কক্সবাংলা ডটকম(১৩ জুলাই) :: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বেড়ে গত মাসে নতুন রেকর্ড গড়েছে। গতকাল প্রকাশিত উপাত্তের জেরে বিশ্বের বৃহত্তম দুটি অর্থনীতির মধ্যে যে বাণিজ্য দ্বন্দ্ব চলছে, তা আরো চরম আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। খবর এএফপি।
দুই দেশের বাণিজ্য নিয়ে উপাত্তগুলো এমন সময় প্রকাশিত হলো, যখন উভয়ই পরস্পরের কোটি কোটি ডলার সমমূল্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরো ২০ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন।
বেইজিং জানিয়েছে, জুনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের উদ্বৃত্ত সর্বকালের সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮৯৭ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। অন্যদিকে সে দেশে চীনের রফতানি ৪ হাজার ২৬২ কোটি ডলারে উন্নীত হয়ে রেকর্ড গড়েছে।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে উদ্বৃত্তের পরিমাণ বেড়ে ১৩ হাজার ৩৮০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যা গত বছরের তুলনায় ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ট্রাম্পের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও এটি বেড়েই চলেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বরাবরই অভিযোগ করে আসছেন— চীনের অন্যায্য বাণিজ্যচর্চা বাণিজ্য উদ্বৃত্তের পরিমাণ বৃদ্ধি করছে এবং মার্কিন কোম্পানি ও চাকরির ক্ষতি করছে।
তবে বৃহস্পতিবার চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতির মাধ্যমে এসব সমস্যার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকেই দায়ী করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতার ব্যাপারটি ‘অতিমূল্যায়িত’ এবং এর কারণ যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব ‘অভ্যন্তরীণ কাঠামোগত সমস্যা’।
চীনের সার্বিক উদ্বৃত্ত অবশ্য অব্যাহতভাবে হ্রাস পাচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বছরওয়ারি ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। দেশটির বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত আট প্রান্তিক ধরে উদ্বৃত্ত কমেছে।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের চীনা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। চীন একে অর্থনৈতিক ইতিহাসের ‘বৃহত্তম বাণিজ্যযুদ্ধ’ আখ্যা দিয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে সমমূল্যের মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করে।
গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে চীনা বন্দর কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র হুয়াং শংপিং বলেন, এ বাণিজ্যযুদ্ধ অবশ্যই চীন-মার্কিন বাণিজ্যের ওপর প্রভাব ফেলার পাশাপাশি বৈশ্বিক বাণিজ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব রাখবে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুই পক্ষ বাণিজ্য বিষয়ে সমঝোতার জন্য কোনো রকম আলোচনা করছে না। দেশটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ২০ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের যে হুমকি দিয়েছে, তারাও এর পাল্টা জবাব দেবে।
বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তাপে কোনো রকম ছাড় না দিলেও পর্যবেক্ষকরা সতর্ক করে বলেছেন, চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শ্লথ হতে থাকার ফলে এর প্রভাবে দেশটি ক্ষতির সম্মুখীন হবে এবং পাহাড়সম ঋণের মুখোমুখি হতে হবে।
ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের জুলিয়ান ইভান্স-প্রিচার্ড বলেন, আসছে দিনগুলোতে মার্কিন শুল্কের প্রভাবে এবং বৈশ্বিক চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় চীনের রফতানি প্রবৃদ্ধি কমে আসবে।
অন্যদিকে নমুরা বিনিয়োগ ব্যাংকের চীনা-বিষয়ক অর্থনীতিবিদ তিং লু পূর্বাভাস দেন, বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা প্রত্যাশার চেয়ে খারাপ হওয়ায় বেইজিং তার অবস্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হবে। এক গবেষণাপত্রে লু বলেন, আমরা আশা করছি বছরের দ্বিতীয়ভাগে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে।
জুনে চীনের মোট রফতানি বছরওয়ারি ১১ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ব্লুমবার্গের পূর্বাভাস করা ৯ দশমিক ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে আমদানির পূর্বাভাস ২১ দশমিক ৩ শতাংশ থাকলেও বাস্তবে তা ছিল অনেক কম, মাত্র ১৪ দশমিক ১ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগেই মার্কিন আমদানিকারকরা তড়িঘড়ি করে চীনা পণ্যের আমদানি বৃদ্ধি করায় জুনে চীনা রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বাণিজ্যযুদ্ধ অব্যাহত থাকলে আসন্ন মাসগুলোতেও এ উপাত্তের ওপর প্রভাব পড়বে।
বেইজিং স্থানীয় কোম্পানিগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য উৎস থেকে আমদানির সন্ধান করার নির্দেশ দিয়েছে। চলতি সপ্তাহে চীনের সর্ববৃহৎ শস্য বাণিজ্য কোম্পানির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা মার্কিন সয়াবিনের বদলে দক্ষিণ আমেরিকা ও পূর্ব ইউরোপ থেকে পণ্য আমদানির চেষ্টা চালাচ্ছেন।
গতকাল চীনের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঝাং জুন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক আইন এবং ব্যবস্থার ওপর কোনো শ্রদ্ধা নেই। তিনি আরো বলেন, ব্রিকসভুক্ত অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে চীন বাণিজ্য সহযোগিতা বৃদ্ধি করে মার্কিন একমুখিতা ও বাণিজ্য সুরক্ষাবাদের জবাব দেবে।
উল্লেখ্য, ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে এ জোট গঠিত। চলতি মাসের ২৫-২৭ তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে দশম ব্রিকস সম্মেলনে চীনা প্রধানমন্ত্রী শি জিনপিংয়ের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
Posted ১:২৭ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৪ জুলাই ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta