রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

রপ্তানির আড়ালে কৌশলে অর্থ পাচার

শনিবার, ১২ আগস্ট ২০২৩
42 ভিউ
রপ্তানির আড়ালে কৌশলে অর্থ পাচার

কক্সবাংলা ডটকম :: রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচারের প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রায় সময়েই এ ধরনের তৎপরতা প্রতিহত করছে কাস্টমস। সরকারি প্রণোদনা হাতিয়ে নিতেও রপ্তানিতে জালিয়াতি করা হচ্ছে। এসব অপকর্ম সম্পন্ন করতে অসাধু ব্যবসায়ীরা মূলত সাতটি পন্থা বা কৌশল অনুসরণ করছেন, যা চিহ্নিত করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

এগুলো হচ্ছে-আমদানি পণ্যের মূল্য বেশি-কম (ওভার ইনভয়েসিং, আন্ডার ইনভয়েসিং) দেখানো, কম ঘোষণায় বেশি পণ্য রপ্তানি, বেশি ঘোষণায় কম পণ্য রপ্তানি, কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে রপ্তানি, ভুয়া রপ্তানি এবং শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা পণ্য রপ্তানিতে জালিয়াতি।

সম্প্রতি রপ্তানি আড়ালে অর্থ পাচারের তথ্য-প্রমাণসহ এ সাত কৌশল তুলে ধরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) একটি প্রতিবেদন দিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। ওই প্রতিবেদনে অর্থ পাচার রোধে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ ৬টি সুপারিশ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দার মহাপরিচালক ফখরুল আলম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কাস্টমস রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচারের বেশকিছু তৎপরতা প্রতিহত করেছে। দুষ্কৃতকারীরা প্রণোদনার অর্থ আত্মসাতে এবং অর্থ পাচার করতে যত পন্থা অবলম্বন করেছে, পূর্ণাঙ্গ তথ্যসহ তার বিস্তারিত তুলে ধরে সুপারিশসহ এনবিআরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমদানি-রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচার হচ্ছে, এটা সর্বজনবিদিত। শুল্ক গোয়েন্দা রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচারের পদ্ধতিগুলো শনাক্ত করতে পেরেছে, এজন্য তারা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। যারা অর্থ পাচার করছে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া গেলে এই প্রবণতা থামানো সম্ভব হবে না।

আর শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদন সার্থকও হবে না। তিনি আরও বলেন, অসৎ ব্যবসায়ী, কাস্টমস কর্মকর্তা ও ব্যাংক কর্মকর্তা-এই ত্রিপক্ষীয় যোগসাজশ ছাড়া কোনোভাবেই অর্থ পাচার সম্ভব নয়। ইতোমধ্যে অর্থ পাচারের যেসব ঘটনা শনাক্ত হয়েছে, সেসব ঘটনায় জড়িত কাস্টমস ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরে প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থ পাচারের পাশাপাশি রপ্তানিতে জালিয়াতিতে করা হচ্ছে মূলত সরকারি প্রণোদনা হাতিয়ে নিতে। বর্তমানে সরকার রপ্তানি বহুমুখী করতে পণ্যভেদে ১ থেকে ২০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে। ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে পণ্যের মূল্য ও ওজন বাড়িয়ে দেখিয়ে প্রণোদনার অর্থ আত্মসাৎ করা হচ্ছে।

যেমন গত বছরের মার্চে সাগর জুট ডাইভারসিফাই ইন্ডাস্ট্রিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান কাস্টমসে ১৮ হাজার পিস (২ হাজার ৩১২ কেজি) পাটের তৈরি ডোর ম্যাট রপ্তানির ঘোষণা দেয়, যার রপ্তানি মূল্য দেখানো হয় ৮১ লাখ ৩১ হাজার টাকা। কিন্তু কায়িক পরীক্ষায় ৬ হাজার ১১৬ পিস (২৪৪ কেজি) পাটের তৈরি ন্যাপকিন পাওয়া যায়, এর মূল্য হচ্ছে এক লাখ ৫ হাজার টাকা। এ চালানটি রপ্তানি করতে প্রতিষ্ঠানটি ১৬ লাখ টাকা প্রণোদনা দাবি করতে পারত।

আবার আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমেও অর্থ পাচার হচ্ছে। যেসব পণ্যের রপ্তানি প্রণোদনা নেই বা কম, সেইসব পণ্যে আন্ডার ইনভয়েসিং করা হয়। ২ ফেব্রুয়ারি জি ফ্যাশন ট্রেডিং এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠান বিদেশে টি-শার্ট রপ্তানির জন্য কাস্টমসে বিল অব এক্সপোর্ট জমা দেয়, যাতে টি-শার্টের মূল্য ১২ টাকা (১২ সেন্ট) ঘোষণা দেওয়া হয়। সাধারণত এত মূল্যে বাংলাদেশ থেকে টি-শার্ট রপ্তানি হয় না। মূলত অবৈধভাবে অর্থ বিদেশে রেখে দিতেই এই পন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে।

অন্যদিকে কম ঘোষণায় বেশি পণ্য রপ্তানির ঘটনাও ঘটছে। গত বছরের জানুয়ারিতে এসআর ফ্যাশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান কাস্টমসে ৬০ হাজার পিস তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে বিল অব এক্সপোর্ট জমা দেয়।

কায়িক পরীক্ষায় এক লাখ ২৭ হাজার পিস তৈরি পোশাক পাওয়া যায়। অতিরিক্ত এই ৬৭ হাজার পিস তৈরি পোশাকের মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা। ক্ষেত্রবিশেষে বেশি ঘোষণা দিয়ে কম পণ্য পাঠানোর ঘটনাও ঘটছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নমুনা ঘোষণায় বিদেশে পুরো কনটেইনার বোঝাই পণ্য পাঠানো হচ্ছে।

এক্ষেত্রে বিভিন্ন নামকরা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ই-এক্সপি জাল করা হচ্ছে। নমুনা পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে কাস্টমসে মূল্য, এক্সপোর্ট এলসি, কন্ট্রাক্ট ও সেলস অর্ডার উল্লেখ থাকে না। এক্ষেত্রে কোনো অর্থই দেশে প্রত্যাবাসন না হয়ে পুরোটাই বিদেশে পাচার হয়ে থাকে। যেমন সাবিহা সাকি নামে একটি প্রতিষ্ঠান ৩৭৯ কোটি টাকা, এশিয়া ট্রেডিং করপোরেশন ২৮২ কোটি টাকা এবং ইমু ট্রেডিং করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান ৬২ কোটি টাকার নমুনা পণ্য বিদেশে পাঠিয়েছে। কিন্তু কোনো অর্থই দেশে প্রত্যাবাসন হয়নি।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পণ্য বিদেশে রপ্তানি না করেও শুধু কাগজ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি প্রণোদনার অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটছে। আহনাফ করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান ১১১টি চালান বিদেশে রপ্তানি করে, এই রপ্তানির বিপরীতে ৩১ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলে বাংলাদেশে আসে।

কিন্তু কাস্টমসের তদন্তে উঠে আসে, এই প্রতিষ্ঠান কখনো পণ্য রপ্তানি করতে অফডকে বা বন্দরে কনটেইনার পাঠায়নি, এমনকি কোনো কনটেইনার রপ্তানিও হয়নি। শুধু বিল অব এক্সপোর্ট, এলসি, ইনভয়েস ও প্যাকিং লিস্ট জালিয়াতির মাধ্যমে বানিয়ে প্রণোদনার ৬ কোটি ২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। একই কায়দায় জান্নাত করপোরেশন ১৭৫টি বিল অব এক্সপোর্টের বিপরীতে ৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা এবং ফাতিমা করপোরেশন ৬৮টি বিল অব এক্সপোর্টের বিপরীতে ৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা প্রণোদনা হাতিয়ে নিয়েছে।

শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্ড সুবিধাপ্রাপ্ত রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান কম ঘোষণায় বেশি পণ্য বিদেশে রপ্তানি করছে। অনেক সময় শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করে তা খোলা বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে, আর রপ্তানি করছে নিুমানের বা ভিন্ন পণ্য। এতে রাষ্ট্র রাজস্ব হারাচ্ছে এবং দেশীয় বস্ত্র শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যেমন সোয়ান নিট কম্পোজিট নামে একটি বন্ডের প্রতিষ্ঠান চলতি বছরের এপ্রিলে মহিলাদের ড্রেস রপ্তানির জন্য বিল অফ এক্সপোর্ট জমা দেয়। অথচ কায়িক পরীক্ষায় টি-শার্ট ও পোলো শার্ট ঘোষণার চেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।

রপ্তানি জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ পাচার ও নগদ প্রণোদনা আত্মসাৎ রোধে প্রতিবেদনে শুল্ক গোয়েন্দা ৬টি সুপারিশ করেছে। এগুলো হচ্ছে-রপ্তানি পণ্য চালান পরীক্ষা ও শুল্কায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ; ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করার মাধ্যমে পণ্যের মূল্য ও সঠিকতা যাচাইয়ের মাধ্যমে রপ্তানির অনুমতি দিতে কাস্টমস হাউজগুলোকে নির্দেশ দেওয়া।

এছাড়া রপ্তানি পণ্যের ব্যবহৃত উপকরণের মূল্য, মজুরি, কারখানার ব্যয় ও উৎপাদন খরচ বিবেচনায় ক্যাটাগরিভিত্তিক পণ্যের ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য নির্ধারণ করা যেতে পারে। পাশাপাশি রপ্তানি পারমিট ইস্যুর আগে বিবরণ ও পরিমাণের ভিত্তিতে পণ্যের প্রকৃত মূল্য প্রদর্শন করা হয়েছে কিনা তা ব্যাংক বা রপ্তানি পারমিট ইস্যুকারী কর্মকর্তার মাধ্যমে যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

42 ভিউ

Posted ৩:৩৫ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১২ আগস্ট ২০২৩

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com