
কক্সবাংলা রিপোর্ট :: এক যুগ আগেও মহেশখালী উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন মাতারবাড়ির তেমন একটা পরিচিতি ছিল না। বঙ্গোপসাগর থেকে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন ও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে বাইরের মানুষেরও এ দ্বীপে তেমন একটা যাতায়াত ছিল না।
বড়জোর কক্সবাজার জেলার বাসিন্দাদের কারো কারো এ ইউনিয়নে বিভিন্ন কাজে যাতায়াত ছিল। ইউনিয়নের বাসিন্দারা চিংড়ি ঘের, লবণ মাঠ,পানের বরজ ও কৃষি কাজে ব্যস্ত থাকতেন বেশি। কিন্তু গত অর্ধ যুগে পাল্টে গেছে এ দ্বীপের সামগ্রিক চিত্র।
সরকারের অভাবনীয় উন্নয়ন কাজ চলছে ছোট্ট এ দ্বীপে। একাধিক কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর ও ইকোনমিক জোন নির্মাণকে ঘিরে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে মাতারবাড়ি ইউনিয়নে। দেশি-বিদেশি অর্থায়নে আনুমানিক ৮০ হাজার কোটি টাকার এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে দেশের অর্থনীতি।
স্থানীয়রা বলছেন, সরকারি প্রকল্পের যে কর্মযজ্ঞ চলছে, তাতে আগামীতে মাতারবাড়ি হয়ে উঠবে সিঙ্গাপুর।
মাতারবাড়ি ইউনিয়নের ভৌগোলিক অবস্থান কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায়। ইউনিয়নের পূর্বে কোহেলিয়া ও উত্তরে উজানটিয়া নদী, দক্ষিণে ধলঘাটা ইউনিয়ন এবং পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর। ১০ দশমিক ২০ বর্গমাইল আয়তনের এ ইউনিয়নের লোকসংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার, সাক্ষরতার হার প্রায় ৭৩ শতাংশ।
সরেজমিনে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে পাল্টে গেছে দ্বীপের সামগ্রিক চিত্র। মাতারবাড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের আগে প্রধান পেশা ছিল চিংড়ি ঘের ও লবণ তৈরি। কিন্তু ৬ বছরের ব্যবধানে এ দ্বীপে বেশিরভাগ মানুষের পেশা পরিবর্তন হয়েছে।
কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর ও ইকোনমিক জোন নির্মাণকে ঘিরে সরকার হাজার হাজার একর চিংড়ি ঘেরের জমি অধিগ্রহণ করেছে।
আগে এসব জমি বছরের অর্ধেক সময় চিংড়ি ঘের এবং অবশিষ্ট সময় লবণ মাঠ হিসেবে ব্যবহার হতো। অধিগ্রহণের কারণে মানুষ অন্য পেশায় ঝুঁকে পড়ে। একের পর এক গড়ে উঠছে হোটেল, বিভিন্ন পণ্যের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান।
এ সুযোগে অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংক শাখা, উপশাখা ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অফিস খুলেছে। মাতারবাড়ির বাণিজ্যিক এলাকা লাইল্যাঘোনা সিএনজি স্টেশনের আশেপাশে এসব ব্যাংকের অবস্থান। সেখানে শাখা খুলেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। উপশাখা করেছে আইএফআইসি ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। এজেন্ট ব্যাংকিং খুলেছে ইসলামী ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, এবি ব্যাংকসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক। এছাড়া বুথ স্থাপন করেছে ইউনিয়ন ব্যাংক।
ইউনিয়নের উত্তর-পূর্ব সিকদারপাড়ার বাসিন্দা মোবারক হোসেন রাহা বলেন, ‘সরকারি প্রকল্পের যে কর্মযজ্ঞ চলছে, তাতে আগামীতে ‘মাতারবাড়ি’ হবে সিঙ্গাপুর। এ ইউনিয়নে কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর ও ইকোনমিক জোন নির্মাণকে ঘিরে প্রায় ১০ হাজার মানুষ কাজ করছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ বসবাস করে মাতারবাড়ি এলাকায়। তাদের এলাকায় ভাড়া দেওয়া হচ্ছে বাসাবাড়ি। তাদের ঘিরে বিপুল সংখ্যক ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এতে চাঙ্গা হয়েছে ব্যবসায়। এমন কি এখানে ব্যাংকের বুথ থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা উত্তোলন করতে হয়।’
মাতারবাড়ি ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার হাজি বশির আহমদ দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘মাতারবাড়ি ইউনিয়নে মোট জমির পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার একর। এর মধ্যে ২ হাজার একর জমিতে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করা হয়। অবশিষ্ট ৮ হাজার একর জমিতে চাষ হয় লবণ ও চিংড়ি। কিন্তু জমি অধিগ্রহণের কারণে অনেকে পেশা হারিয়ে ভিন্ন পেশায় ঝুঁকে পড়ছে।’
এদিকে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প ঘিরে মাতারবাড়ি ইউনিয়নে অর্থনীতির বিপুল সম্ভাবনা যেমন তৈরি হয়েছে, তেমনি জনপ্রতিনিধি বিশেষ করে মাতারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আবু হায়দারের অবহেলার কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় এসে ঠেকেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উন্নয়নকাজ না হওয়ায় ইউনিয়নের সবকটি সড়কের অবস্থা বেহাল। সড়কের পদে পদে গর্ত। যানবাহনে চলাচল করলে ‘আত্মারাম খাঁচাছাড়ার’ অবস্থা হয়। সড়কের পাশে নেই প্রয়োজনীয় নালা-নর্দমা। বৃষ্টি হলেই পানি জমে একাকার হয় প্রতিটি সড়ক।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ইউপি চেয়ারম্যানকে সময়মতো পাশে পায় না ভুক্তভোগীরা। ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে তিনি এসব এড়িয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যস্ততার অজুহাত তুলে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন চেয়ারম্যান এস এম আবু হায়দার।

Posted ৩:৫৭ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৫ জুন ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta