায় প্যারাবন রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্যারাবনের কেটে ফেলা গাছ। সম্প্রতি কক্সবাজারের মহেশখালীর কুতুবজোমের ঘটিভাঙায়
ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্যারাবনের কেটে ফেলা গাছ। সম্প্রতি কক্সবাজারের মহেশখালীর কুতুবজোমের ঘটিভাঙায়

দখলদারের বিরুদ্ধে মামলা হয় না, তদারকিও নেই

মহেশখালী নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম রুবেল বলেন, চিংড়িঘের ও লবণ মাঠের জন্য প্যারাবন ধ্বংসের বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারের উচ্চপর্যায়ে অবহিত করা হলেও প্রতিকার মিলছে না। ক্ষমতাসীন দলের লোকজন জড়িত থাকায় দখলদারদের বিরুদ্ধে মামলা করার সাহস পাচ্ছে না বেজা।

প্যারাবন রক্ষায় সোনাদিয়াতে পুলিশ ফাঁড়ির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ বলেন, চিংড়ি ও লবণ চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রভাবশালীরা সাধারণ লোকজনকে দিয়ে প্যারাবন ধ্বংস করাচ্ছেন।

গোরকঘাটা বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আয়ুব আলী বলেন, ২০১৭ সালে সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক করার জন্য বন বিভাগের পক্ষ থেকে ৮ হাজার ৯৬৭ একর বনভূমি বেজা কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করা হয়। তখন থেকে প্যারাবনের দেখাশোনার দায়িত্ব বেজার।

মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন নামে বেজার এক নিরাপত্তা প্রহরী বলেন, কয়েক হাজার একরের প্যারাবন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দরকার ৫০ জনের বেশি জনবল, এখন রয়েছেন তিনিসহ মাত্র পাঁচজন।

বেজার সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্কের দায়িত্বে থাকা সহকারী ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান বলেন, প্যারাবন রক্ষায় বেজার পক্ষ থেকে কিছুদিনের মধ্যে আরও ১০ জন আনসার সদস্য নিয়োগ করা হবে। একই সঙ্গে প্যারাবন নিধনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্র : প্রথম আলো

24 ভিউ

Posted ১:৩৭ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৭ মার্চ ২০২৪

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com