কক্সবাংলা ডটকম(১২ সেপ্টেম্বর) :: যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে ধেয়ে আসছে শক্তিশালী হারিকেন ফ্লোরেন্স। বুধবার মার্কিন কর্তৃপক্ষ প্রায় ১০ লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
বর্তমানে ক্যাটাগরি-৪ এর ঝড়ে রূপ নিয়েছে হারিকেন ফ্লোরেন্স। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার। মার্কিন আবহাওয়া দপ্তরের সংজ্ঞা অনুযায়ী, ক্যাটাগরি-৪ ঝড় হলো, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শক্তিশালী ঝড়। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে এর আগে ৪ মাত্রার ঝড় আঘাত হানেনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি টুইটে লেখেন, ‘অনেক বছর পর পূর্ব উপকূলে এ রকম ভয়াবহ ঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে। প্লিজ! (আপনারা) প্রস্তুত থাকুন, সতর্ক থাকুন এবং নিরাপদ থাকুন।’
বৃহস্পতিবার সম্ভাব্য আঘাত হানার আগে উপকূলরেখার প্রায় ১০ লাখ বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সাউথ ক্যারোলাইনার গভর্নর হেনরি ম্যাকমাস্টার। মঙ্গলবার থেকে অঙ্গরাজ্যের ৪৬টি কাউন্টির মধ্যে ২৬টিরই সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রতিবেশী নর্থ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যেও বেশ কয়েকটি এলাকা, আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র খালি করার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। এদিকে ভার্জিনিয়াতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে এবং সেখানকার উপকূলীয় অঞ্চলের ২ লাখ ৪৫ হাজার বাসিন্দাকে সরে যেতে বলা হয়েছে।
সাউথ ক্যারোলাইনার গভর্নর ম্যাকমাস্টার বলেন, ‘এটি খুবই বিপজ্জনক হারিকেন।’ উপকূলীয় কাউন্টিগুলোর বাসিন্দাদের স্থানত্যাগের নির্দেশটি ‘ঐচ্ছিক নয়, বরং বাধ্যতামূলক’ বলে জানান তিনি।
সাংবাদিকদের সামনে তিনি আরো বলেন, ‘এ হারিকেনে আমরা সাউথ ক্যারোলাইনার একজন বাসিন্দার জীবনও ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না।’
হারিকেন শেষে বন্যার আশঙ্কা করছেন সাউথ ক্যারোলাইনার গভর্নর।
উপকূলীয় দুটি অঙ্গরাজ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণার অনুমোদন করেছেন ট্রাম্প। ফলে ওই অঙ্গরাজ্যগুলোর জানমালের নিরাপত্তা প্রচেষ্টায় তহবিল ও সরঞ্জাম সরবরাহে রাষ্ট্রীয় তহবিল জোগানো সহজতর হবে।
ট্রাম্প আরো জানিয়েছেন, তিনি ঝুঁকিপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোর গভর্নরদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং আশ্বাস দিয়েছেন ফেডারেল সরকার সহায়তার জন্য ২৪ ঘণ্টাই প্রস্তুত থাকবে।
এদিকে হারিকেনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে মনে হচ্ছে, সাউথ ও নর্থ ক্যারোলাইনা এবং ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ আঘাত হানতে পারে ফ্লোরেন্স।
মার্কিন নৌবাহিনী থেকে বলা হচ্ছে, ভার্জিনিয়ায় নোঙররত ৩০টি জাহাজ সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি চলছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস বলেন, বিশ্বকে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে আসন্ন জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি ঠেকাতে হবে। ‘বিশ্ব সরাসরি অস্তিত্বের সংকটে রয়েছে’ দাবি করে তিনি আগামী দুই বছরে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার নিউইয়র্কের একটি অনুষ্ঠানে গুতেরেস আরো বলেন, ‘আমাদের চেয়েও দ্রুতগতিতে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে।’ এ বিষয়টিতে বিশ্বনেতৃত্বের অবহেলার নিন্দা করেছেন তিনি।
জাতিসংঘ মহাসচিব সবাইকে সতর্ক করে বলেন, ‘আমরা যদি ২০২০ সালের মধ্যে আমাদের গতিপথ না পাল্টাই, (যে পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ঠেকানো সম্ভব হতে পারে) এবং যেসব প্রাণের ওপর আমরা নির্ভরশীল, তা এক ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে এগোবে।’
জলবায়ু পরিবর্তনের বিপজ্জনক দিক বোঝাতে তিনি ভারতের কেরালায় সাম্প্রতিক প্রলয়ঙ্করী বন্যা, গত বছর পুয়ের্তো রিকোতে হারিকেন মারিয়ায় প্রায় তিন হাজার প্রাণহানি, আর্কটিক সাগরের সংকোচন এবং বিশ্বে ছাই ছড়িয়ে দেয়া বিভিন্ন দাবানলের কথা উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন।
গুতেরেস আরো বলেন, বিজ্ঞানীরা কয়েক দশক ধরেই বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ে সতর্কবাণী দিচ্ছেন, কিন্তু বেশির ভাগ নেতাই এতে কর্ণপাত করেননি এবং খুব কম নেতাই বিজ্ঞানের সতর্কবাণী আমলে নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
Posted ৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta