কক্সবাংলা ডটকম(২৯ আগস্ট) :: জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের সুপারিশ এসেছে। তবে মিয়ানমারকে আইসিসিতে (আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত) টেনে নিতে সময় লাগবে এবং কাজটি সহজ হবে না।
এক্ষেত্রে বাধা হবে ভূরাজনীতি। চীন ওই আদালতে তার মিত্র মিয়ানমারের বিচারে বাধা দেবে। সঙ্গে যোগ দিতে পারে রাশিয়াও। খবর এএফপি।
মিয়ানমারের বিষয়ে গত বছরের মার্চে তদন্ত শুরু করে জাতিসংঘ। সংস্থার তিন সদস্যের তথ্যানুসন্ধানী দল সোমবার তাদের ১৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, খুন, ধর্ষণ ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে সাত লাখ রোহিঙ্গাকে জোরপূর্বক বাংলাদেশে ঠেলে দিতে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানও সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংসহ সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিচার হওয়া উচিত।
প্রতিবেদনটি মিয়ানমারে সংঘটিত অপরাধের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এ পর্যন্ত সবচেয়ে জোরালো পদক্ষেপ। কিন্তু এ কাজে বড় ধরনের কয়েকটি আইনি ও কূটনৈতিক বাধা আসবে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন।
নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত আইসিসিতে বিচার শুরু করতে সবার আগে নিরাপত্তা পরিষদকে উদ্যোগ নিতে হবে। নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের বিষয়টি ওই আদালতে রেফারেন্স হিসেবে পাঠালেই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে বাধা হবে ভূরাজনীতি।
আইসিসিতে সম্ভাব্য রেফারেলে ভেটো দিতে পারে চীন ও রাশিয়া, যে দেশটি গত সপ্তাহে মিন অং হ্লাইংকে অতিথি হিসেবে আপ্যায়ন করেছে।
চীন বরাবরই মিয়ানমারের নিন্দা জানাতে নারাজ। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইং গতকালও সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘রাখাইন প্রদেশের ঐতিহাসিক, নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপট খুব জটিল। কাজেই এ সমস্যার সমাধান হবে কীভাবে?’ প্রশ্ন করেছেন তিনি। এরপর নিজেই জবাব দিয়েছেন, ‘আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে। আমার মনে হয় কোনো পক্ষকে দায়ী করে, চাপ দিয়ে কাজ হবে না।’
জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর মানবাধিকার সংগঠনগুলো জরুরি ভিত্তিতে অপরাধীদের বিচার শুরুর আহ্বান জানিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও ফর্টিফাই রাইটস মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) দ্বারস্থ করতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে উদ্যোগ নিতে বলেছে।
নিরাপত্তা পরিষদ ২৮ আগস্ট মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠক করেছে। বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় পরিষদের ৮ হাজার ৩৩৩তম এ বৈঠক হওয়ার কথা।
তবে চীনের বাধার কারণে ওই বৈঠকে বেশি কিছু আশা করার নেই বলে ২৮ আগস্ট নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয়েছে।
প্রভাবশালী মার্কিন দৈনিকটি নিবারণমূলক ব্যবস্থা হিসেবে অর্থনৈতিক ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং তদন্ত প্রতিবেদনে নাম আসা জেনারেলদের সম্পদ জব্দ করার পরামর্শ দিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) চলতি সপ্তাহেই জাতিসংঘ তদন্ত দলের সঙ্গে বৈঠক করবে। এর আগে ইইউ মিয়ানমারের পাঁচ জেনারেলের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং দেশটির সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করলেও মিন অং হ্লাইংয়ের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এবার তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থার ঘোষণা আসতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আইসিসিতে বিচারে চীন বাধা দিলে নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের জন্য অ্যাডহক বা মিশ্র ট্রাইব্যুনালের কথা ভাবতে পারে। রুয়ান্ডা, যুগোস্লাভিয়া, লেবানন ও কম্বোডিয়ার গণহত্যার বিচারে এমন ট্রাইব্যুনাল গঠন হয়েছিল।
এর আগে আইসিসির চিফ প্রসিকিউটর ফাতু বেনসুদা স্বপ্রণোদিত হয়ে মিয়ানমারের বিচারের উদ্যোগ নেয়ার বিষয়ে আদালতের এখতিয়ার জানতে চেয়েছিলেন। মিয়ানমারের কর্মকর্তারা তখন ধারণাটি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। মিয়ানমার আইসিসির সদস্য না হওয়ায় এমন বিচার সম্ভব নয় বলে তারা দাবি করেন।
আইসিসি প্রসিকিউটর বলেন, বাংলাদেশ যেহেতু এ আদালতের সদস্য এবং অপরাধের প্রভাব যেহেতু বাংলাদেশের ওপর পড়েছে, তাই আইসিসি বিচারের উদ্যোগ নিতে পারে। এ উদ্যোগের পথটি এখনো খোলা বলে মনে করেন ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টসের সদস্য কিংসলে অ্যাবট।
তিনি বলেন, আইসিসি প্রসিকিউটর প্রাথমিক তদন্তের উদ্যোগ নিয়ে মিয়ানমারের অপরাধীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আদালতের সদস্য দেশগুলো সুযোগ পেলে জেনারেলদের গ্রেফতার ও কাঠগড়ায় নিতে পারবে।
Posted ৩:২৩ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৯ আগস্ট ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta