কক্সবাংলা ডটকম(২৪ জুলাই) :: কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার “লকড আপ ইন মালয়েশিয়া’স লকডাউন” শিরোনামের প্রতিবেদনে সাক্ষাৎকার দেওয়া বাংলাদেশি মো. রায়হান কবিরকে গ্রেফতার করেছে মালয়েশিয়া। শুক্রবার (২৪ জুলাই) রাতে দেশটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের এক টুইট বার্তায় জানানো হয়েছে, এদিন সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম দ্য স্টারের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
আল জাজিরায় প্রচারিত ‘১০১ ইস্ট’ অনুষ্ঠানে ২৫ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের ওই প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। এতে করোনাভাইরাস মহামারিতে মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের সঙ্গে সরকারের আচরণ নিয়ে কথা বলেছিলেন রায়হান কবির। সংবাদমাধ্যমটির ইউটিউব চ্যানেলে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর থেকে এর সমালোচনা শুরু করে মালয়েশিয়া। দেশটির সরকার ওই প্রতিবেদনে তোলা অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছে।
আল জাজিরার ওই প্রতিবেদন প্রচারের পর থেকেই সাক্ষাৎকার দাতা বাংলাদেশি রায়হার কবিরের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে মালয়েশিয়ার অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। তার বিষয়ে তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিও দেওয়া হয়। পরে রায়হানের ওয়ার্ক পারমিট (কাজের অনুমতি) বাতিল করে দেওয়া হয়। এতে করে মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীতে পরিণত হন তিনি।
শুক্রবার মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের টুইট বার্তায় বলা হয়েছে, ‘অভিবাসন কর্তৃপক্ষের কাছে পলাতক হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশি রায়হান কবিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
মালয়েশিয়ার তদন্ত সংস্থা সিআইডি’র ডেপুটি পরিচালক ফরিদালাতরাশ ওয়াহিদের বরাত দিয়ে দেশটির বার্নামা টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, অভিবাসন কর্তৃপক্ষ রায়হান কবিরকে গ্রেফতার করে স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে।
উল্লেখ্য, ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর আল জাজিরার বেশ কয়েকজন কর্মীকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যমটি।
গ্রেপ্তারের আগে গতকাল নিজের হোয়াটস অ্যাপ থেকে এই প্রতিবেদককে একটি বার্তা পাঠিয়ে রায়হান কবির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমার অপরাধটা কী? আমি তো কোনো মিথ্যা বলিনি। প্রবাসীদের ওপর যে বৈষম্য ও নিপীড়ন চলেছে, আমি শুধু সেই কথাগুলো বলেছি। আমি চাই প্রবাসে থাকা কোটি বাংলাদেশি ভালো থাকুক। আমি চাই পুরো বাংলাদেশ আমার পাশে থাকুক।’
গত ৩ জুলাই আল জাজিরার ইংরেজি অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ‘লকডআপ ইন মালয়েশিয়ান লকডাউন-১০১ ইস্ট’ শীর্ষক একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে মালয়েশিয়ায় থাকা প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতি লকডাউন চলাকালে দেশটির সরকারের নিপীড়নমূলক আচরণ উঠে আসে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, রায়হান কবির নামের এক বাংলাদেশি এই নিপীড়নের প্রতিবাদ করেছেন। আল জাজিরার প্রতিবেদন দেখে রায়হান কবিরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
রায়হান কবিরের বাড়ি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের বন্দরে। তার বাবা শাহ আলম একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। গতকাল রাতে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি রাতে খবর পেয়েছি। আমাকে একজন ছেলের গ্রেপ্তারের ছবি পাঠিয়েছে। আমার ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। কিন্তু নিজে কোনোদিন কোনো অন্যায় করেনি। ২০১৪ সালে তোলারাম কলেজে থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে মালয়েশিয়া চলে যায়। সেখানেই বিএ পাস করে।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে শাহ আলম আরও বলেন, ‘ছেলের চিন্তায় ওর মা অসুস্থ। আমি নানা মাধ্যমে শুনেছি, আমার ছেলে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে গ্রেপ্তার হয়েছে। আমার বিশ্বাস আমার ছেলে সত্য বলেছে। ন্যায়ের পথে ছিল। আমি চাই পুরো দেশ ওর পাশে থাকুক।’
গত ৩ জুলাই আল জাজিরার ইংরেজি অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর থেকে দেশটির স্থানীয় নাগরিকরাও সরব হয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, মালয়েশিয়া সরকার মুভমেন্ট কনট্রোল অর্ডারের (এমসিও) মাধ্যমে মহামারির সময়ে অভিবাসীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছে।
Posted ৩:০৯ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৫ জুলাই ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta