শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ২৯ হাজার কোটি টাকা

মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২০
185 ভিউ
রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ২৯ হাজার কোটি টাকা

কক্সবাংলা ডটকম(১৩ জানুয়ারি) :: নতুন ভ্যাট আইন পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়া, বিভিন্ন পণ্যে রাজস্ব অব্যাহতিসহ নানা কারণে রাজস্ব আহরণে গতি ফেরাতে হিমশিম জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মূলত চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম মাস থেকে শুরু হওয়া রাজস্ব আহরণের নিম্নগতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না এনবিআর। প্রতি মাসেই লক্ষ্যমাত্রা ঘাটতির পরিমাণ বাড়ছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজস্ব ঘাটতি বাড়ার কারণে বাড়ছে সরকারের ব্যাংক ঋণ। আর সরকারের ব্যাংক ঋণ বাড়লে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ আরো কমে যাবে। কমে যাবে উৎপাদন, কমবে কর্মসংস্থানও। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পুরো অর্থনীতিতে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, রাজস্ব আহরণের তিনটি খাতের মধ্যে অন্যতম হলো ভ্যালু এডেড ট্যাক্স (ভ্যাট)। গত কয়েক বছর ধরে প্রায় প্রতি বছরই ভ্যাটকে প্রধান খাত হিসেবে বিবেচনা করে জাতীয় বাজেট প্রণয়ন করা হয়। রাজস্ব আহরণ বাড়াতে নতুন ভ্যাট আইনও করা হয়, যার বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস অর্থাৎ গত জুলাই থেকে। কিন্তু ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলেও আগের নিয়মেই চলছে ভ্যাট আদায়। আইন বাস্তবায়নের শুরুতেই ব্যবসায়ীদের মধ্যে ইলেক্ট্রনিক ফিজিক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) সরবরাহ করার কথা থাকলেও গত ছয় মাসেও তা সরবরাহ করতে পারেনি এনবিআর। যার প্রভাব পড়ছে ভ্যাট আদায়ে। এ ছাড়া ভ্যাট নিবন্ধন ছাড়া ব্যবসা করা যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিলেও এই নির্দেশনা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। এর প্রভাব পড়েছে সার্বিক রাজস্ব আদায়ে।

এনবিআরের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে অর্থাৎ জুলাই ১৯-নভেম্বর ১৯ পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮১ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৫ মাসে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। আর রাজস্ব আদায়ের গড় প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। রাজস্ব আদায়ে সবচেয়ে পিছিয়ে ভ্যাট খাত। আলোচ্য সময়ে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৩১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। শুধু ভ্যাট আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা।

আর কাস্টমসে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ২৫ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। ৫ মাসে কাস্টমসে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। ঘাটতি কম শুধু আয়কর খাতে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে আয়করে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ২৪ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। আয়করে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মিজ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আমদানি কমে যাওয়ায় কাস্টমসে রাজস্ব আদায় কমছে। এ ছাড়া রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাত ভ্যাট বাস্তবায়নের জটিলতা ও সঠিক সময়ে ইএফডি সরবরাহ না করতে পারায় ভ্যাট আদায়ে ঘাটতি বাড়ছে। শুধু ব্যক্তিকেন্দ্রিক আয়কর দিয়ে তো আর ঘাটতি মেটানো যাবে না। এসব কারণে সরকারের ব্যাংক ঋণ বাড়ছে। এতে দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ আরো নি¤œমুখী হবে। দেশীয় উৎপাদন কমবে, সেই সঙ্গে কমবে কর্মসংস্থান। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে।

কাস্টমসে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ঘাটতির বিষয়ে জানতে চাইলে সম্প্রতি এনবিআরের কাস্টমস পলিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য সৈয়দ মো. গোলাম কিবরিয়া  বলেন, কাস্টমস হাউসে রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ার মূল কারণ আমদানি আগের তুলনায় কমে গেছে। আর দেশের শিল্পায়নের জন্য আমদানি পর্যায়ে কিছু অব্যাহতি দেয়া ছিল। যেমন, মোটরসাইকেল-গাড়ি যারা দেশে তৈরি করবে তাদের কিছু সুবিধা আগেই দেয়া ছিল। এ খাত থেকে আগে ভালো রেভিনিউ আসত, এখন তা হচ্ছে না। সব মিলিয়ে বৈশি^ক অর্থনীতির নি¤œগতি রয়েছে, যার প্রভাব আমদানিতে পড়েছে। তবে আমরা কাস্টমস হাউসগুলোর মনিটরিং জোরদার করছি। কেউ যাতে আমদানির ক্ষেত্রে রাজস্ব ফাঁকি না দিতে পারে সে চেষ্টা আছে।

রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ঘাটতির বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় সরকারের ঋণ নির্ভরতা বাড়ছে। ইতোমধ্যে সরকার পুরো বছরের জন্য ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে যে পরিমাণে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল তা ছয় মাসে পূরণ করেছে। আর লক্ষ্যমাত্রা ঘাটতি বাড়লে সরকারকে খরচ কমাতে হবে। এ জন্য রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে, উন্নয়ন বাজেট কাটছাঁট করতে হবে। নতুবা বড় ধরনের আর্থিক চাপে পড়বে সরকার। এ ছাড়া ব্যাংক ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার যে পরিকল্পনা সরকার নিয়েছে তা বাস্তবায়ন হবে না। তখন হয়তো ব্যাংকগুলো সরকারকে ঋণ দেবে আর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে যাবে।

এদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য পর্যালোচনা করে জানা গেছে, জাতীয় বাজেটে চলতি অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের শুরু অর্থাৎ পহেলা জুলাই থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকার ঋণ নিয়েছে ৪৮ হাজার ২১২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের সাড়ে পাঁচ মাসে পুরো অর্থবছরের চেয়েও বেশি ঋণ নিয়েছে সরকার। যদিও ৯ ডিসেম্বর একদিনেই আবার ১ হাজার ৭৩ কোটি টাকার ব্যাংকঋণ শোধ করেছে সরকার। এতে ৯ ডিসেম্বর শেষে সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। এ সময় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে নেয়া হয়েছে ৩৭ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। আর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেয়া হয়েছে ৯ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ^ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন  বলেন, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকার বাজেটে যে পরিমাণ ঋণ ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল তা পূরণ হয়ে গেছে। ব্যাংক ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার যে পরিকল্পনা করা হয়েছে, নির্ধারিত মাত্রার বেশি ঋণ নিলে সরকারই সুদহার কমানোর বড় বাধা হয়ে দাড়াবে। ঋণের সুদহার সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকারের খরচ কমিয়ে আনতে হবে।

185 ভিউ

Posted ৩:২৩ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২০

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com