সোমবার ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

সোমবার ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

মাইকেল মধুসূদন’র পুনর্জন্ম

মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট ২০১৭
854 ভিউ
মাইকেল মধুসূদন’র পুনর্জন্ম

কক্সবাংলা ডটকম(২২ আগষ্ট) :: ‘সূর্য উঠতে ভুলে যেতে পারে, কিন্তু আমি—আমি ইংল্যান্ডে যাওয়ার কথা ভুলব না, ভুলতে পারব না। আর একবার ইংল্যান্ডে যেতে পারলে শ্রেষ্ঠ কবি আমি হবই।’ মধুসূদন এ কথা লিখেছিলেন বন্ধু গৌরদাসকে। তখনো তিনি হিন্দু কলেজের ছাত্র। তার কয়েক বছর পরে তিনি যখন মাদ্রাজে, তখন প্রকাশিত হয় ক্যাপটিভ লেডি; তাঁর প্রথম কাব্য। প্রকাশিত হওয়ার কয়েক দিনের মাথায় সে কাব্যের একটি অনুকূল সমালোচনাও বের হয় অ্যাথেনিয়াম পত্রিকায়, যাতে তাঁকে তুলনা করা হয়েছিল বায়রনের সঙ্গে। আবাল্য-পোষিত স্বপ্ন সফল হওয়ার পথে!

এ আনন্দ কোথায় রাখবেন তিনি? মাথায় ভাবও এসে গেল। ঝটপট আরেকটা কাব্য লিখতে বসলেন। আর বন্ধু ভূদেব মুখোপাধ্যায়কে লিখলেন: এই নতুন কাব্যটা এবং সেই সঙ্গে ক্যাপটিভ লেডি শিগগিরই প্রকাশিত হবে খোদ লন্ডন থেকে। কিন্তু অ্যালবিয়নস ল্যান্ডে যাওয়ার উদগ্র বাসনা তাঁর তখন পূরণ হয়নি অথবা লন্ডন থেকে ক্যাপটিভ লেডি প্রকাশের আশাও নয়। আর শেষ পর্যন্ত লন্ডনে যখন গেলেন, তাঁকে কাব্যদেবী অভিশাপ দিয়ে নির্বাসনে চলে গেলেন।

ইংরেজ পাঠকেরা জানতেনই না, ‘মাইকেল মধুসূদন ডাট’ নামে একজন কবি ছিলেন। পোশাকপরিচ্ছদে, কথাবার্তায়, ভাবভঙ্গিতে, বচন-বাচনে, পানভোজনে ইংরেজ সাজলেও, যিনি খোদ ইংল্যান্ডে ইংরেজ কবি বলে পরিচিত হতে পারেননি, এমনকি একজন কবি বলেও নন। ক্যাপটিভ লেডি যাতে ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরিতে রাখা হয়, তার জন্য প্রচ্ছদের ওপর নিজের নামের নিচে তিনি হাতে লিখে দিয়েছিলেন ‘অব বিশপস কলেজ, ক্যালকাটা’।
দেরিতে হলেও (এমন আর কী দেরি! তাঁর মারা যাওয়ার পর মাত্র ১৪২ বছর পূর্তি হলো গত ২৯ জুন) তিনি ধীরে ধীরে ইংরেজি ভাষার কবি হিসেবে না হন, অন্তত একজন ধ্রুপদি কবি হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছেন ইংরেজিভাষী পাঠকদের মধ্যে। মাইকেল নতুন জীবন লাভ করছেন পশ্চিমে।

শতবর্ষ ধরে পরম নিশ্চিন্তে আসা-যাওয়ার পথের ধারে শায়িত ছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর শান্তিতে বিঘ্ন ঘটান শান্তিবাহিনী—পিস কোরের একসময়কার সদস্য ক্লিনটন বুথ সিলি। কলকাতা থেকে ফিরে ১৯৭০-এর দশকে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা-সাহিত্য পড়ানোর কাজ নিয়েছিলেন। সেখানে মধ্যযুগের কাব্য পড়াতেন এডওয়ার্ড ডিমক। আর আধুনিক যুগের বাংলা কাব্য পড়ানোর দায়িত্ব পড়ে ক্লিনটন সিলির ওপর। সেই পড়াতে গিয়েই তিনি বাধ্য হয়ে মাইকেল পড়েন, বিশেষ করে মেঘনাদবধ কাব্য। আর আটলান্টিকের এপারে ১৯৮০-এর দশকে মাইকেলচর্চা শুরু করেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উইলিয়াম র্যাডিচি। মাইকেল-জীবনী পুনর্নির্মাণের কাজ আমিও আরম্ভ করি ১৯৮৬ সালে। তার বেশ কয়েক বছর আগেই মাইকেল-জীবনী নিয়ে গবেষণা করেছিলেন সুরেশচন্দ্র মৈত্র। সম্প্রতি মাইকেলকে নিয়ে ইংরেজিতে একটি উপন্যাসও প্রকাশিত হয়েছে। মোট কথা, শতবর্ষ ধরে পাঠ্যপুস্তকে বন্দী থাকলেও গত ৫০ বছরে মহাকবি মাইকেল নড়েচড়ে উঠেছেন তাঁর সমাধিতে।

মেঘনাদবধ কাব্য প্রকাশিত হয়েছিল দেড় শ বছর আগে—প্রথম খণ্ড ১৮৬১ সালের জানুয়ারি মাসে; দ্বিতীয় খণ্ড আগস্টে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে আগে অথবা পরে এর কোনো জুড়ি নেই—না বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে; না আঙ্গিকের মাপে; না রসের বিচারে। ব্যতিক্রমধর্মী এই কাব্য কেবল প্রচলিত মূল্যবোধে প্রচণ্ড একটা আঘাত দেয়নি, বরং অভিনব রস ও আঙ্গিকও সৃষ্টি করেছিল। এর ভাষা ও ছন্দও ছিল তারই নির্মাণ। এ কাব্যের সবকিছুই এত অভিনব যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো পণ্ডিতও প্রথমে এর রস গ্রহণ করতে সমর্থ হননি, অথবা পারেননি এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে। এমনকি দুই দশক পরে তরুণ রবীন্দ্রনাথও এর প্রশংসা করতে পারেননি, বরং উল্টো নিন্দাই করেছেন। তা সত্ত্বেও ক্রেতার কোনো অভাব হয়নি। অল্পকালের মধ্যেই তাই এর একাধিক সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল। প্রথম আট বছরে এ কাব্যের সংস্করণ হয়েছিল ছয়টি—সেকালের জন্য যা ছিল একেবারে কল্পনাতীত।

আমরা বাঙালি পাঠকেরা যখন মাইকেল পড়ি, বিশেষ করে মেঘনাদবধ কাব্য পড়ি, তখন সাংস্কৃতিক কারণে অনেক কিছুই আমরা স্বাভাবিক ধরে নিই। অনেক সূক্ষ্ম জিনিসই আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। যেমন মাইকেল রাবণের ওপর গৌরব আরোপ করেন, সে কেবল কাহিনি দিয়ে নয়, বরং অনেকটাই উপমা দিয়ে। তেমনি রাম-লক্ষ্মণের চরিত্রকে ভীরু, কাপুরুষ এবং দুর্বল করে অঙ্কন করতে গিয়ে কেবল কাহিনিই ব্যবহার করেননি, বরং ব্যবহার করেছেন উপমাও। এসব উপমার সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করেন সিলি তাঁর একটি প্রবন্ধে। বাঙালি সমালোচকেরা কখনো কি মাইকেলকে দেখেছেন একজন হাস্যরসিক হিসেবে? কিন্তু র্যাডিচি তাঁর গবেষণা অভিসন্দর্ভে হাস্যরসকে দেখিয়েছেন মাইকেল-চরিত্রের একটা প্রধান বৈশিষ্ট্য হিসেবে। এককথায় বলা যায়, মাইকেলের কেবল পুনর্জন্ম নয়, যে পশ্চিমে যাওয়ার জন্য একদিন তিনি প্রায় হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন, দেহ-মনে ইংরেজ সেজেছিলেন, সেই মাইকেলের পুনর্মূল্যায়ন শুরু হয়েছে তাঁর স্বপ্নে-দেখা ইংরেজি ‘সাহিত্যে’।
ক্লিনটন বুথ সিলির দ্য স্লেয়িং অব মেঘনাদ: আ রামায়ণ ফ্রম কলোনিয়াল বেঙ্গলের প্রচ্ছদ, উইলিয়াম র্যা ডিচির দ্য পোয়েম অব দ্য কিলিং অব মেঘনাদ: মেঘনাদবধ কাব্যের প্রচ্ছদ কেবল প্রবন্ধ ও অভিসন্দর্ভে মাইকেলচর্চা নয়, আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে মাইকেলের শ্রেষ্ঠ কাব্য মেঘনাদবধ কােব্যর অনুবাদও আরম্ভ হয় সিলি আর র্যাডিচির হাত দিয়ে। মেঘনাদবধ কাব্যের দুটি ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছিল আগেই—একটি ১৯২৬ সালে, অন্যটি ১৯৮৭ সালে। পথিকৃতের কষ্টসাধ্য কাজ হলেও এই দুই অনুবাদ প্রায় অজ্ঞাতই থেকে গেছে। নিউইয়র্ক থেকে এই মহাকাব্যের তৃতীয় অনুবাদ প্রকাশ করেন ক্লিনটন সিলি, ২০০৪ সালে। নাম দ্য স্লেয়িং অব মেঘনাদ: আ রামায়ণ ফ্রম কলোনিয়াল বেঙ্গল। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের এই প্রকাশনা বাংলাভাষীদের কাছে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে বলে মনে হয় না। মনে হয় দূরত্ব এর একটা কারণ। তা ছাড়া বাংলাদেশে আগ্রহ দেখা দেয়নি আরও দুই কারণে: একদিকে ইংরেজির চর্চা সেখানে ইদানীং খুবই হ্রাস পেয়েছে; অন্যদিকে বাংলায় লেখা কাব্য ইংরেজি অনুবাদের মাধ্যমে পড়ার কথাটা অনেকেরই আদৌ মনেই হয়নি।

অতিসম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে মেঘনাদবধ কােব্যর চতুর্থ অনুবাদ। এর পুরো নাম: দ্য পোয়েম অব দ্য কিলিং অব মেঘনাদ: মেঘনাদবধ কাব্য। আর এ অনুবাদ করেছেন উইলিয়াম র্যাডিচি, যিনি ১৯৮০-এর দশকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাইকেলের সাহিত্যকর্ম নিয়ে ডিফিল ডিগ্রি করেন এবং তারপর প্রকাশ করেন মাইকেলের সাহিত্যকর্মের বিভিন্ন দিক নিয়ে মূল্যবান অনেকগুলো প্রবন্ধ। মাইকেলের সাহিত্যকর্মের বিচিত্র দিক নিয়ে এত প্রবন্ধ অন্য কেউ লিখেছেন বলে আমার জানা নেই।

বাঙালি পাঠকদের দৃষ্টিতে এড়িয়ে যায় এবং তাঁদের মনে কোনো কৌতূহল জাগায় না, এমন বহু দিকের প্রতি নজর দিয়েছেন সিলি ও র্যাডিচি দুজনই—র্যাডিচিই বেশি। যেমন সিলি তাঁর একটি প্রবন্ধে দেখিয়েছিলেন যে মুখে রামের প্রতি অশ্রদ্ধা এবং রাবণের প্রতি প্রশংসা বর্ষণ করলেও, মাইকেলের উপমাগুলো বিশ্লেষণ করলে লক্ষ করা যায় যে তিনি বিস্তর জায়গায় রামের ওপর রীতিমতো গৌরব আরোপ করেছেন; অন্য পক্ষে তুচ্ছ প্রকাশ করেছেন রাবণের প্রতি। উপমা-অলংকার বিশ্লেষণ করে প্রায় দেড় শতাব্দীতেও এ রকম উপসংহারে পৌঁছাতে পারেননি কোনো বাঙালি সমালোচক। যেমন ভিনজাতি-ভীতির সঙ্গে র্যাডিচি ভিন্ন জাতি-প্রীতিও দেখিয়েছেন একটি প্রবন্ধে। অন্য একটি প্রবন্ধে বিশ্লেষণ করেছেন মাইকেলের ওপর ইতালীয় প্রভাব। মেঘনাদবধ কাব্য বুঝতে এসবই সাহায্য করেছে বাঙালি পাঠকদের। মিল্টনের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছেন অন্য একটি প্রবন্ধে।

মেঘনাদবধ কাব্য লিখতে আরম্ভ করার সময় থেকে প্রকাশিত হওয়ার পর পর্যন্ত রাজনারায়ণ বসুকে লেখা অনেক চিঠির মাধ্যমে মাইকেল উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, তাঁর ওপর প্রবলভাবে ছাপ ফেলেছে ইউরোপীয় ধ্রুপদি সাহিত্য। এ কাব্যের কোনো কোনো জায়গায় বিষয়বস্তুর কল্পনায় এবং কোথাও কোথাও উপমা-অলংকারও তিনি ধার করেছিলেন ইউরোপীয় কবিদের রচনা থেকে। মূলে কী ছিল এবং তিনি কতটুকু পরিবর্তন করে নিয়েছেন, তা-ও কবি রীতিমতো দৃষ্টান্ত দিয়ে দেখিয়েছিলেন। তা না হলে তিনি কোথায় কোথায় প্রভাবিত হয়েছিলেন ইউরোপীয় ধ্রুপদি কবিদের রচনার ঠিক কোন জায়গাটা দিয়ে—সমালোচকেরা তা অত সহজে বলতে পারতেন না। হয়তো পারতেনই না। একমাত্র ব্যতিক্রম ইংরেজ কবি জন মিল্টন। বাঙালি পাঠকেরা মিল্টন পড়তে পারেন। সে কারণে তাঁর প্রভাব কোথায় পড়েছে, সমালোচকদের পক্ষে তা আবিষ্কার করা অসম্ভব ছিল না। কিন্তু ইতালিয়ান-লাতিন-গ্রিক ভাষায় হোমার, দান্তে, ভার্জিল অথবা তাস্সো পড়ে এই ধ্রুপদি কবিদের প্রভাব আবিষ্কার করার ক্ষমতা সাধারণ বাঙালি পাঠক অথবা সমালোচকদের ছিল না।

সুতরাং সমালোচকেরা তাঁদের প্রবন্ধে অথবা গ্রন্থে ইউরোপীয় প্রভাবের কথা লিখলেও, সত্যি সত্যি মিল-অমিলের পরিমাণ অথবা ধরন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে দেখাতে পারেননি। সেই দুরূহ কাজটা আরম্ভ করেন উইলিয়াম র্যাডিচি। ইউরোপীয় কবিদের রচনা উদ্ধৃতি দিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে তিনি এই সাদৃশ্যের মাত্রা ও স্বরূপ বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁর আগেকার প্রবন্ধগুলোয় এবং অনূদিত মেঘনাদবেধর টীকা-টিপ্পনীতে। তাই বাঙালি পাঠকদের কাছে তাঁর প্রবন্ধগুলো এবং অনূদিত মেঘনাদবেধর টীকা-টিপ্পনীগুলো অমূল্য বলে বিবেচিত হতে পারে।
ইউরোপীয় ধ্রুপদি সাহিত্যের প্রভাব কেবল মেঘনাদবধ কাব্যেই পড়েনি। প্রবলভাবেই পড়েছিল পদ্মাবতী নাটকে এবং হেক্টর-বেধর অনুবাদে। পদ্মাবতী নাটকের চরিত্রগুলোর নাম ভারতীয় পুরাণ থেকে নেওয়া। কাহিনির মধ্যেও ভারতীয় পুরাণের ছায়া আছে। কিন্তু কবি এ নাটক রচনা করেছিলেন গ্রিক পুরাণের কাহিনি অবলম্বনে। আর হেক্টর-বধ তো ইলিয়ােডর প্রথম ভাগের অনুবাদ—নামের মধ্যেই সে স্বীকৃতি আছে।

র্যাডিচি অথবা সিলি এই দুই রচনা নিয়ে আলোচনা করেননি। অথবা মেঘনাদবধ-এ পাশ্চাত্য ধ্রুপদি সাহিত্য কতটা প্রভাব ফেলেছিল এবং সে প্রভাবকে ভারতীয় উপকরণের সঙ্গে কবি কতটা সমন্বয় সাধন করতে পেরেছিলেন, তা নিয়েও ব্যাপক বিশ্লেষণ করেননি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন আলেকজান্ডার রিডিফোর্ড। রিডিফোর্ড তাঁর ডিফিল অভিসন্দর্ভের ওপর ভিত্তি করে একটি বই প্রকাশ করেছেন প্রায় দুই বছর আগে। এর নাম ম্যাডলি আফটার দ্য মিউসেস: বেঙ্গলি পয়েট মাইকেল মধুসূদন দত্ত অ্যান্ড হিজ রিসেপশন অব দ্য গ্রেকো-রোমান ক্লাসিকস। নাম থেকেই দেখা যাচ্ছে, এ আলোচনা মাইকেলের ওপর গ্রিক-রোমান ধ্রুপদি সাহিত্য কতটা এবং কী ধরনের প্রভাব বিস্তার করেছিল, সে সম্পর্কে।

অদৃষ্টের পরিহাস, মাইকেল এম এস ডাট, বার-অ্যাট-লয়ের ওপর গ্রিক ও রোমান ধ্রুপদি সাহিত্যের প্রভাব নিয়ে বিস্তৃত বিচার করলেন শেষ পর্যন্ত আরেকজন ব্যারিস্টার। পেশায় রিডিফোর্ড একজন ব্যারিস্টার। কিন্তু তার আগে তাঁর পরিচয়: তিনি ধ্রুপদি সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন।

রিডিফোর্ডের এই বইয়ে উপসংহার ছাড়াও আছে ছয়টি অধ্যায়। প্রথম অধ্যায়ে তিনি মাইকেলের ধ্রুপদি সৃষ্টির পটভূমি নিয়ে আলোচনা করেছেন। দ্বিতীয় অধ্যায়ে আছে পদ্মাবতী নাটকের সঙ্গে প্যারিস উপাখ্যান নিয়ে আলোচনা। তৃতীয় অধ্যায়ের শিরোনাম ‘মেঘনাদবধ কাব্য এবং হোমারের ইলিয়াড ও ভার্জিলের ইনিড’। তার পরের অধ্যায়ের বিষয়বস্তু ভার্জিলের আরও প্রভাব। পঞ্চম অধ্যায়ের বিষয়বস্তু বীরাঙ্গনা কাব্য ও ওভিদের ইরোদিস। শেষের অধ্যায়ে আলোচনা করেছেন হেক্টর-বধ আর হোমারের ইলিয়াড নিয়ে। আর কৌতূহলীদের জন্য আছে নয়টি পরিশিষ্ট।

যাঁরা মধুসূদনের বাংলা কাব্য পড়তে পারবেন না, তাঁদের জন্য এই পরিশিষ্টগুলোয় আছে পদ্মাবতী নাটক, বীরাঙ্গনা কােব্যর পরিচিতি এবং হেক্টর-বেধর ভূমিকা; বীরাঙ্গনা কােব্যর উৎস ও ইরোদিস এবং মাইকেল ধ্রুপদি সাহিত্যের সম্ভাব্য যেসব সংস্করণ ব্যবহার করেছিলেন, তা নিয়ে আলোচনা। মোটকথা, মাইকেল যে বিপুল পরিমাণ গ্রিক-রোমান ধ্রুপদি উপকরণ ব্যবহার করেছিলেন এবং তাকে যেভাবে আত্তীকরণ করেছিলেন, তা নিয়ে এ পর্যন্ত যত আলোচনা হয়েছে, তার মধ্যে কেবল সবচেয়ে বিস্তৃত আলোচনা নয়, সবচেয়ে গভীর আলোচনা করেছেন রিডিফোর্ড।

কিন্তু বিস্মিত হতে হয় যখন দেখি, তিনি কৃষ্ণকুমারী নাটকটিকে তাঁর আলোচনার অন্তর্ভুক্ত করেননি। এই নাটকের কাহিনির ইঙ্গিত মাইকেল পেয়েছিলেন জেমস টডের রাজস্থান-ইতিকথা থেকে। কিন্তু সেই কাহিনির সূত্র ধরে নাটকটি তিনি রচনা করেন খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতকের শুরুতে রচিত ইউরিপেদিসের ইফিজিনিয়া ইন আইলিস নাটকের আদলে। বোঝা যায়, রিডিফোর্ড মাইকেলের পুরো রচনাবলি পড়েননি, অথবা তার খবর পাননি। পাশ্চাত্যে যাঁরা আমাদের দেশ নিয়ে কাজ করেন, তাঁদের রচনায় এ রকম ফাঁক থেকে যায়।

স্বদেশে মাইকেলের সৃষ্টিকর্ম নিয়ে যখন নতুন কোনো কাজ হচ্ছে না, অথবা হলেও গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক কাজ হচ্ছে না, তখন পাশ্চাত্যে তাঁকে নিয়ে যে নতুন আগ্রহ দেখা দিয়েছে, তা থেকে উৎসাহ পাই। বুঝতে পারি, মাইকেলের পুনর্মূল্যায়ন আরম্ভ হয়েছে। পাশ্চাত্যের এই উৎসাহের হাওয়া স্বদেশেও তাঁকে নতুন করে মূল্যায়নের অবকাশ দেবে হয়তো। মাইকেলকে বোঝা ও প্রশংসা করা সহজ হবে।

854 ভিউ

Posted ১২:১৬ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com