বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা অস্ত্রের দিকে ঝুঁকছে কি ভারত?

শুক্রবার, ১৪ জুলাই ২০২৩
184 ভিউ
যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা অস্ত্রের দিকে ঝুঁকছে কি ভারত?

কক্সবাংলা ডটকম(১৪ জুলাই) :: যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত কয়েক শ কোটি ডলারের সমরাস্ত্র কিনছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে এ নিয়ে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে দীর্ঘদিনের মিত্র রাশিয়ার অস্ত্রের ওপর থেকে ভারতের আস্থা কমে যাচ্ছে, এ জন্য তারা পশ্চিমা অস্ত্রের দিকে ঝুঁকছে। ভারতের নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভারত বরং এখন নিজেদের অভ্যন্তরীণ অস্ত্রশিল্পকে এগিয়ে নিতে চায়।

ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানিকারক দেশ। তবে তারা এখন কৌশল বদলেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অস্ত্র কেনার সময় চুক্তিতে যৌথভাবে সমরাস্ত্র উৎপাদন বা প্রযুক্তি স্থানান্তরের মতো বিধানকে অন্তর্ভুক্ত করছে। সেটা যেকোনো দেশের সঙ্গে অস্ত্র কেনার চুক্তি হোক না কেন।

ভারতের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা অবশ্য মানছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া থেকে ভারতের অস্ত্র সরবরাহ বেশ ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় ভারত অস্ত্র আমদানিতে বৈচিত্র্য আনা বা আমদানির বদলে দেশে অস্ত্র তৈরির দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা পূরণের পথ বেছে নিয়েছে।

স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, গত ২০ বছরে ভারত অন্তত ছয় হাজার কোটি মার্কিন ডলারের অস্ত্র কিনেছে। এর মধ্যে কেবল রাশিয়া থেকে তারা ৬৫ শতাংশ বা ৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের অস্ত্র কিনেছে।

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, আগামী এক দশকে ভারত সরকার দেশীয় অস্ত্র কারখানাগুলো থেকে ১০ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র কিনতে চায়।

ভারতের ভবিষ্যৎ সামরিক সক্ষমতা নিয়ে কাজ করেন, এমন একজন শীর্ষ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রাশিয়ার ওপর থেকে আমাদের নির্ভরতা কমাতে হবে। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। এটা হচ্ছে দ্বিতীয় বিষয়। প্রথম বিষয় হচ্ছে, আমাদের আমদানির ব্যবসা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

গত মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওয়াশিংটন সফরের সময় ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র কেনার ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে যুদ্ধবিমানের জন্য ১০০ কোটি ডলারের জিই ইঞ্জিন কেনার চুক্তিও রয়েছে। এ ছাড়া এমকিউ-৯বি সিগার্ডিয়ান ড্রোন কেনার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

দিল্লির দীর্ঘদিনের অস্ত্র উৎপাদনে আত্মনির্ভরশীলতার আকাঙ্ক্ষা এবং মোদির ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নীতির সঙ্গে সংগতি রেখে ভবিষ্যতে যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন উৎপাদনের বিষয়টি ক্রয়চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে সিগার্ডিয়ান ড্রোন ভারতে অ্যাসেম্বল ও রক্ষণাবেক্ষণের কথাও উঠে এসেছে।

ভারতের নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এত দিন কেবল ‘মুখে মুখে’ বলেছে। তবে এখন মার্কিন সামরিক প্রযুক্তিতে ভারতের প্রবেশগম্যতা শিথিল করা হচ্ছে। তিনি বলেন, অন্যান্য ঘনিষ্ঠ মিত্রদের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র ‘প্রযুক্তি বিনিময়ে’ এখন ভারতের দিকে অনেক বেশি এগিয়ে আসছে।

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ যে রাশিয়ার ওপর থেকে ভারতের নির্ভারশীলতার অবসান করবে, সেটা ভাবার কোনো কারণ নেই। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রযুক্তি বিনিময়ের আইন বেশ কঠোর, যা ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে অস্ত্র কেনাবেচার সম্ভাবনাকে সীমিত করে তুলতে পারে।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কর্মকর্তা বলছিলেন, ‘কেউ-ই আপনাকে সবকিছু দেবে না। অন্তত কিছু না কিছু তারা আপনার কাছ থেকে গোপন রাখবে।’

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ আরজা তারাপোরে বলেন, মোদির সফরের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্ত্র ক্রয়চুক্তির অর্থ এই নয় যে ভারত নিজেদের রাশিয়া থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। রাশিয়া থেকে সরে যেতে ভারতের কয়েক দশক লাগবে।

চীনের সঙ্গে ব্যবধান

প্রথাগত অস্ত্রের ক্ষেত্রে ভারত এখনো অনেকাংশে রাশিয়ার প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে। তারাপোরে বলেন, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা হচ্ছে সেই নতুন ব্যবস্থা, যেটা এখন ভারতের কাছে নেই।

ভারতের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গে প্রযুক্তিগত ব্যবধান কমিয়ে আনা। চীনকে নিয়ে এতটা গুরুত্ব দেওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে, আরেক চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে রয়েছে তাদের সখ্য।

ভারতের জন্য একটি সমস্যা হচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর মস্কোর অস্ত্র সরবরাহের সক্ষমতা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারতের বিমানবাহিনী সম্প্রতি সংসদীয় প্যানেলকে বলেছে, রাশিয়া সুকই সু-৩০ এমকেআই এবং মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানের সরঞ্জামাদি সরবরাহে দেরি করছে।

বিমানবাহিনী আরও জানিয়েছিল, এ ছাড়া পাঁচটি এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বাকি দুটি সরবরাহেও বেশ দেরি হচ্ছে। ২০১৮ সালে রাশিয়া থেকে ভারত ৫৫০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের এসব সমরাস্ত্র কিনেছিল।

কর্মকর্তারা বলছেন, ভারত আশা করছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তারা রাশিয়া থেকে পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ পাবে। কিন্তু সেটিও দেরি হতে পারে।

প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধরনের সমস্যার কারণে ভারতকে রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে হবে। তবে শুধু রাশিয়া নয়, তারা অন্য যেকোনো দেশের কাছ থেকে সমরাস্ত্র কেনার ক্ষেত্রে নির্ভরতা কমিয়ে আনতে চায়।

কর্মকর্তারা বলছেন, ভারত ফরাসি যুদ্ধবিমান, ইসরায়েলি ড্রোন, মার্কিন যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন এবং জার্মান সাবমেরিন কিনছে। এসব অস্ত্র কেনার ফলে ধীরে ধীরে রুশ সামরিক প্রযুক্তির ওপর নির্ভরতা কমে আসবে। তবে আজ বা কাল সেটা হচ্ছে না, এতে অন্তত দুই দশক লেগে যেতে পারে।

ন্যূনতম সীমাবদ্ধতা

পেন্টাগনের সাবেক শিল্পনীতিবিষয়ক কর্মকর্তা বিল গ্রিনওয়াল্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া বৈশ্বিক প্রতিরক্ষা বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। তবে বৈশ্বিক পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, তাদের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণের সময় শেষ হয়ে আসছে। অবশ্য তাদের বিকল্প কে হবে—সেটা এখনো অজানা।

সাবেক এই পেন্টাগন কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র রপ্তানির কঠোর নীতির কারণে ভারত নিরাশ হতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ভারতের পশ্চিমা সেসব দেশের সহযোগিতা অন্বেষণ করা উচিত, যারা প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে পারে। এতে পশ্চিমাদের কাছ থেকে তারা ন্যূনতম সহযোগিতা হলেও পেতে পারে।’

ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ট্রাফিকিং ইন আর্মস (আইটিএআর) বিধিনিষেধের সঙ্গে সংগতি রেখেই ভারতে অস্ত্র রপ্তানি করতে হবে। ভারত আইটিএআর চুক্তির সদস্যভুক্ত দেশ নয়। উদাহরণস্বরূপ, এইউকেইউএস চুক্তির আওতায় অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যেভাবে প্রযুক্তি বিনিময় করা যায়, ভারতের সঙ্গে সেভাবে করা যাবে না। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন সাবমেরিন ভারতের কাছে রপ্তানি নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০০ কোটি ডলারের জিই ইঞ্জিন কেনার চুক্তিও হয়েছে
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০০ কোটি ডলারের জিই ইঞ্জিন কেনার চুক্তিও হয়েছে- ফাইল ছবি: রয়টার্স

এমনকি মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন এক পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে বলা হলেও সীমাবদ্ধতা কিছুটা রয়েই গেছে। প্রতিরক্ষা চুক্তি ছাড়াও দুই দেশের মধ্যে চিপ, মহাকাশ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ (এআই) বেশ কয়েকটি খাতে চুক্তি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ভারত কোয়াড জোটের সদস্য। এর মাধ্যমে পশ্চিমের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। তবে এই সম্পর্ক রাশিয়ার সঙ্গে তাদের কয়েক দশকের সম্পর্কের বিকল্প হয়ে ওঠেনি।

র‌্যান্ড করপোরেশনের প্রতিরক্ষাবিষয়ক বিশ্লেষক ডেরেক গ্রসম্যান বলেন, এই একটি কারণে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে যেকোনো সামরিক সরঞ্জাম বা প্রযুক্তি বিনিময়ের ক্ষেত্রে সব সময় সতর্ক থাকবে।

গ্রসম্যান বলছেন, এমনকি আগামী কয়েক দশকে ভারত যদি মস্কো থেকে দূরেও সরে যেতে পারে, তারপরও যুক্তরাষ্ট্র তাদের সামরিক ব্যবস্থা ভারতে কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, তা নিয়ে সন্দিহান থাকবে। কোনোভাবে এই প্রযুক্তি রাশিয়ার হাতে গেল কি না, বিষয়টি তাদের ভাবনায় থাকবে। এর একমাত্র কারণ, ভারত-রাশিয়ার সম্পর্ক।

প্রতিরক্ষাবিষয়ক বিশ্লেষক ডেরেক গ্রসম্যান বলছিলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে ভারত সুযোগসন্ধানী হতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্র যা-ই দিক না কেন, তারা সেটা গ্রহণ করতে পারে। তবে আমি মনে করি না, রাশিয়ার সঙ্গে তাদের যে সম্পর্ক রয়েছে, সেটা তারা কখনো ত্যাগ করতে চাইবে।’

184 ভিউ

Posted ১১:৪৯ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৪ জুলাই ২০২৩

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com