কক্সবাংলা ডটকম(২৬ নভেম্বর) :: বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য বিবাদ বলা যায় ভারতের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধে আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছে বেইজিংয়ের রফতানি। এ সুযোগটিই গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করতে চাইছে ভারত। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য বাজারে নিজেদের পণ্য রফতানি বৃদ্ধির দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে দেশটি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ায় ভারতকে কাছে টানতে চাইছে চীন। খবর ব্লুমবার্গ।
ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী সুরেশ প্রভু জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পরস্পরের আমদানি পণ্যের ওপর পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপের পর নয়াদিল্লি গাড়ির যন্ত্রাংশ, রাসায়নিক, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির মতো পণ্য রফতানিতে গুরুত্ব দিচ্ছে। যদিও আন্তর্জাতিক পণ্য রফতানিতে ভারতের চেয়ে চীনের দখল অনেক বেশি। এখানে ভারতের দখল ১ দশমিক ৭ শতাংশ, যেখানে চীন নিয়ন্ত্রণ করছে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ।
বাণিজ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান এ বাণিজ্য বিবাদের ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। দীর্ঘমেয়াদি কৌশল হিসেবে উৎপাদন সক্ষমশীলতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, অন্যান্য বাজারের চাহিদার প্রতিও সজাগ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।’
জানুয়ারিতে চীন থেকে রফতানি করা আরো ২০ হাজার কোটি ডলার মূল্যমানের পণ্যে শুল্কারোপ করতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারত এখন এ বিবাদ থেকে সুবিধা করে নেয়ার পথ খুঁজছে। রফতানি প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এরই মধ্যে বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের ধুম দেখা যাচ্ছে।
বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে অনেক কোম্পানিই এখন এ অঞ্চলে তাদের উৎপাদন কার্যক্রম স্থানান্তর করছে। আমদানি ও রফতানিতে ব্যবধান কমিয়ে আনার উপায় অনুসন্ধানে ব্যস্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একে একটি বড় সুযোগ হিসেবে দেখছেন। অক্টোবরে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭১০ কোটি ডলার।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দূরত্ব বৃদ্ধির কারণে চীনও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মিষ্টি করে তুলতে চাইছে। ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত চিনি কিনতে চাইছে বেইজিংয়ের রিফাইনাররা। চীনের একটি প্রতিনিধি দল আগামী মাসে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে আসছেন।
তারা ভারতের বিভিন্ন চিনিকলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং লজিস্টিক অবকাঠামোগুলো পরিদর্শন করবেন বলে জানা গেছে। চায়না সুগার অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান লিয়ু হান্দে এ প্রসঙ্গে জানান, ‘যদি ভালো দাম পাওয়া যায়, তাহলে রিফাইনাররা চিনি কিনতে পারে।
তবে চীনের কাছে চিনি বিক্রির ক্ষেত্রে ভারতের জন্য উপযোগী সময় নয় এটি, কারণ চীনে রেকর্ড উৎপাদনের সুবাদে স্থানীয় মজুদ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তবে ভারতের সঙ্গে চিনি ক্রয়সংক্রান্ত কোনো চুক্তি হলে এটি হবে কৃষিপণ্য ক্রয়ের দ্বিতীয় চুক্তি। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কিছুদিন আগেই চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা ভারত থেকে বাসমতি বাদে অন্য সব ধরনের চাল কিনবে।
সাংহাই বাইউয়ান ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির তহবিল ব্যবস্থাপক ঝান জিয়াও বলেন, ‘বাণিজ্য সহযোগীদের প্রতি উদার মনোভাব দেখানোর প্রয়োজন রয়েছে চীনের এবং এ কারণে প্রতীকী অর্থে হলেও কিছু পণ্য কিনতে হবে দেশটিকে।’
তিনি আরো বলেন, তবে ভারতের ধারণা অনুযায়ী চীনের ক্রয়ের পরিমাণটি খুব বেশি হবে না। বিশেষ করে চীনের নিজেদেরই যেখানে বিশাল মজুদ রয়েছে।
বিষয়টি স্বীকার করে চায়না সুগার অ্যাসোসিয়েশনের লিউ জানান, নিজেদের মজুদ ‘এখনো অনেক বেশি’ এবং তা কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। চীনের আগের পদক্ষেপগুলো ঝান ও লিউর দাবির সত্যতারই আভাস দেয়। গত বছরের মে মাসে স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষিত রাখতে আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে দিয়েছিল চীন। বর্তমানে চীনে নির্ধারিত বার্ষিক কোটার বাইরে চিনি আমদানি করলে ৯০ শতাংশ কর দিতে হয় আমদানিকারকদের।
তবে শুল্কারোপ সত্ত্বেও চীনে নিয়মিত সরবরাহকারী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ভারতের অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, বাম্পার আবাদের সুবাদে ১৬ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ব্রাজিলকে টপকে বিশ্বের বৃহত্তম চিনি উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে নাম লেখাতে যাচ্ছে ভারত।
হাতে প্রচুর পরিমাণে মজুদ থাকার পাশাপাশি বেঞ্চমার্ক সুগার ফিউচারসের সূচক চলতি বছর এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পতন হওয়ায় ভারতীয় সরকার মিল মালিকদের রফতানি বৃদ্ধি করতে আর্থিক প্রণোদনা দিচ্ছে।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, আগামী বছর থেকে চীনে ২০ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি রফতানির পরিকল্পনা করছে ভারত।
ভারতের ন্যাশনাল ফেডারেশন অব কো-অপারেটিভ সুগার ফ্যাক্টরিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকাশ নায়েকনাভার বলেন, ‘আমরা আশা করছি, চীন তাদের রিফাইনারগুলোকে দ্রুত আমদানি পারমিট দেবে।’
Posted ৯:৪৫ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta