কক্সবাংলা রিপোর্ট(৩ সেপ্টেম্বর) :: বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইনে গণহত্যা পরিচালিত হচ্ছে। এই গণহত্যার আন্তর্জাতিকভাবে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। মিয়ানমারে মানবতা বিরোধী অপরাধে যারা জড়িত তাদেরকে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় আনতে জাতিসংঘকে উদ্যোগ নিতে হবে।
৩ সেপ্টেম্বর রবিবার সকালে কুতুপালংয়ে আশ্রিত হিন্দু শরণার্থীদের পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সরকারের সাথে কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনা চলছে।অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ভাবেও বিষয়টি উত্তাপনের চেষ্টা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি মিয়ানমারে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করা হয়েছে। তাদের হত্যাকান্ড থেকে বাঁচতে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
২৭ আগষ্ট পরবর্তী বার্মা সীমান্ত অতিক্রম করে সাড়ে ৫শ জনের মতো নিগৃহীত হিন্দু শরণার্থী কুতুপালং এসে আশ্রয় নিয়েছে। তৎমধ্যে ১০০জনের মতো আতœীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।
রাখাইন হিন্দু শরণার্থীদের উপর অত্যাচার-নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন,সশস্ত্র কালো মুখোশধারীরাই হিন্দুদের হামলা করে। হামলাকারীরা বাংলায় এবং বার্মিজ ভাষায় কথা বলে। মুখোশধারীদের হাতে বন্দুক, বোমা, চোরা, দা-খুন্তিও ছিলো।
রাখাইনে হত্যাকান্ডের ব্যাপারে তিনি জানান মিয়ানমারের ফকিরা বাজারে হিন্দুদের মধ্যে ৮৬জন হিন্দুকে কেটে ফেলা হয়েছে। যাদের খোঁজ এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি ।
এছাড়া পানিরছড়া গ্রামে একটু ব্যতিক্রম দেখা গেছে।সেখানকার হিন্দু পল্লীর পার্শ্ববর্তী মগদের একটি কেয়াং ও পাড়ায় বোমা মেরে আগুন ধরিয়ে দেয়।আর হিন্দুদের বাড়ীঘর অক্ষত রেখে হিন্দুদের উদ্ধার করে বাংলাদেশে ঢুকতে সহায়তা করেছে কিছু মুসলিম ছেলে।
তবে কালো পোশাকধারীদের সম্পর্কে কিছু বলতে পারেনি কেউ। হিন্দু পল্লী গুলোর আয়তন ভেদে ২০০/৩০০ কালো মুখোশধারীরা হামলা চালায় বলে নির্যাতিতরা জানিয়েছে। গণহত্যা, নির্যাতন, নিপীড়নের ভয়ে হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলিম সম্প্রদায়ের যে সকল মিয়ানমার নাগরিকরা স্বদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। তাদেরকে স্বদেশে ফিরিয়ে নেওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ সুনিশ্চিত করতে হবে মিয়ানমার সরকারকে।
মিয়ামারের রাখাইনে গণহত্যার বিরুদ্ধে তিনি জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে সোচ্চার হয়ে মানবতাবাদী ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহবান জানান তিনি। আর বাংলাদেশে আশ্রিতদের জীবন রক্ষায় সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
এদিকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা হিন্দু পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে খোঁজখবর নেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের কক্সবাজার জেলা সভাপতি মন্ডলিন সদস্য এডভোকেট দীপংকর বড়–য়া পিন্টু।
এসময় তাদের মানবেতর অবস্থা থেকে তিনি বলেন,মিয়ামারের রাখাইনে সহিংসতা ও হত্যাকান্ড সকল মানবিকতাকে অতিক্রম করেছে।যেভাবে রাখাইন থেকে রোহিঙ্গারা প্রাণের ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে তাদের সকলকে মানবিক সহায়তা দেয়া সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়।আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত বাংলাদেশ সরকারকে এ ব্যাপারে সকল ধরনের সহযোগিতা করা।সেই সাথে মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করা।মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা হিন্দু পরিবারের সদস্যদের সাথে এসময় তিনি কথা বলেন এবং তাদের খোঁজখবর নেন।
পরে নির্যাতিত আশ্রিত রাখাইন হিন্দু শরণার্থীদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন রানা দাশগুপ্ত।এসময় সাথে ছিলেন, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাষ্টি অধ্যাপক প্রিয়তোষ শর্মা চন্দন, হিন্দু-বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম মহা নগরীর সভাপতি পরিমল কান্তি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক তাপস হোড়, কক্সবাজার জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সহ সভাপতি এডভোকেট দীপংকর বড়–য়া পিন্টু,কক্সবাজার জেলা পুজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি এড. রনজিত দাশ,সদর পুজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি দীপক দাশ, সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা,সহ-সম্পাদক দীপক শর্মা দীপু,ঐক্য পরিষদের সহ সম্পাদক চঞ্চল দাশগুপ্ত,উখিয়া উপজেলা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি স্বপন শর্মা রনি, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রবীন্দ্র দাশ রবি।
Posted ৮:১৫ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta